ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৩৭তম জাতীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

সরকারের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার আনসার বাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সরকারের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার আনসার বাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। বিশেষ করে শিল্প কারখানা, সমুদ্রবন্দর ও বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় অর্ধলক্ষাধিক আনসার সদস্যের সর্বদা সতর্ক উপস্থিতি দেশের অর্থনীতির চাকাকে নিরাপদ ও গতিশীল রেখেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিটি ক্ষেত্রে এ বাহিনীর সদস্যরা সবসময়ই কর্মদক্ষতা ও সফলতার পরিচয় দিয়ে আসছে। বিশেষ করে জাতীয় সঙ্কটকালে এবং জরুরী মুহূর্তে তাদের কর্মতৎপরতা এ বাহিনীকে সরকারের এক নির্ভরযোগ্য অংশে পরিণত করেছে। বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন ছাড়াও অপারেশন রেলরক্ষা, মহাসড়কে নাশকতা রোধ এবং মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ রুখতে এ বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৭তম জাতীয় সমাবেশ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে সফিপুর আনসার একাডেমিতে আসেন। পরে তিনি আনসার একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছান। প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান খান তাকে স্বাগত জানান। এ সময় গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল ও তিন বাহিনীর প্রধানগণসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী খোলা জীপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনসার সদস্যদের কুচকাওয়াজ ও সালাম গ্রহণ করেন এবং ভাষণ দেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী মাটি ও মানুষের বাহিনী। জরুরী প্রয়োজনে সরকারের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে এ বাহিনী বার বার রেখেছে তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। সর্ববৃহৎ ও সুশৃঙ্খল এ বাহিনী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের প্রয়োজনে সর্বদা রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে এ বাহিনীর স্বতঃস্ফূর্ত ও ব্যাপক অংশগ্রহণ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। তাদের কাছে রক্ষিত ৪০ হাজার থ্রি নট থ্রি রাইফেলই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল শক্তি। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এ দিনে আমি স্মরণ করছি এ বাহিনীর ১২ বীর আনসার সদস্যকে যারা ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে শপথ গ্রহণকালে আনুষ্ঠানিক ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন কি করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয়। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। আমরা নিম্ন মধ্যবিত্তের দেশে উন্নীত হয়েছি। পাঁচ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি এখন ৭ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ ডলার। বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনসার ভিডিপি সদস্যদের বলেন, জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আপনারা সততা, শৃঙ্খলা, আন্তরিকতা ও সাহসের সঙ্গে কাজ করবেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলব ইশাআল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা ফার্স্ট ট্রাক গ্রহণ করেছি। গভীর সমুদ্রবন্দর, পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প, মেট্রোরেল, আন্তঃদেশীয় রেল প্রকল্প এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম ট্যানেল নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতি আর শক্তিশালী হবে। তিনি আনসার ভিডিপি সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ১৯৯৮ সালে আমাদের সরকারই আপনাদের সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা প্রদান করে। আপনাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার ধারাবাহিকতায় ব্যাটালিয়ন আনসারদের চাকরি ৯ থেকে ৬ বছরের পূর্ণতা সাপেক্ষে স্থায়ীকরণের বিষয়টি সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আপনাদের সুযোগ সুবিধা ও কল্যাণ প্রতিবছরই বিভিন্নভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। গত বছর ১৫টি মডেল আনসার ব্যাটালিয়ন সদর দফতর নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে ৫টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবছর আপনাদের দৃষ্টান্তমূলক কর্তব্যপরায়ণতা ও সাহসিকতার স্বীকৃতি স্বরূপ যে পদক প্রদান করা হচ্ছে তা আমাদের সরকারই প্রবর্তণ করেছে। অতি সম্প্রতি এ বাহিনীতে বিশেষ ইউনিট গঠন করা হয়েছে, যা হলি আর্টিজান মর্মান্তিক ঘটনা পরবর্তীকালে কূটনৈতিক জোনের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রটেকশনের জন্য দুটি আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আনসার ভিডিপির উন্নয়নে আমাদের সরকারের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কর্মমুখী ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুব সম্পদকে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা এ বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ বাহিনীর সদস্যগণ বর্তমান যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানসম্মত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আমি এটা জেনে অত্যন্ত আনন্দিত যে, সাম্প্রতিক সময়ে এ বাহিনীর কর্মকর্তাগণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসহ দেশে বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন। আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে এ বাহিনী সারাদেশে এক বিশাল পরিবর্তন সূচনা করেছে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক। ব্যাংকটি সদস্যদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নসহ নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি অস্থায়ী ব্যাটালিয়ন আনসার, অঙ্গীভূত আনসার, হিল আনসার এবং ভিডিপি দলনেতা-দলনেত্রীদের ভাতাদি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে ভিডিপি দলনেতা-দলনেত্রীদের পদসংখ্যা ৮ হাজার ৫শ’ জন থেকে ১৫ হাজার ২শ’ ৪৮ জনে উন্নীত করা হয়েছে। শহর এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে ওয়ার্ড দলনেতা ও দলনেত্রীর পদ বাড়ানো হয়েছে। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসিকতা ও সেবামূলক কাজে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বীরত্বপূর্ণ ও সেবামূলকসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আনসার ও ভিডিপি’র ১১১ সদস্যকে বাংলাদেশ আনসার পদক, প্রেসিডেন্ট আনসার পদক, বাংলাদেশ গ্রাম প্রতিরক্ষা দল পদক প্রদান করেন। বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৭তম জাতীয় সমাবেশের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সমাবেশ চলাকালে প্যারেড গ্রাউন্ডের দক্ষিণ পশ্চিম পার্শ্বে আনসার ও ভিডিপি’র সদস্য-সদস্যাদের মনোজ্ঞ ডিসপ্লে প্রদর্শন করেন। পরে তিনি দরবারে যোগ দেন। সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনসার একাডেমির লেকের পাশে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন ও কুটির শিল্প পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান খান, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তাগণসহ বিভিন্ন বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
×