ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গীতিকবি রফিকুজ্জামানের জন্মদিন উদযাপন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

গীতিকবি রফিকুজ্জামানের জন্মদিন উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সেই রেললাইনের ধারে মেঠো পথটার পাড়ে দাঁড়িয়ে/এক মধ্যবয়সী নারী এখনও রয়েছে হাত বাড়িয়ে/খোকা ফিরবে, ঘরে ফিরবে, কবে ফিরবে, নাকি ফিরবে না/দৃষ্টি থেকে তার বৃষ্টি গেছে কবে শুকিয়ে...। একাত্তরের রণাঙ্গনে যাওয়া সন্তানের জন্য প্রতীক্ষারত এক মায়ের আকুতি এভাবেই গানের সুরে মেলে ধরেছেন গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান। স্বদেশের ভাবনাতাড়িত এমন গানের পাশাপাশি লিখেছেন অসংখ্য রোমান্টিক ও যাপিত জীবনের কথা বলা গান। প্রখ্যাত এ গানের কবির ৭৫তম জন্মদিন দিন ছিল শনিবার। সেই জয়ন্তী উদ্্যাপিত হলো রবিবার। এদিন বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে গান ও কথায় সাজানো এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গানের দল নিবেদন আয়োজিত অনুষ্ঠানে বরেণ্য এ গীতিকবিকে জানানো হয় জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা, তুলে দেয়া হয় সম্মাননাপত্র এবং বিশিষ্টজনদের আলোচনায় উঠে আসে তাঁর বর্ণিল সঙ্গীতজীবনের কথা। অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল রফিকুজ্জামান রচিত ২১টি গানের পরিবেশনা। জন্মদিনের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সৃজনশীল গানের দল ‘নিবেদন’। ৭৫তম জয়ন্তীর অনুভূতি প্রকাশ করে মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, বয়স যত বাড়ে লেখার মাঝেও তত বেশি পরিবর্তন আসে। এক সময় গানের মধ্যে শুধু আনন্দের কথা বলতাম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আনন্দের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে বিরহ ও বেদনা। তবে সঙ্গীত রচনায় ছন্দ ও অন্তঃুমিল প্রয়োগের ক্ষেত্রে সব সময় শুদ্ধতার পথে হেঁটেছি। তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার আহ্বান, তারাও যেন গান লেখার ক্ষেত্রে শুদ্ধতাকে অনুসরণ করে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল রফিকুজ্জামানকে নিবেদিত আলোচনা পর্ব। এতে অংশ নেনÑ কবি আসাদ চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম, গণসঙ্গীতশিল্পী মাহমুদ সেলিম ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাপা। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়ের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুমা রায়। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে গীতিকবিকে জানানো হয় ফুলেল ভালবাসা। আশরাফুল আলম বলেন, বাংলা ভাষায় যারা গান লিখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গীতিকবি রফিকুজ্জামান। শুধু সুন্দর শব্দ বসিয়ে দিলেই নির্মিত হয় না গান, সেখানে প্রয়োজন হয় বোধ ও ভাবনার। আর সে ভাবনাকেই শব্দের মাধ্যমে গানে রূপান্তর করেন রফিকুজ্জামান। রফিকুজ্জামান রচিত একগুচ্ছ গানের সুরে শুরু হয় উপস্থিত শ্রোতাদের আলোড়িত করা সাংস্কৃতিক পর্ব। পাপিয়া গেয়ে শোনান ‘যে আমার হৃদয় করল চুরি’ ও ‘সবাই বলে সর্বনাশের মূল’। শামীমা পারভীনের কণ্ঠে গীত হয় ‘দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক’। স্বরলিপি করিম গেয়ে শোনান ‘জনম জনম ধরে প্রেম পিয়াসী’ ও ‘শুক পাখিরে পিঞ্জিরা তোর’। রফিকুল আলমের কণ্ঠে গীত হয় ‘আমার বাউল মনের একতারাটা’ ও ‘একটি দোয়েল বনে ডাকলে’। দিবাকর বিশ্বাসের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম’। সঞ্জয় কবিরাজ গেয়ে শোনান ‘পাহাড়ের কান্না দেখে’ ও ‘কিছু বলো নাগো’। ‘ভালবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’ পরিবেশন করেন সুমা রায়। এছাড়া গান শোনান আলম আরা মিনু, শরীফা নাজনীন, বিশ্বজিৎ রায়, অরূপ কুমার ঘোষ ও খায়রুল ইসলাম। তাদের গাওয়া কয়েকটি গানের শিরোনাম ছিলÑ ‘সেই রেললাইনের ধারে’, ‘এই রাত ডাকে ওই চাঁদ জাগে’, ‘রিটার্ন টিটিক হাতে নিয়ে’, ‘নদী চায় চলতে’ ও ‘যেখানে মাটির দাওয়ায় পিদিম জ্বেলে’। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কার পেলেন প্রশান্ত মৃধা ॥ ‘সবুজ ঘাসের প্রান্তর’ গ্রন্থের জন্য আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬ পেলেন প্রশান্ত মৃধা। ২০১৬ সালে গ্রন্থ কুটির থেকে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। রবিবার ছিল প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে এদিন বিকেলে বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পুরস্কার প্রদান ও স্মারক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরসি মজুমদার মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক পুরস্কারপ্রাপ্তের হাতে পদক ও অন্য উপহারসামগ্রী তুলে দেন। পুরস্কারস্বরূপ প্রশান্ত মৃধার হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। এর আগে কথাশিল্পী প্রশান্ত মৃধার শংসাবচন পাঠ করেন অধ্যাপক ড. খালিকুজ্জামান ইলিয়াস। অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন মার্জিয়া লিপি ও শিবু কুমার শীল। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস পঞ্চম স্মারক বক্তব্য রাখেন ২০১৫ সালের আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাশিল্পী ওয়াসি আহমেদ। তার প্রবন্ধে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক আহমেদ জাভেদ রনি। কাঁথাশিল্পের অগ্রদূত সুরাইয়া রহমানকে নিবেদিত প্রামাণ্যচিত্র ॥ গ্রামবাংলার অন্যতম কারুশিল্প নক্সীকাঁথার পুনরুজ্জীবনের এক অগ্রদূত শিল্পী সুরাইয়া রহমান। তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘থ্রেডস’। ৩০ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন কানাডিয়ান নির্মাতা ক্যাথি স্টেভুলাক। রবিবার জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে প্রামাণ্যচিত্রটির প্রিমিয়ার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনÑ থ্রেডস চলচ্চিত্রের পরিচালক ক্যাথি স্টেভুলাক, ছবির প্রযোজক লেনার্ড হিল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নিয়াজ জামান। বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একান্ত ইচ্ছায় বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশনে কারুশিল্পীদের জন্য কারুশিল্পী পল্লী স্থাপিত হয়। কিন্তু আঞ্চলিক কিছু সমস্যার কারণে সেখানে কারুশিল্পীরা ঢুকতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরা এ সমস্যা সমাধানের চষ্টা চালাচ্ছি এবং এ বছরের শেষের দিকে কারুশিল্পী পল্লী চালু করা যাবে বলে আশা করা যায়।
×