ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘দুর্ভাগ্য আমাদের দলে কোন বিরাট কোহলি নেই’

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

‘দুর্ভাগ্য আমাদের দলে কোন বিরাট কোহলি নেই’

স্পোর্টস রিপোর্টার হায়দরাবাদ থেকে ॥ দুই ইনিংসে বাংলাদেশ দলের একজন মাত্র শতক করেছেন। সেখানে ভারতের তিন ব্যাটসম্যান শতক করেছেন। আবার বিরাট কোহলি করেছেন দ্বিশতক। একটি ম্যাচে জিততে হলে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও শক্তিশালী হওয়া চাই। কিন্তু হায়দরাবাদ টেস্টে তো ভারতের বিপক্ষে খেলার মতো বাংলাদেশের দুটি বিভাগই দুর্বল ছিল। তাই তো ম্যাচটি ২০৮ রানে হারও হয়েছে। বিশেষ করে কোহলির দ্বিশতকই সব শেষ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম তাই তো আক্ষেপ করেই বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দলে কোন বিরাট কোহলি নেই।’ ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো একমাত্র টেস্টটি শেষ হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলেন মুশফিক। টেস্ট ক্রিকেটটা অনেক কঠিন খেলা, তা মনে করছেন মুশফিক। পাঁচদিন ধরে ধারাবাহিক খেলতে হয়। ওয়ানডে বা টি২০তে একদিন সবকিছু ঠিক করলেই যে কোন দলকে হারানো যায়। টেস্টে বিষয়টা ভিন্ন। প্রথম ইনিংসে ভাল খেললে পরের ইনিংসে প্রতিপক্ষ অন্য পরিকল্পনা নিয়ে আসে। সেটির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। আমাদের তাই অনেক উন্নতি করতে হবে। তার পরও আমি বলব, আগে যেটা হতো আমরা মাঝে মধ্যে একটি দুটি টেস্ট ভাল খেলতাম। এখন নিয়মিত ভাল খেলছি। আরও এগিয়ে যেতে হলে যেটি প্রযোজন ধারাবাহিকভাবে পাঁচদিন ভাল খেলা। নিউজিল্যান্ডে আমরা দুই টেস্টেই তিনদিন সমান তালে লড়েছি। এখানে সাড়ে তিনদিন। এটাই পাঁচদিন করতে হবে। আশা করি আরও কিছু টেস্ট খেললে আমরা এই জায়গায়টায় উন্নতি করতে পারব।’ দ্বিতীয় ইনিংসে ইতিবাচক থাকার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। মুশফিক তাই জানালেন, ‘সকালে দেখেছেন সাকিবের ডেলিভারিটা বা গতকাল (চতুর্থদিন) বিকেলে মুমিনুলেরটা। পরিকল্পনা ছিল ইতিবাচক থাকা। পঞ্চমদিনের উইকেট, যদিও ট্রিপিক্যাল ভারতীয় পঞ্চমদিনের উইকেট নয়, কিন্তু তার পরও রাফ ছিল উইকেট। সেটাও কঠিন। অশ্বিন যদি একই লাইনে বল করে যেতে থাকে, কাছে ঘিরে ছিল অনেক ফিল্ডার, তাহলে সে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। আমি চেয়েছি পায়ের ব্যবহার করতে এবং অশ্বিনের লাইন লেংথ একটু এলোমেলো করতে। শটটা খারাপ ছিল না। স্রেফ ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। কারণ কয়েক ওভার আগেই জদেজাকে রিভার্স সুইপ খেলেছি অফ স্টাম্পের বাইরে বলে, দারুণভাবে লেগেছিল ওটা। অশ্বিনেরটা ঠিকভাবে খেলতে পারিনি। ফিল্ডার ভেতরে ছিল। চার মারতে পারলে ফিল্ডার পিছিয়ে নিত ওরা। তখন সিঙ্গেল নেয়া সহজ হতো। এটিই ছিল ভাবনা। হতে পারত যে আরও তিন-চার ওভার থাকার পর অশ্বিনকে ওই শট খেলতে পারতাম। আমিও এই ভুল থেকে শিখব।’ বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অনেক সুযোগ পেয়েছে। কোহলি, ঋদ্বিমানের শতক যে হয়েছে, সেটি বাংলাদেশ ফিল্ডারদের ক্যাচ হাতছাড়া করাতেই। মুশফিক তাই মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমরা অনেক সুযোগ পেয়েছি। সুযোগগুলো হাতছাড়া করেছি। প্রথম ইনিংসে ওদের যদি সাড়ে ৫০০ রানেও আটকাতে পারতাম, তাহলে হয়ত তাহলে দ্বিতীয় ইনিংসে ওরা হয়ত আরেকটু সময় ব্যাট করত। আমাদের ছাড়ত শেষ দিনে। তখন দ্বিতীয় ইনিংসে চার সেশনের বদলে তিন সেশন ব্যাট করতে হতো আমাদের। তখন বিষয়টা অন্যরকম হতে পারত। প্রথম ইনিংসে তাই ১৫০-১৭০ রান বেশি দিয়ে ফেলেছি আমরা। ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে উইকেট দারুণ ছিল। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের কেউ বড় স্কোর করলে আমরা ওদের প্রথম ইনিংসের রানের কাছাকাছি যেতে পারতাম। অন্তত ৫৫০ করতে পারতাম।’ নিজের ব্যাটিং ও তামিমের ব্যাটিং নিয়ে বলতে গিয়ে মুশফিক জানান, ‘যে কন্ডিশনেই খেলেন না কেন, আপনাকে সেভাবে প্রস্তুত হতে হবে। টেস্টে বড় ইনিংস খেলতে হলে একজন ব্যাটসম্যানকে অবশ্যই তার অফস্ট্যাম্প কোথায় সেটা জানতে হবে। এবং আপনার ডিফেন্সটা অনেক শক্তিশালী থাকতে হবে। এই দুইটা জিনিস থাকলে বড় রান করা পসিবল। আমি যতদূর জানি এই দুইটা জিনিস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি এই দুইটা বিষয়ের উপর সব সময় মনোযোগ দিয়ে থাকি। আল্লাহর রহমতে সেটা করতে পেরেছি। একটু হলেও ভাল লেগেছে। একেক জনের খেলার ধরন একেক রকম থাকে। তার (তামিমের) হয়তো ভিন্ন কোন ওয়েতে সফল হয়েছে। তারা হয়তো সেভাবেই খেলতে চায়।’ দ্বিতীয় ইনিংসে পরিকল্পনা কি ছিল? তা জিজ্ঞেস করতেই মুশফিক বলেন, ‘ডিফেন্স করে কখনই কোন ম্যাচকে বাঁচানো কিংবা জেতা সম্ভব নয়। সাকিব তো আজকে (পঞ্চমদিন) একটা বলও মারতে যায়নি। তারপরও আউট হয়ে গেছে। আমি প্রথম ইনিংসে একটা বাজে বলও খেলেনি। তারপরও আউট হয়ে গেছি। এটা আসলে ব্যালেন্স হয়। এটা আসলে বলা যায় না কখনও কে কিভাবে আউট হবে। অনেকে বলতে পারে বলটা মারা উচিত হয়নি। না পারলেই যে সারাদিন খেলা সম্ভব সেটা বলা কঠিন। দিনশেষে একজন ব্যাটসম্যানকে রান করতে হবে। যখন একজন ব্যাটসম্যান রান করবে। তখন একজন বোলারও চাপে থাকবে। একজন বোলার যদি জানে এই ব্যাটসম্যান মারবেই না। তখন কিন্তু অনেক কঠিন হয়ে যায়। রাব্বি অনেক বল খেলেছে। সে স্বীকৃত একজন বোলার, ব্যাটসম্যান নয়। দুইদিকে থেকেই অনেক কিছু অপশন থাকে। আমাদের হয় তো রং টাইমে উইকেটগুলো পড়ে গেছে। আমাদের প্রথম দুই ঘণ্টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথমে সাকিব আউট হওয়ার পর আমি আউট হয়ে গেলাম। কিন্তু রিয়াদ ভাই আর সাব্বির ভাল খেলেছে লাঞ্চ পর্যন্ত। আমাদের পরিকল্পনা ছিল লাঞ্চ পর্যন্ত আমরা যতটা কম উইকেট হারিয়ে যেতে পারি। তারপর চা বিরতি পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া। শেষ সেশনে ভিন্ন পরিকল্পনা করতে হবে। সেক্ষেত্রে নতুন বলে ভিন্ন কিছু হতো। কিন্তু তার আগে আমরা আউট হয়ে গেছি। অবশ্যই তাদের বোলারদের ক্রেডিট দিতে হবে। তারা যেভাবে বোলিং করেছে, তারা জানে পঞ্চমদিনে কিভাবে বোলিং করতে হয়। এ জন্যই তারা নাম্বার ওয়ান দল। সেদিক থেকে বলব এটা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় একটা বিষয়। এমন কন্ডিশনে আমরা শেষ কবে খেলিছি। এটাও কিন্তু আমাদের জন্য অনেক কঠিন।’ বেসিক ক্রিকেট খেললেই ম্যাচটা বাঁচানো যেত? মুশফিক কোহলির উদাহরণ টানলেন, ‘বিরাট কোহলির মতো যদি বেসিক সবার হতো তাহলে ৫০ গড়ে রান থাকত। তাহলে আর এতজন ব্যাটসম্যান লাগত না। ৭ উইকেটও লাগত না। চার ব্যাটসম্যান নিয়েই ম্যাচ ড্র করা যেত। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দলে কোন বিরাট কোহলি নেই। এখানে সবাই বেসিক ক্রিকেটই খেলার চেষ্টা করেছে। রিয়াদ ভাই যেভাবে আউট হয়েছে, সেটাতে তার দোষ দেয়া যায় না। সাব্বির লাইন মিস করেছে। ভুল ধরার চেয়ে আমার মনে হয় এই কন্ডিশনে আমার আরও কতক্ষণ খেলার সুযোগ তৈরি করতে পারতাম, সেটা আমরা পারিনি। এই জায়গাতেই আমাদের একটু কাজ করা দরকার।’
×