ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিম ক্লোনের মাধ্যমে হচ্ছে চাঁদাবাজি, টেন্ডারসহ নানান অপরাধ

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সিম ক্লোনের মাধ্যমে হচ্ছে চাঁদাবাজি, টেন্ডারসহ নানান অপরাধ

ফিরোজ মান্না ॥ রাষ্ট্রের উচ্চপদের কর্মকর্তা ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর ক্লোন করে নানা অপরাধের ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিষয়টি সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘ তদন্তের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদন পেয়ে এ বিষয়ে বিটিআরসিকে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি বিটিআরসি পেয়েছে বলে জানিয়েছে। তবে তারা কি ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি একটি অপরাধী চক্র সরকারের মন্ত্রী, এমপি, সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর ‘সিম ক্লোনের’ মাধ্যমে হুবহু একই নম্বর থেকে কল করে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, বদলি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ করছে। বেশকিছু দিন ধরে এ ধরনের প্রতারণা চলে আসছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর ক্লোন করে থানা থেকে আসামি ছাড়িয়ে নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনার পর পুলিশ বিষয়টি নিয়ে মাঠে নামে। সম্প্রতি প্রতারক চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। প্রতারক চক্র কিভাবে নম্বর ঠিক রেখে সিম ক্লোন করে সেটা খুঁজে দেখার জন্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ কাজ শুরু করে। এই সংস্থা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি চক্রের সন্ধান পায়। এ বিষয়ে সংস্থাটি একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। মন্ত্রণালয় পরে বিষয়টি বিটিআরসিকে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলে। বিটিআরসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু কি ধরনের ব্যবস্থা তারা নিচ্ছে তা জানায়নি। তবে বিটিআরসি এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোনে প্রতারণা বাড়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি সম্পর্কে সাবধান করে দিয়ে বলেছে, কিছু প্রতারক মোবাইল ব্যবহারকারী বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে বিভিন্ন পন্থায় সাধারণ জনগণকে বোকা বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষ সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবেদনে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতারণার কিছু ধরন উল্লেখ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু অসাধু ব্যক্তি বা চক্র বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের কলসেন্টারের উচ্চপদের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের ফোন করে বলা হয়, তার ব্যবহৃত নম্বরটি লটারিতে লাকি নম্বর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় তিনি ১০ লাখ টাকা এমনকি মোটরসাইকেল বা গাড়ি পুরস্কার বা পুরস্কারের বদলে সমপরিমাণ অর্থ বিজয়ী হিসেবে পাবেন। পরে এটাও বলা হয় যে, ওই পুরস্কার পেতে হলে ট্যাক্সসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য বিভিন্ন নম্বরে ফ্লেক্সিলোড বা বিকাশ করতে বলা হয়। এরপর প্রতারক চক্র বিভিন্ন ডায়াল কোড বা নম্বর উল্লেখ করে তাতে ডায়াল করতে বলে। ওই নম্বরে ডায়ালের মাধ্যমে গ্রাহকের ফোনটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গ্রাহকের কাছে গ্রতারকদের কোন তথ্য সংরক্ষিত থাকে না। এ ধরনের প্রতারণার জন্য অনেক নিরীহ মানুষ লাখ লাখ টাকাসহ বাড়িঘর, জমিজমা বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েছেন। রিচার্জের নামে প্রতারণার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতারক চক্রের মোবাইল নম্বর থেকে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ ফ্লেক্সিলোড হওয়ার পর এসএমএস পাঠিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওই নম্বর থেকে প্রতারক চক্র ফোন করে বলে ভুলবশত তার ফ্লেক্সিলোডের টাকা ভিকটিমের মোবাইলে চলে গেছে। ওই প্রতারক চক্র ফ্লেক্সিলোডের সমপরিমাণ টাকা বিকাশ বা ফ্লেক্সিলোডের মাধ্যমে ফেরত দেয়ার অনুরোধ করে। প্রতারক চক্রটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত মিসকলের মাধ্যমে প্রতারণা করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতারক চক্র কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে অপরিচিত নম্বর থেকে মিসকল দিয়ে ওই মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ফোন আশা করে। সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীরা ওই সব নম্বরে কল করলেই তার ফোনের ব্যালেন্স শূন্যতে চলে আসে। জিনের বাদশা সেজে প্রতারণার বিষয়টিও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। জিনের বাদশা পরিচয়ে গভীর রাতে বিভিন্ন নম্বরে ফোন করে বিভিন্ন সূরা বা ওয়াজ শুনিয়ে প্রতারণার কাজ শুরু করে। প্রতারক চক্র কাউকে কিছু না জানানোর শর্তে প্রথমে ব্যক্তি নিজেকে জিনের বাদশা হিসেবে পরিচয় দেয় এবং কথার একপর্যায়ে তুই অনেক ধন-সম্পদের মালিক হবি, তোর কপালে স্বর্ণের খ- বা টাকার কলস রয়েছে এমন সব আজগুবি কথা শোনায়। অনেকে লোভে পড়ে যত টাকা বিকাশ করতে বলে তা করে দেয়। পরে যখন কিছু পায় নাÑ তখন জিনের বাদশার ওই নম্বর ফোন করে। কিন্তু ওই ফোন আর কখনও খোলা পাওয়া যায় না। প্রতিবেদনে বলা হয়, মাসকিং সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন নামে সফটওয়্যার আছে।
×