স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুত কেন্দ্রের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, হ্যাকাররা সাইবার হামলা চালিয়ে পাওয়ার গ্রিড অচল করে দিতে পারে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে কেন্দ্রের উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রবেশ করে ইচ্ছাকৃত বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে এমন কাজও করা সম্ভব। এমন পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় এ জন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইউক্রেনে গত বছর সাইবার আক্রমণ চালায় হ্যাকাররা। এতে সেখানের বিদ্যুত বিতরণে বিপর্যয় নেমে আসে। আর ২০১২ তে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় নয়টি রাজ্য ভয়াবহ বিদ্যুত বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে অনেকে সাইবার আক্রমণকে দায়ী করেছিলেন। বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এক দফা ব্লাক আউটের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে সাইবার আক্রমণকে দায়ী করা হয়নি। যদিও কেন ব্লাক আউটের ঘটনা ঘটেছিল তা সুনির্দিষ্ট করে বের করতে পারেনি বিদ্যুত বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটি।
বলা হচ্ছে, দেশের বিদ্যুতের উৎপাদন এবং বিতরণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন গ্রিড এবং উৎপাদন পর্যায় সবখানেই নিয়ন্ত্রণ করা হয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এসব সফটওয়্যারে সাইবার আক্রমণ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। আগেভাগেই সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রবিবার এ সংক্রান্ত এক কর্মশালায় মার্কিন সংস্থা এমআইটি কানেকশন সায়েন্স সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখার কৌশল তুলে ধরে। এতে বলা হয়, প্রযুক্তির যথাযথ সংরক্ষণ প্রয়োজন। এর সঙ্গে প্রয়োজন দক্ষ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
পাওয়ার গ্রিডে সাইবার হামলা ‘তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব’ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গ্রিড বা বৈদ্যুতিক স্থাপনায় হামলার বিষয়ে সবচেয়ে উদ্বেগে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষজ্ঞরা দেশটিকে সতর্ক করেছেন এই বলে, হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের পুরো পাওয়ার গ্রিড বিকল করে দিতে পারে। ওই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার মহাপরিচালকের বরাত দিয়ে বলা হয়, সাইবার হামলার মাধ্যমে হ্যাকাররা গ্রিডের কম্পিউটার ব্যবস্থা বা পাওয়ার সিস্টেম অচল করে দিতে পারে। এখন হ্যাকারদের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের পাওয়ার গ্রিড বিকল করে দেয়া।
বিদ্যুত ভবনে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, জ্বালানি বিদ্যুত এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বিদ্যুত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, পিডিবি চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইনসহ বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তা এবং সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার অস্ত্রের ব্যবহার এখন আর সীমিত পরিসরে নেই। ইন্টারনেটের এ যুগে হ্যাকিং টুল ও স্পর্শকাতর অনেক তথ্যই দুষ্কৃতকারীদের হাতে চলে যাচ্ছে। যে কোন সময় উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আক্রমণ চালাতে পারে তারা। সাইবার আক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এর পরিধি। সাইবার অপরাধীরা বেছে নিচ্ছে মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো।
জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক জনকণ্ঠকে জানান, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে এখন আমাদের ভাবতে হচ্ছে। আমাদের বিদ্যুত উৎপাদন এবং বিতরণের পরিমাণ এখন বাড়ছে। কেউ যাতে সাইবার আক্রমণ না করতে পারে এ জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কি কি বিষয় সংযুক্ত করা যায়, কোথায় কোথায় আক্রমণ হতে পারে তা চিহ্নিত করা এবং আক্রমণ হলে কিভাবে তা মোকাবেলা করা যাবে তাই আলোচনা হয়েছে।
সেমিনারে বলা হয়, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখাত হবে। যখনই নতুন প্রযুক্তি আসবে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। যেসব সফটয়্যার বাইরের দেশ থেকে আসবে সেগুলো ব্যবহারে আরও সতর্ক হতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে একটি পেনড্রাইভের মাধ্যমেও সিস্টেম থেকে তথ্য চুরি হতে পারে বা নতুন কোন কিছু প্রবেশ করতে পারে। এ জন্য সতর্ক থাকার কোন বিকল্প নেই।
সেমিনারে যোগ দেয়া একজন কর্মকর্তা জানান, আশার কথা হচ্ছে, আমাদের সংস্থা প্রধানরা জানিয়েছেন এই মুহূর্তে আমাদের সকল সিস্টেমই নিরাপত্তা বলয় এর মধ্যে রয়েছে। আমাদের তদারকি ব্যবস্থাও ভাল। যদিও ভবিষ্যতের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন তারা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: