ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই মামলায় ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায়

সাত বছরে ১৭ জঙ্গী হামলার হোতা মুফতি হান্নান

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সাত বছরে ১৭ জঙ্গী হামলার হোতা  মুফতি হান্নান

শংকর কুমার দে ॥ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গীগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি) সারাদেশে ৭ বছরে অন্তত ১৭টি জঙ্গী হামলা চালায় যাতে নিহত হয়েছেন ১০১ জন ও আহত হয়েছেন ৬০৯ জন। এসব হামলার মূল পরিকল্পনায় ও নেতৃত্বে ছিলেন হুজি প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান। এর মধ্যে একটি হামলা ও দুটি হামলা চেষ্টার ঘটনার মূল টার্গেট ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলার মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের আপীল বিভাগে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- রায় বহাল রাখার পর কাশিমপুর কারাগারে বন্দী এই হুজি নেতাকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে। হুজির নেতৃত্বে ১৭ জঙ্গী হামলার মধ্যে ১৩ জঙ্গী হামলায় সরাসরি আসামি হুজি প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানের বিচার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে রমনা বটমূলের নববর্ষবরণ অনুষ্ঠানের বোমা হামলা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলায় তার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে এই জঙ্গী নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের পক্ষে কোন রিভিউ পিটিশন না করে তাহলে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর যদি তার পক্ষে রিভিউ পিটিশন করা হয় তার শুনানি পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানা গেছে। একুশে গ্রেনেড হামলার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে লন্ডনে নির্বাসিত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুর রহমানসহ অন্যদের নাম প্রকাশ করেছেন এই হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানই। এই মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গীর আপীল শুনানির পর তা খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। গত ৭ ডিসেম্বর মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপীল খারিজ হয়ে যাওয়ায় তার ফাঁসির রায় কার্যকর করার ঘটনাটি এখন আইনী প্রক্রিয়ায় সময়ের জন্য শুধু অপেক্ষা মাত্র। এই জঙ্গী নেতার সঙ্গের যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত অপর দুই আসামি আপীল না করায় তাদের আগের রায়ই বহাল রয়েছে। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি আপীল বিভাগের ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। এখন আসামিরা রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন। সেটিও খারিজ হলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন আসামিরা। তবে রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে রায় কার্যকরে আর কোন বাধা থাকবে না। এসব বোমা ও গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পেছনে ও জঙ্গী হামলাগুলোর মূল পরিকল্পনাকারী ও নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি বলে মনে করা হয় মুফতি হান্নানকে। এছাড়া ২০০১ সালে রমনায় বাংলা নববর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলায় হান্নানসহ হুজির আট জঙ্গীর মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত। এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদ-াদেশ অনুমোদন) হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় আছে। হুজি প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানের বিরুদ্ধে থাকা আরও ১৩টি মামলার বিচার চলছে। দুটির অধিকতর তদন্ত চলছে। মুফতি হান্নান ২০০৬ সালের ১৯ নবেম্বর এবং ২০০৭ সালের ১ নবেম্বর দুই দফায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে এসব হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বিস্তারিত বিবরণ দেন। ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর রাজধানীর বাড্ডার বাসা থেকে গ্রেফতার হন মুফতি হান্নান। এরপর বিভিন্ন মামলায় টানা ১শ’ ২০ দিন রিমান্ডে ছিলেন তিনি। তখনই গোয়েন্দাদের কাছে দেয়া জবানবন্দীতে মুফতি হান্নান শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করাসহ বিভিন্ন হামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেন। কিন্তু তা তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার প্রকাশ করেনি। বরং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করে। গোয়েন্দাদের কাছে দেয়া হান্নানের ওই জবানবন্দী প্রথম ২০০৭ সালের ২১ আগস্ট সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ বিভিন্ন মামলা নতুন করে তদন্তের উদ্যোগ নেয়।
×