ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি

ভেসে গেছে ৭ হাজার মণ লবণ

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ভেসে গেছে ৭ হাজার মণ লবণ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ চকরিয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের দায়িত্বহীন কাজের কারণে বেড়িবাঁধের সøুইচ গেট ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে স্থানীয় লম্বাখালী ঘোনাসহ বিশাল লবণ মাঠ। পানিতে ভেসে গেছে শতাধিক প্রান্তিক চাষীর উৎপাদিত সাত হাজার মণ লবণ। মৌসুমের মাঝপথে এসে উৎপাদিত লবণ ও চাষের ক্ষেত্র নষ্ট হওয়ায় বর্তমানে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাষীরা। চকরিয়া পশ্চিম বড়ভেওলা দরবেশকাটা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে চরম গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা। স্লুইচ গেটটি মেরামত এবং ভেসে যাওয়া লবণের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন লবণ চাষীরা। অভিযোগে স্থানীয় দরবেশকাটা এলাকার লবণ চাষী এখলাছ, কায়কোবাদ, মনছুর আলম, নাজেম উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন, আবদুল করিমসহ শতাধিক চাষী দাবি করেছেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজের সময় এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটতে গেলে স্লুইচ গেট ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর রাতের বেলায় বেড়িবাঁধের ওপারে নদীতে জোয়ার এলে পানির প্রবল চাপে স্লুইচ গেটের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে বড় আকারে ফাটলের সৃষ্টি হয়। এতে অনায়াশে পানি ঢুকে লবণ মাঠ তলিয়ে যায়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে কাজের প্রাক্কলন মতে কাজ না করে মনগড়া কাজ বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগে জানায় চাষীরা। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পশ্চিম বড়ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান ও মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নির্মাণ কাজের স্থলে উপস্থিত না থাকার কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন শুরু থেকে নির্মাণ কাজে নানা ধরনের অনিয়ম করছে। বিশেষ করে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার সময় স্লুইচ গেটটি ভেঙ্গে গেলেও স্থানীয় চাষী কিংবা এলাকার জনপ্রতিনিধি অথবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের না জানিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। এ অবস্থায় তাদের ভুলের মাসুল দিতে হচ্ছে এখন এলাকার প্রান্তিক লবণ চাষীদের। তিনি বলেন, বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর জন্য পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লবণ মাঠ লম্বাখালী ঘোনার পরিচালক ও ফোয়াব কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, পশ্চিমবড় ভেওলা দরবেশকাটা গ্রামের অদূরে ৩৫৩ একর আয়তনের লম্বাখালী ঘোনায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৩৬০ চাষী লবণ চাষ করছেন। এছাড়া পাশের বিপুল পরিমাণ জমিতে এলাকার আরও ৬ শতাধিক চাষী জমি বর্গা নিয়ে লবণ চাষে রয়েছে। মৌসুমের মাঝপথে এসে উৎপাদনের এ সময়ে বেড়িবাঁধের স্লুইচগেটটি ভেঙ্গে নদীর পানি ঢুকে পড়ার কারণে বেশির ভাগ লবণ মাঠ তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে চাষীদের হাজার হাজার মণ উৎপাদিত লবণ। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ লবণ ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে চাষীদের প্রায় ২০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতিসাধন হয়েছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, চকরিয়া উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়ি জোন ও লবণ চাষ নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নির্দেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড তিনটি প্যাকেজের আওতায় সেখানে ১১ কিলোমিটার আয়তনের বেড়িবাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ শেষ হলে সুফল পাবে এলাকার মৎস্য ও লবণ চাষীরা। তিনি বলেন, নির্মাণ কাজে হয়ত ভুলের কারণে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্লুইটগেট ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনাটিও তেমন দুর্ঘটনা। তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত স্লুইচ গেটটি মেরামত করে দেয়ার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হবে।
×