ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় দিনটা ভালই কাটল বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

তৃতীয় দিনটা ভালই কাটল বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ, হায়দরাবাদ থেকে ॥ কি দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মুশফিকের ১০৭ রানের জুটি হয়। এরপর সপ্তম উইকেটে মুশফিক-মিরাজের অবিচ্ছিন্ন ৮৭ রানের জুটি হয়। এ দুই বড় জুটির সঙ্গে সাকিবের ৮২, মুশফিকের অপরাজিত ৮১ ও মেহেদী হাসান মিরাজের অপরাজিত ৫১ রানে হায়দরাবাদ টেস্টে ভারতকে পাল্টা জবাব দিচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ভারতের গড়া ৬৮৭ রানের জবাবে তৃতীয় দিনে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩২২ রান করেছে বাংলাদেশ। এখনও ৩৬৫ রানে পিছিয়ে আছে। ফলোঅন এড়াতে আরও ১৬৬ রান লাগবে। তবে তৃতীয়দিনটি নিজেদেরই করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত যে রান স্কোরবোর্ডে জমা করেছিল, দ্বিতীয়দিনে যেভাবে পেসাররা গতি ও বাউন্স পাচ্ছিল এবং স্পিনারদের বল ঘুরছিল তাতে মনে করা হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা নেতিয়ে পড়বে। দ্বিতীয়দিনে অল্প সময় ব্যাট করার সুযোগ পেয়েও সৌম্য সরকার আউট হয়ে গিয়েছিলেন। ১ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ৪১ রান করতে পেরেছিল। সেই শঙ্কা তৃতীয়দিনের সকালেও জেঁকে বসে। যখন দ্বিতীয়দিনে অপরাজিত থাকা দুই ব্যাটসম্যান তামিম ও মুমিনুল দ্রুত সাজঘরে ফেরেন। ৬৪ রানের মধ্যেই তামিম ও মুমিনুল আউট হয়ে যান। সাকিব ব্যাট হাতে নেমে অবশ্য তা সামাল দেন। মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু ১০৯ রানে গিয়ে অফ ফর্মে থাকা মাহমুদুল্লাহ আউট হয়ে গেলে আবার দল বিপদে পড়ে। সেখান থেকে সাকিব ও মুশফিক মিলে দলকে দুই শ’ রানে নিয়ে যান। দুইজন মিলে যেই ১০৭ রানের জুটি গড়েন তখন অহেতুক একটি শট খেলতে গিয়ে ৮২ রান করা সাকিব আউট হয়ে যান। তখন মনে হয়েছে, এই বুঝি ভরাডুবি শুরু হলো। যখনই ভালভাবে এগিয়ে যেতে থেকেছে বাংলাদেশ, তখনই কেউ আউট হয়ে সেই ্এগিয়ে যাওয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছেন। সাকিব বরাবরই এমন করছেন। তখন মুশফিক ব্যাটিংয়ে। কিন্তু সাব্বির মুশফিককে সঙ্গ দেবেন কি, তিনিও আউট হয়ে যান দ্রুত। মিরাজই তখন ভরসা থাকে। ব্যাটিংয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না মিরাজ। তাই মনে হয়েছে, মিরাজ আর কি করতে পারবেন। কিন্তু দিনশেষে দেখা গেছে মুশফিককে যোগ্য সঙ্গই দিয়ে গেছেন মিরাজ। এ দুইজন মিলেই প্রতিরোধ গড়েছেন। নাহলে সাকিব ও সাব্বিরের আউটের পর বড় স্কোর গড়তে পারবে বাংলাদেশ, সেই সম্ভাবনাই উড়াল দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দল তিন শ’ রান করে আরও ২২ রান যোগ করে। মুশফিক ও মিরাজ আজ চতুর্থদিনে ব্যাট হাতে নামবেন। দিনের শুরুটা যদি সামাল দিতে পারেন তারা দুইজন, তাহলে ম্যাচ অন্তত পাঁচদিনে গড়ানোর সঙ্গে হার এড়ানোর সম্ভাবনাও উজ্জ্বল। কোথায় ইনিংস হারের শঙ্কা জেগেছিল। সেখানে এখন ম্যাচ বাঁচানোর সম্ভাবনাও আছে। কিন্তু দুঃসংবাদও আছে। শেষ ওভারে ইশান্ত শর্মার বাউন্স একটি বিপদও আনে। ইশান্তের বাউন্স করা বল মুশফিকের ডানহাতের তর্জনিতে গিয়ে আঘাত করে। যে আঙ্গুলে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলেন মুশফিক। এজন্য দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে পারেননি। সেই আঙ্গুলেই আবার ব্যথা লাগে। স্বাভাবিকভাবেই এ ব্যথা নিয়ে বেশিদূর এগিয়ে যাওয়া মুশফিকের জন্য কষ্টসাধ্যই। যদিও তৃতীয়দিনের শেষ ওভারের চতুর্থ বলে ব্যথা পেয়ে পরের বলেই স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকান মুশফিক। ইশান্তকে উচিত জবাব দেন। এই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সাকিব, তামিম, হাবিবুল বাশার সুমনের পর চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩ হাজার রানের মাইলফলকেও পা রাখেন মুশফিক। কিন্তু আঙ্গুলে ব্যথা থাকবেই। সেই ব্যথাই না কাল হয়ে দাঁড়ায় এখন। মুশফিক ২০৬ বলে ১২ চারে অপরাজিত ৮১ রান করেছেন। শতক হতে আর ১৯ রান লাগে। মিরাজও টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক করেছেন। ১০৩ বলে ১০ চারে অপরাজিত ৫১ রান করেছেন। মুশফিকের আঙ্গুলে যদি ব্যথা না থাকে আর ঠিকমত ব্যাট করতে পারেন, তাহলে শতক হয়ে যেতে পারে। আর মিরাজ যেভাবে খেলছেন, তাতে তারও শতক করার সম্ভাবনা আছে। এখন এ দুইজন তৃতীয়দিনে যেভাবে ব্যাট করেছেন, আজ চতুর্থদিনেও সেভাবে ব্যাটিং করতে পারলেই হয়। তাহলে ফলোঅন এড়ানোর সঙ্গে ভাল কিছুও মিলতে পারে। বাংলাদেশকে ভারতে টেস্ট খেলতে আমন্ত্রণ জানান হয় না। কারণ বাংলাদেশের বিপক্ষে খেললে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং বাংলাদেশ এখনও টেস্টে এতটা পারদর্শী নয়। স্টেডিয়ামেও দর্শক সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু হায়দরাবাদ টেস্টে প্রতিদিনই ১৫ হাজারের মতো দর্শক হচ্ছে। বাংলাদেশও ভাল খেলছে। তাতে দর্শকরাও আনন্দ উপভোগ করছেন। ধারণা পাল্টেও যাচ্ছে। বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম যে বলেছিলেন, ‘এমন খেলতে চাই, যেন ভারত বারবার আমাদের আমন্ত্রণ জানায়।’ সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মুশফিক নিজ হাতেই সেই দায়িত্ব নিয়েছেন। বাংলাদেশ নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলে ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালে। গত ১৬ বছরে সব টেস্ট খেলুড়ে দেশে গিয়ে খেললেও ভারতের মাটিতেই খেলা হয়নি। এবার খেলা হচ্ছে এবং ২০০০ সালে প্রথম ইনিংসে যে বাংলাদেশ ভাল করেছিল, ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ভাল করার ইঙ্গিতই মিলছে। এখন শুধু অপেক্ষা আজকের দিনটিতে ভাল করার। ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়দিন ১ উইকেটে ৪১ রান করেছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে তৃতীয়দিন আরও ৫ উইকেট হারিয়ে ২৮১ রান যোগ করে মুশফিকবাহিনী। তৃতীয়দিন পুরোটা খেলেছে। ভারতকে পাল্টা জবাবই দিচ্ছে বাংলাদেশ।
×