ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও একই ভুল সাকিবের

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আবারও একই ভুল সাকিবের

স্পোর্টস রিপোর্টার হায়দরাবাদ থেকে ॥ ‘আমি আমার খেলার ধরন পরিবর্তন করব না। এভাবেই খেলব।’ আবারও বাজে শট খেলে আউট হয়েছেন সাকিব আল হাসান। যখন তৃতীয়দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে আউট নিয়ে সাকিবকে প্রশ্ন করা হলো, তখনই চটে গিয়ে এমন কথা বলে ফেললেন সাকিব। বারবার একই ভুল করছেন। আর তাতে করে দলও বিপদে পড়ছে। তারপরও সাকিব নিজের খেলা পরিবর্তন করতে রাজি নন। এতেই যে সাফল্যও মিলছে। তবে হায়দরাবাদ টেস্টের প্রথম ইনিংসে নিজের ৮২ রানের সময় বাজে শট খেলে আউট না হলে শতকও হতে পারত তার। কিন্তু তা হাতছাড়া হলো। সুন্দর খেলতে থেকে একটি বাজে শট খেলে আউট হওয়ার প্রবণতা আর গেল না সাকিবের। যাবেও না। যাওয়ার কথাও না। কারণ এভাবেই যে খেলবেন সাকিব। তৃতীয়দিনের শুরুতেই বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে। সকালের সেশনেই বিপত্তিতে পড়ে। ৬৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। তামিম, মুমিনুলকে হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। এমন মুহূর্তে ব্যাট হাতে নামেন সাকিব। সেই থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন। আইপিএলে (ইনডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ) কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার সুবাদে তিনি যে ভারতে কতটা জনপ্রিয় তা বোঝা গেল। যখন সাকিব ব্যাট হাতে নামেন, ‘সাকিব, সাকিব’ রবও ওঠে স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশী কিছু দর্শক স্টেডিয়ামে আছে। তারা তো সাকিবের নামটি উচ্চৈস্বরে ডাকেনই। সঙ্গে ভারত দর্শকরাও সাকিবকে চেনেন। তাই সাকিবের নাম জপতে থাকেন। সেই সাকিব কিনা আশা জাগিয়ে হতাশ করলেন। চতুর্থ উইকেটে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি গড়েন। ১০৯ রানে গিয়ে মাহমুদুল্লাহ আউট হলেও সাাকিব উইকেট আঁকড়ে থাকেন। আইপিএলে খেলার সুবাদে হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচ খেলেন সাকিব। খেলার অভিজ্ঞতা আছে। কেকেআরের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলেন। কোন ম্যাচেই ব্যাট করতে পারেননি। ২০১৬ সালে খেলা ম্যাচে ৩ ওভারে ১৮ রান দিয়ে কোন উইকেট নিতে পারেননি। ২০১৪ সালের ম্যাচে ৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন সাকিব। কিন্তু এখানে পুরো উল্টো হয়ে গেল। যখন প্রথমবার এ স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক কোন ম্যাচ খেলতে নামলেন, তখন বল হাতে নীরব থাকলেও ব্যাট হাতে ঝলক দেখাতে থাকেন। নিজের স্টাইলেই খেলতে থাকেন। ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতে থাকেন। ৬৯ বলেই ১০ চারে ৫০ রান করে ফেলেন। খুব দ্রুত অর্ধশতক করেন। ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্টে অর্ধশতক করেন সাকিব। মুশফিকের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে শত রানের জুটিও গড়েন। টেস্টে এটি মুশফিক ও সাকিবের চতুর্থতিন অঙ্কের জুটি। কিন্তু কথায় আছে। একটি ভুলই সব ওলট-পালট করে দিতে পারে। নিউজিল্যান্ড সফরে, তার আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে সাকিব যে ভুল করেছিলেন, বাজে শট খেলে আউট হয়েছিলেন। ভারতের বিপক্ষেও তাই হলেন। ১০৩ বলে ১৪ চারে ৮২ রান করেন, তখনই বিপত্তি ঘাড়ে চেপে বসে। সাকিব এমনই যেন। সুন্দর খেলতে থাকবেন। এরপর একটি বাজে শটেই সব গুলিয়ে ফেললেন। তখন অভিজ্ঞতার কোন মূল্যই দেবেন না। কিংবা দলের কথাও ভাববেন না। যখন পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মুশফিক জুটি ১০৭ রানে যায়, দলের স্কোরবোর্ডে ২১৬ রান জমা হয়; তখনই ভুল শটটি খেলে সাজঘরে ফেরেন সাকিব। এমন একজনের বলে আউট হলেন যিনি এ মুহূর্তে বিশ্ব সেরা টেস্ট অলরাউন্ডার সাকিবের দুশমন। তিনি রবীচন্দ্রন অশ্বিন। অশ্বিনের সঙ্গেই র‌্যাঙ্কিংয়ে পাল্লা দিয়ে চলেছেন সাকিব। অশ্বিন এক নম্বরে আছেন। সাকিব আছেন দুই নম্বরে। অশ্বিন বল ছোড়েন। বলে কোন ক্যারিশমা ছিল না। কিন্তু মিড অনে শট খেলেন সাকিব। বল ব্যাটে ঠিকমত হয়নি। উমেশ যাদবও সহজ ক্যাচটি লুফে নেন। ক্যারিয়ারে এরআগে ৪৬ টেস্ট খেলে ৪টি শতক করেন সাকিব। কিন্তু হতে পারত আরও ৬টি শতক। তিনটিতেই নার্ভাস নাইনটিজে গিয়ে আউট হন সাকিব। আর তিনটিতে আউট হন ৮০ থেকে ৮৯ রানের ঘরে। আরেকটি শতক হতে পারত। কিন্তু সাকিব আবারও বাজে একটি শট খেলে আউট হয়ে যান। সেই সঙ্গে নিজের ভুলে শতকও হাতছাড়া করেন।
×