স্পোর্টস রিপোর্টার হায়দরাবাদ থেকে ॥ এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। হায়দরাবাদ টেস্টে দলের বিপর্যয়ের সময় হাল ধরে ২০৬ বলে ১২ চারে অপরাজিত ৮১ রান করে আবারও প্রমাণ দিলেন মুশফিক। তার ব্যাটিং নৈপুণ্যই চায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। অন্য কিছু নয়। আর তাই এ মুহূর্তে যদি কোন ক্রিকেটার বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব নিতে চান, তাহলেই মুশফিকুর রহীমকে টেস্ট নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেবে বিসিবি। আর হায়দরাবাদ টেস্টেও উইকেটকিপিংয়ে যে বাজে নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন মুশফিক, একের পর এক সহজ স্টাম্পিং মিস করেছেন; তাতে আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরেই তাকে এ দায়িত্ব থেকে সরানো হতে পারে। বিসিবি সূত্রে এমনই খবর। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও শনিবার সেই ইঙ্গিতই দিলেন।
অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক মুশফিকের চেয়ে ব্যাটসম্যান মুশফিককে চায় বিসিবি। ব্যাটসম্যান মুশফিক অনন্য। ‘ফর্ম ইজ টেম্পরারি, ক্লাস ইজ পারমানেন্ট’ তা বারবার দেখিয়ে দিচ্ছেন এ মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান। দলের বিপদের সময় হাল ধরা তার নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ব্যাটসম্যান মুশফিকের কোন তুলনা হয় না। কিন্তু নেতৃত্ব ও উইকেটরক্ষকের ভূমিকা নিয়েই এখন হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা। মুশফিক রক্ষণাত্মক ক্যাপ্টেন। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বেশিরভাগ সময়ই ব্যার্থ হচ্ছেন। আর উইকেটকিপিংয়ে তো এ মুহূর্তে যাচ্ছে তাই অবস্থা। তাতে করে এ দুই বিভাগ থেকেই মুশফিককে সরিয়ে দেয়া হতে পারে। মুশফিকের উইকেটকিপিং নিয়ে শনিবার বিসিবি সভাপতি পাপন জানান, ‘এবার একটা নিশ্চিত সিদ্ধান্ত হবেই।’ আর মুশফিকের নেতৃত্ব নিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টি নিয়েও ভাবছি। গত ৬ মাস ধরেই এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।’ ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হচ্ছে একমাত্র টেস্টটি। টেস্টের তৃতীয়দিন হয়েও গেছে। ‘ঐতিহাসিক’ এ টেস্টে বেহাল দশা হচ্ছে বাংলাদেশের। শনিবার টেস্টের তৃতীয়দিনে স্টেডিয়ামের প্রেসিডেন্ট বক্সে বসে খেলা দেখেন বিসিবি বস। যার স্বদিচ্ছা ও তৎপরতাতেই ভারতের প্রথমবারের মতো খেলতে পারছে বাংলাদেশ। ইতিহাস রচনা করেছেন পাপন এ্যান্ড গং। খেলা দেখার এক পর্যায়ে মুশফিকের উইকেটকিপিং ও নেতৃত্ব নিয়ে কোন ভাবনা আছে কি? এমন প্রশ্ন করতেই পাপন বলেন, ‘আরে এইসব বইলেন না। এখন সময় হয়ে গেছে।’
পাপন কোন সময়ের কথা ইঙ্গিত করলেন? মুশফিককে নেতৃত্ব ও উইকেটকিপিং থেকে সরিয়ে দেয়ার ইঙ্গিতই কি এটি? দুই বছর আগে পাপনই বলেছিলেন, ‘মুশফিককে হয় অধিনায়কত্ব করতে হবে। নয়ত উইকেটকিপিং। দুটি একসঙ্গে করতে পারবে না। তাতে করে ব্যাটিংয়ে প্রভাব পড়ছে।’ শনিবার মুশফিকের উইকেটকিপিং নিয়ে পাপন জানালেন, ‘এখন সময় হয়েই গেছে। এটা প্রায় সিদ্ধান্তও নেয়া।’ আগে মুশফিকের উইকেটকিপিং নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মুশফিক উইকেটরক্ষকের ভূমিকা ছাড়তে রাজি নন। তার প্রিয় স্থান যে এটি। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এতটাই এ স্থানে খারাপ করছেন মুশফিক যে হয়ত শেষ পর্যন্ত সরে যেতেই হবে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজেই হয়ত মুশফিককে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে।
উইকেটকিপিং, ব্যাটিং ও নেতৃত্ব; এ তিন দায়িত্ব একসঙ্গে চালাতে গিয়ে যেন এখন হিমশিমই খাচ্ছেন মুশফিক। হয়ত এমনও হতে পারে মুশফিক ভয়ে আছেন। যদি উইকেটকিপিং যায়, তাহলে ফর্ম খারাপ হলে দল থেকেও ছিটকে পড়তে পারেন। খারাপ ফর্ম হলে নেতৃত্বও তো যাবে। সবই হয়ত হারাবেন।
পাপন জানালেন, ‘ও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে সেরা ব্যাটসম্যান। তামিম আর মুশফিক হচ্ছে রেটে সর্বোচ্চ। ও খুব হতাশ। এরই মধ্যে ওর সঙ্গে বসেছি। আলোচনাও করেছি। আসার আগেও বসেছি। এখানে এসেও কথা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে যদি মুশফিকের পরিবর্তে কোন উইকেটরক্ষক নেয়া হয়, তখন বাদ দেব কাকে? মুশফিককে তো বাদ দেয়া যাবে না। বাদ দিলে হয় সাব্বির (রহমান) বাদ পড়বে। অথবা (মাহমুদুল্লাহ) রিয়াদ। আর কোন অপশন নেই। সিদ্ধান্ত নেয়া খুব সহজ না। তবে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে।’
মুশফিকের নেতৃত্ব নিয়ে পাপন জানান, ‘আমি ওর সঙ্গে নেতৃত্ব নিয়েও কথা বলেছি। কোন কিছু নেই যা বলিনি। সরাসরি ওর নেতৃত্ব নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলেছি। এখন টেস্ট চলছে। এ মুহূর্তে নেতৃত্ব নিয়ে ওর সঙ্গে কোন আলোচনা আর হবে না। তবে আমরা এ বিষয়টি নিয়েও ভাবছি। গত ৬ মাস ধরেই এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। কিন্তু সমস্যা হলো, মুশফিক নেতৃত্ব না দিলে কে সেই আসনে বসবে? অনেকেই আবার টেস্ট নেতৃত্ব নিতেও চায় না।’
তার মানে টেস্ট নেতৃত্ব কেউ একজন নিক, বিসিবি এখন সেই অপেক্ষায়। তাহলেই মুশফিককে সরিয়ে দিয়ে তার মাথা থেকে চাপ কমানো হবে। আর উইকেটকিপিং যে যাচ্ছে মুশফিকের তা নিশ্চিত। নেতৃত্ব ও উইকেটকিপিং দুটিই হারাচ্ছেন মুশফিক।