ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ শেষ দিনটা রাঙাতে পারবে কি টাইগাররা?

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আজ শেষ দিনটা রাঙাতে পারবে কি টাইগাররা?

মিথুন আশরাফ, হায়দরাবাদ থেকে ॥ ভারতের মাটিতে যে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ, এতেই ক্রিকেটাররা রোমাঞ্চিত। আবার ম্যাচটিতে এমনভাবে খেলেছে বাংলাদেশ, পাঁচদিনে গড়িয়ে গেছে হায়দরাবাদ টেস্ট। মুশফিকের সেঞ্চুরিতে ভারতকে পাল্টা জবাব দিয়ে প্রাপ্তির খাতা মজবুতই করেছে বাংলাদেশ। এখন জিততে যে আজকের দিনে ৩৫৬ রান লাগবে, হাতে আছে ৭ উইকেট; জয় তুলে নিয়ে সেই প্রাপ্তি ও রোমাঞ্চে ওড়ার সময়। দিনটি রঙিন করে তোলার সময়। উইকেট আঁকড়ে থেকে ড্র ফলও বের করা সম্ভব। তাতে ‘ঐতিহাসিক’ ম্যাচে ইতিহাসের সান্নিধ্যও পাবে বাংলাদেশ। তা হবে? নাকি রোমাঞ্চ, বড় কোন প্রাপ্তির আশা ছাপিয়ে হতাশায় নিমজিত হয়ে আরেকটি ভরাডুবিই হবে নিয়তি? ভারতের ৬৮৭ রানের জবাবে দুর্দান্ত জবাবই দিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও প্রথম ইনিংস শেষে ২৯৯ রানে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ, ফলোঅনেও পড়েছে; আবার ৩৮৮ রানের বেশি করতেও পারেনি। এরপরও দল যে বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে মুশফিকের (১২৭) বীরোচিত ইনিংসে ভর করে চার শ’ রানের কাছাকাছি গেছে, এটিই অনেক বড় প্রাপ্তির খাতায় লেখা হয়েছে। বাংলাদেশ তাতেই প্রশংসা কুড়াচ্ছে। আর ১০০ রান করতে পারলে ফলোঅনও এড়াতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু চতুর্থ দিনের শুরুতেই আগেরদিন ৫১ রানে অপরাজিত থাকা মেহেদী হাসান মিরাজের (৫১) সাজঘরে ফেরা এবং তার পর তাইজুল ও তাসকিনের উইকেট আঁকড়ে থাকার চেষ্টা বৃথা যাওয়ায় ফলোঅন এড়ানো সম্ভব হয়নি। তবে মুশফিক ঠিকই নিজেকে মেলে ধরেছেন। ২৬২ বলে ১৬ চার ও ২ ছক্কায় ১২৭ রান করে রবীচন্দ্রন অশ্বিনের ‘ক্যারম বলে’ আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। মুশফিক আউট হতেই বাংলাদেশের ইনিংসেরও শেষ হয়। অলআউট হয় বাংলাদেশ। তখনই ভারত অনেক এগিয়ে থাকে। প্রথম সেশন শেষ হওয়ার একটু আগে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। বাংলাদেশ ফলোঅন পড়ায় মনে করা হয়েছিল বাংলাদেশকেই আবার ব্যাটিংয়ে পাঠাবে ভারত। কিন্তু তা হয়নি। ভারতই আবার ব্যাটিংয়ে নামে। ভারত বোলাররা সবাই মিলে ১ বল কম, ১২৮ ওভার বল করেন। কোহলি মনে হয় ভেবেছেন বোলারদের একটু বিশ্রাম দেয়া উচিত। তাই আবার বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে নামায়নি। তাতে ভারত বোলারদের বিশ্রাম হলো, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসন্ন সিরিজের আগে ভারত ব্যাটসম্যানদেরও ব্যাটিং প্র্যাকটিস হলো। পাশাপাশি দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দিলেই হলো। কোহলি টার্গেট মতোই এগিয়েছেন। ভারত ব্যাটসম্যান ব্যাট হাতে যেই নেমেছেন, ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করেছেন। শুধু চার-ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছেন। সবাই বুঝে গিয়েছিল, ৪৫০ রানের বেশি হলেই ইনিংস ঘোষণা করে দেবে ভারত। এরপর বাংলাদেশকে দিনের শেষমুহূর্তে ব্যাটিংয়ে পাঠাবে। যদি দুই-তিনটা উইকেট তুলে নিতে পারে, তাহলে পঞ্চমদিনের সকালের সেশনটি ভালভাবে কাজে লাগাবে। তাই হলো। যখন দ্বিতীয় সেশন শেষ হােল, ভারতের স্কোরবোর্ডে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান যোগ হলো; তখনই ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামল। কোহলির পরিকল্পনামতই সব হলো। ১১ রানেই ‘রিভিউ’ নিয়ে তামিমকে সাজঘরে ফিরিয়ে দিলেন অশ্বিন। এরপর সৌম্য সরকার ও মুমিনুল হক দুর্দান্ত খেলতে থাকলেও ঘূর্ণি উইকেটে কতক্ষণ আর টিকে থাকবেন। এরসঙ্গে যেভাবে বাউন্সগুলো দিতে থাকেন উমেশ যাদব, তাতে অনেক কষ্ট করেই ব্যাটিং করতে হচ্ছে। সৌম্য তাই এত ভাল খেলতে থাকলেও শেষপর্যন্ত দলের ৭১ রানের সময় ৪২ রান করেই যাদবের বলে আউট হয়ে যান। ৪ রান যোগ হতেই মুমিনুলও (২৭) অশ্বিনের ঘূর্ণিতে ধোঁকা খেয়ে সিøপে ক্যাচ তুলে দেন। বাংলাদেশ বিপদে পড়ে যায়। এই বিপদ থেকে এখন দলকে বাঁচাবে কে? তিন উইকেট পড়ার পর উইকেট পড়ার ধকল সামলে নেন মাহমুদুল্লাহ ও সাকিব। দুইজন মিলে নিজেদের সামলে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। ২৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিও গড়েছেন। মাহমুদুল্লাহ ৯ রানে ও সাকিব ২১ রানে ব্যাট করছেন। আজ এই দুইজন দলকে বাঁচাতে ব্যাট হাতে নামবেন। বাঁচানো কী সম্ভব? ভারতের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ওভার খেলতে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৪৩.১ ওভার খেলেছে। এরপরও গতবছর দিল্লীতে টেস্টটিতে বড় ব্যবধানেই হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪৮১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে অশ্বিন ও জাদেজার স্পিন ছোবলে ১৪৩ রানেই অলআউট হয়ে গেছে। ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করছে বাংলাদেশও। ৩৫ ওভার খেলেছে। আজ পুরো ৯০ ওভার খেলতে হবে। যদি তা সম্ভব হয়, তাহলে ম্যাচে ড্র ফল বের করা সম্ভব। এমনকি সারাদিন খেললে বড় দুটি জুটি হলে জেতাও সম্ভব! যদিও ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ায় সেই পথ কঠিনই মনে হচ্ছে। পঞ্চমদিনে বোলারদের দাপটই থাকে উইকেটে। সেই দাপট ভারত দেখাবেই। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যদি উইকেট আঁকড়ে থাকার মানসিকতা নিয়ে খেলতে পারে, তাহলে সারাদিন ব্যাটিং করা সম্ভব। হায়দরাবাদ টেস্টেই তৃতীয়দিন পুরোটা খেলেছে বাংলাদেশ। ৫ উইকেট হারিয়ে ২৮১ রানও করেছে। তার মানে চেষ্টা করলে সম্ভব। তবে চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশ কখনই এত রান করতে পারেনি। ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে ৪১৩ রান করেছিল, সেটিই এখন পর্যন্ত ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, খুবই কঠিন অবস্থা দাঁড় হয়েছে। তাছাড়া নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ইদানীং বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা অনেক খারাপ খেলছে। ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্টে যে বাংলাদেশ ৪০০ রান করেছিল, সেটিই এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে এক ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান হয়েই আছে। হায়দরাবাদ টেস্টে যে প্রথম ইনিংসে ৩৮৮ রান করেছে বাংলাদেশ, সেটি ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর হয়েছে। ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ৩০১ রানের বেশি কখনই করতে পারেনি বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশকে টেস্ট জিততে হলে তো ইতিহাস গড়তে হবে। ২০০৩ সালে যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪১৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে জিতেছিল, সেটিই ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি টার্গেট নিয়ে জয়ের রেকর্ড হয়ে আছে। বাংলাদেশকে জিততে হলে তো ইতিহাস গড়তে হবে। পারবে বাংলাদেশ তা করে দেখাতে? মাহমুদুল্লাহ, সাকিব, মুশফিক, সাব্বির, মিরাজ, তাইজুল, তাসকিন, রাব্বির উপরই এখন সব ভরসা। বিশেষ করে বাকি থাকা ৭ উইকেটের মধ্যে মাহমুদুল্লাহ, সাকিব, মুশফিক, সাব্বির, মিরাজরা মিলে সারাদিন উইকেটে টিকে থাকার ক্ষমতা রাখেন। পাশাপাশি বাকিরা একটু নিজেকে মেলে ধরতে পারলেই হয়। রোমাঞ্চিত টেস্টটা তখন রঙিন হয়ে উঠবে। যে টেস্টে ইনিংস হারের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, সেই টেস্টে এখন কী অপেক্ষা করছে? রঙিন না আরেকটি ভরাডুবির দিন?
×