ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অশ্বিনের ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অশ্বিনের ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার হায়দরাবাদ থেকে ॥ বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম বলেছিলেন, ‘নাম্বার ওয়ান টেস্ট দল হওয়া বড় কথা নয়। এখানে বিরাট কোহলি বলেন আর (রবিচন্দ্রন) অশ্বিন বলেন, তারা অনেক বড় এবং অনেক উঁচুমাপের ক্রিকেটার। তারা দুইজন ভাল করাতেই যে দল জিতে গেছে সেটা নয়।’ কোহলির সঙ্গে অশ্বিনকেও যেন পাত্তা দেননি মুশফিক। কিন্তু সেই অশ্বিনই কাল হয়ে দাঁড়াল। বাংলাদেশের ইনিংসের মাজাতো অশ্বিনই ভেঙ্গে দিলেন। শুধু কি ভেঙ্গে দিলেন, নিজেও গড়লেন ইতিহাস। হায়দরাবাদ টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সেরা দুটি উইকেট তুলে নেন। সাকিব ও মুশফিককে আউট করে দেন। যেই মুশফিককে আউট করে বাংলাদেশকে অলআউট করে দেন অশ্বিন, সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ২৫০ উইকেট নেয়ার ইতিহাস গড়েন এ ভারতীয় স্পিনার। মাত্র ৪৫ ম্যাচে ২৫০ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছান অশ্বিন। বাংলাদেশের বিপক্ষে হায়দরাবাদ টেস্টে খেলতে নামার আগে ৪৪ টেস্টে ২৪৮ উইকেট ছিল অশ্বিনের। বাকি ছিল ২ উইকেট নেয়া। সেই ২ উইকেট তিন টেস্টে নিতে পারলেও হত। কিন্তু অশ্বিনের তো আর তর সইছিল না। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসেই রেকর্ডটি করে ফেললেন। তাও আবার যখন বাংলাদেশ ভাল খেলছে তখন সাকিবকে আউট করে দেন। আর যখন উইকেটে আরেকটু টিকে থাকা দরকার, এমন মুহূর্তে মুশফিককে আউট করে বাংলাদেশকে অলআউটই করে দেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়ান পেসার ডেনিস লিলি সবচেয়ে কম ম্যাচে ২৫০ উইকেট নিয়ে শীর্ষ স্থানটি ধরে রেখেছিলেন। ২৫০ উইকেট নিতে তাকে খেলতে হয়েছিল ৪৮ ম্যাচ। ১৯৮১ সালে ২৫০ উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর ডেনিস লিলিকে হারিয়ে শীর্ষ স্থানটি দখলে নিলেন অশ্বিন। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ভারতীয় এ স্পিনার শনিবার সাকিবকে, রবিবার মুশফিককে আউট করে দেন। ভারতের স্পিন আক্রমণে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে সফল বোলার অশ্বিন। টিম ইন্ডিয়ার জার্সি গায়ে টেস্টে ২৫০-এর পাশাপাশি ওয়ানডেতে ১০৫ ম্যাচে ১৪৫টি উইকেট রয়েছে তার দখলে। ২০১১ সালের নবেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট অভিষেক হয় অশ্বিনের। প্রথম টেস্টেই ৯ উইকেট তুলে নিয়ে নিজের আগমন জানান দেন। ৯ টেস্টেই ৫০ উইকেট তুলে নেন তিনি। অষ্টম দ্রুত ৫০ উইকেট নেয়া বোলার হন। ১৮ টেস্টে ১০০ উইকেট শিকার করেন অশ্বিন। দ্রুত ১০০ উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে ষষ্ঠ বোলার হন অশ্বিন। প্রতি ৯ টেস্টে ৫০ উইকেট করে নেন। বিশ্ব ক্রিকেট কাঁপিয়ে দেয় এ ডানহাতি স্পিনার। ২৯ টেস্টে নেন ১৫০ উইকেট। চতুর্থ দ্রুত বোলার হিসেবে অশ্বিন ১৫০ উইকেট পান। ধীরে ধীরে যেন প্রতি ৫০ উইকেট শিকারে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে থাকেন। দ্রুত উইকেট শিকারির তালিকায় নিজের নাম যোগ করতে থাকেন। যখন ২০০ উইকেট শিকার করেন, তখন দ্বিতীয় বোলার হিসেবে দ্রুত ২০০ উইকেট নেন। এজন্য তিনি ৩৭ টেস্ট খেলেন। মুশফিককে আউট করে দিয়ে যখন ২৫০ উইকেট শিকার করেন। তখন তার নামের পাশে ইতিহাস গড়াগড়ি খায়। ইতিহাসের পাতায় ঢুকে যান অশ্বিন। সবচেয়ে দ্রুত ২৫০ উইকেট শিকারি বোলার হয়ে ওঠেন তিনি। এজন্য খেলেন ৪৫ টেস্ট। অশ্বিন এখন টেস্টের এক নম্বর বোলার। বিশ্বের সেরা টেস্ট অলরাউন্ডারও। তিনি যে কোন মুহূর্তে প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। বল হাতে হঠাৎ করেই স্পিন বিষ ছড়িয়ে দেন। যে বিষে লাল হয় প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট শিকার করে ফেলেন। যেমনটি বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটিতেও করেছেন। ভারতের মাটিতে খেলা মানে যেন অশ্বিনের জয়জয়কার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সর্বশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও দুর্দান্ত বোলিং করে দেখিয়েছেন। চতুর্থ টেস্টে তো দুই ইনিংসেই ৬ উইকেট করে তুলে নিয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচটিতে খেলানর জন্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০ দলে রাখা হয়নি অশ্বিনকে। অশ্বিনও নিশ্চয়ই বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলতে মুখিয়ে আছেন? বাংলাদেশের বিপক্ষে এরআগে একটি মাত্র টেস্ট খেলারই সুযোগ পেয়েছিলেন, ২০১৫ সালে। বল হাতে এক ইনিংসে বল করার সুযোগ পেয়েই ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। এই ৫ উইকেটের মধ্যে বাংলাদেশের সেরা তিন ব্যাটসম্যান মুশফিক, তামিম, সাকিবের উইকেটও ছিল। এবারও তাই হলো। প্রথম ইনিংসে সাকিব ও মুশফিককে আউট করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতেই তামিমকে সাজঘরে ফেরান অশ্বিন। পরে মুমিনুলকেও আউট করেন। নিজ মাটিতে অশ্বিন রীতিমত দুর্ধর্ষ। ২৭ টেস্টেই ১৮১ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টটিতে এখন পর্যন্ত আরও ৪ উইকেট তুলে নিলেন। বাংলাদেশ-ভারত টেস্টটি হচ্ছে হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামে তো অশ্বিন আকাশচুম্বী বোলিং করেছিলেন। দুই ম্যাচ খেলেই ১৮ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। দুই ম্যাচের চার ইনিংসের মধ্যে তিন ইনিংসেই ৫ উইকেট বা তারবেশি শিকার করেছিলেন অশ্বিন। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে হায়দরাবাদে আরও ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারে মোট ২৫২ উইকেট শিকার করেন। যখন ২৫০ উইকেট শিকার হয়ে যায়, তখনই দ্রুত ২৫০ উইকেট শিকার করার ইতিহাস গড়েন অশ্বিন।
×