ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহে বিদ্যুতের ভৌতিক বিল ॥ গ্রাহক নাজেহাল

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ময়মনসিংহে বিদ্যুতের ভৌতিক বিল ॥ গ্রাহক নাজেহাল

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ বিদ্যুতের বিল আদায় নিয়ে ময়মনসিংহ পিডিবিতে চলছে তুঘলকি কারবার। মনগড়া ভৌতিক বিলে বিদ্যুত গ্রাহকদের এখন ত্রাহি অবস্থা। সিস্টেম লস কভার করতে গিয়ে ভৌতিক বিল চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে গ্রাহকদের কাঁধে। অভিযোগ অসাধু কর্মকর্তাদের দায়সারা মনোভাব আর গাফিলতির কারণে প্রতিদিনই হয়রানির শিকার হচ্ছে গ্রাহকরা। অথচ এসব হয়রানির সহজে কোন প্রতিকার মিলছে না। ধরাধরি ছাড়া মিলছে না পিডিবির কোন সেবা। প্রতিকার চাইতে গিয়ে উল্টো নাজেহাল হচ্ছে অনেকে! খোদ বিদ্যুত কার্যালয়ে প্রায়ই ঘটছে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা। গত শনিবার দুপুরে শহরের স্টেশন রোডস্থ বিদ্যুত বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২, ময়মনসিংহ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গ্রাহকের এক স্বজন চরমভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। অভিযোগ নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের অশোভন আচরণের প্রতিবাদ করার জেরে বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা ও এক কর্মচারী গ্রাহকের আত্মীয়কে কার্যালয়ের ভেতর মারধরসহ লাঞ্ছিত করে। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাঠাল এলাকার মৃত রুস্তম আলীর নামে একটি আবাসিক সংযোগ রয়েছে! মিটার খারাপ অভিযোগ ছিল পিডিবির। বকেয়া পরিশোধের পর গত ২০১৬ সালের জুলাই মাসে পুরনো মিটার পাল্টে নতুন মিটারে সংযোগ দেয়া হয় মৃত রুস্তম আলীর নামে। দুটি কিস্তিতে গত ২৭ জুলাই এবং ২৮ আগষ্ট পুরনো পুরো বকেয়া পরিশোধ করা হয় বলে দাবি রুস্তমের স্ত্রী সাহিদা খাতুনের। অভিযোগ মৃত রুস্তম আলীর নামে পুরনো মিটার পাল্টে নতুন মিটার স্থাপনসহ বকেয়া পরিশোদের ঝামেলা মেটানো বাবদ ঘুষ দিতে হয়েছে ৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে মারুফ নামে এক লাইনম্যানকে দিতে হয়েছে সাত হাজার টাকা। আর অফিসের আজিজ নামে এক কর্মীকে দিতে হয়েছে আরও দুই হাজার টাকা। কিন্তু এরপরও হয়রানি থেকে পরিত্রাণ মেলেনি গ্রাহকের। মৃত রুস্তম আলীর পুত্র ফজলুল কবীর সজীবের দাবি সমুদয় বকেয়া পরিশোধের পরও তাদের হিসেবে পুরনো বকেয়ার সঙ্গে নতুন মিটারে ভৌতিক ও অস্বাভাবিক বিল দেখানো হচ্ছে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসের বিদ্যুত বিলে মৃত রুস্তম আলীর ৪৩৫০৮ নম্বর হিসেবে ৫০ হাজার ২০৬ টাকা বকেয়া দেখানো হয়! পরিবারের অভিযোগ বিষয়টি নিয়ে ময়মনসিংহ পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এ গেলে তাদের পাত্তাই দেয়নি স্থানীয় কর্মকর্তারা। উল্টো তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। বকেয়া পরিশোধ করার পর পুরনো মিটার খুলে নিয়ে আসে বিদু্যুত বিভাগ। এ সময় স্থাপন করা হয় ডিজিটাল নতুন মিটার। অথচ এখন বলা হচ্ছে সেই পুরনো মিটার পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে মৃত রুস্তম আলীর ভাতিজা সাহিদুর রশিদ গত শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ময়মনসিংহ স্টেশন রোডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গেলে প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান ‘দালাল মারুফ’ মনে করে অশোভন আচরণ করেন। এর প্রতিবাদ করলে নির্বাহী প্রকৌশলীর রুমের ভেতর আহসানুল্লাহ স্বপন পরিচয়ে এক বিদ্যুত কর্মচারী প্রথমে ধমক দিয়ে বের করে দেয় এবং পরে নির্বাহী প্রকৌশলীর করিডর থেকে ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে সিঁড়িতে নিয়ে এসে মারধর শুরু করে সাহিদুর রশিদকে। এ সময় সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানও সাহিদুরকে অকথ্য গালাগালসহ তেড়ে আসে। পরে অবশ্য ময়মনসিংহ বিদ্যুত কর্মচারী ইউনিয়ন-সিবিএ-এর সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ পিডিবির বিদ্যুত বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান পাল্টা অভিযোগ করে জানান, গ্রাহক উত্তেজিত আচরণসহ ‘বিদ্যুত কর্মকর্তাদের চোর’ বলে গালি দিয়েছে। গ্রাহকের স্বজনকে মারধর প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই! আহসানুল্লাহ স্বপন, আজিজ ও মারুফ নামে কোন কর্মচারী তার কার্যালয়ে নেই বলেও দাবি এই কর্মকর্তার।
×