ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত সমাধান কাম্য

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দ্রুত সমাধান কাম্য

বাংলাদেশে ইতোপূর্বে তিন লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল কক্সবাজারসহ আশপাশের এলাকায়। গত বছরের ৯ অক্টোবর নতুন করে হামলা ও সহিংসতা শুরু হলে আবারও ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে। কিছু সংখ্যক শরণার্থী আশ্রয় নেয় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, চীন ও অন্যত্র। এর পরই প্রকৃত অর্থে টনক নড়ে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের। রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমারের মুসলিম সংখ্যালঘু নাগরিক। তবে দুঃখজনক ও পরিতাপের বিষয় হলো, সে দেশের আরাকান প্রদেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা বসবাস করে এলেও মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে না। সে দেশের বৌদ্ধপন্থী সরকার এবং বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী গ্রুপগুলো মনে করে, রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে আগত অবৈধ অধিবাসী, যা সর্বাংশে অসত্য ও অনৈতিহাসিক। এই বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের ওপর অব্যাহত দমন-নিপীড়ন চলছেই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তার আমল থেকে। ২০১৫ সালের নবেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সঙ্গত কারণেই আশা করা গিয়েছিল যে সে দেশে গণতন্ত্রের পথ সুগম হবে এবং অচিরেই রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সমস্যার সমাধান হবে। দেশটির গণতন্ত্রকামী নেত্রী ও ক্ষমতাসীন দল দ্য ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির প্রধান (এনএলডি) আউং সান সুচি এই সমস্যার সমাধানে আন্তরিক ও উদ্যোগী হবেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন বন্ধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রত্যাশিত উদ্যোগ নিতে কার্যত তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। সত্য বটে, দীর্ঘদিন থেকে রোহিঙ্গারা সে দেশে অব্যাহত শোষণ-বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার কারণে সম্প্রতি আন্দোলনের পথ ধরেছে এবং মৌলবাদী জঙ্গী গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালালে রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নতুন করে শুরু হয় ভয়াবহ নির্যাতন। বর্তমানে এর জের চলছে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সোপানে অবস্থান করলেও এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দিতে সমর্থ নয়, জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে কিছু সাহায্য-সহযোগিতা করলেও তা অপ্রতুল ও অপর্যাপ্ত। সে অবস্থায় নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দানসহ মানবিক সহায়তা প্রদান অনেকটাই দুঃসাধ্য। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরী কর্তব্য হবে মিয়ানমারের নতুন গণতান্ত্রিক সরকারের ওপর অব্যাহত চাপ সৃষ্টি করা, যাতে সে দেশের সরকার অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ অনেকেই সাম্প্রতিককালে কক্সবাজার ও সন্নিহিত এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের মানবেতর পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। ওআইসিসহ মুসলিম দেশগুলোও এ বিষয়ে সবিশেষ উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশসহ জাতিসংঘ, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে একযোগে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে প্রথমত চাপ এবং তাতে কাজ না হলে প্রয়োজনে বাধ্য করতে হবে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সে দেশে সম্মানজনক পুনর্বাসনও প্রত্যাশা।
×