ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিরল রোগে আক্রান্ত দুই ভাই হাসপাতালে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিরল রোগে আক্রান্ত দুই ভাই হাসপাতালে

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা, ১১ ফেব্রুয়ারি ॥ ধুঁেক ধুঁেক মৃত্যুর প্রহর গুনছে বিরল রোগে আক্রান্ত আমতলীর দুই ভাই শিপন (১৫) ও সোলায়মান (৮)। শনিবার তাদের আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা দুই ভাইকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক জনকণ্ঠে ‘ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর প্রহর গুনছে দু’ভাই শিপন ও সোলায়মান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি নজরে পড়ে সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং স্বাস্থ্য বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল হেলথ সার্ভিসেস ডাঃ আবুল কালাম আজাদের। তারা এ দু’ভাইয়ের খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বরগুনা জেলা প্রশাসক ড. বশিরুল আলম ও সিভিল সার্জন ডাঃ জসিম উদ্দিন হাওলাদারকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের নির্দেশ মোতাবেক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরগুনা সিভিল সার্জন ডাঃ জসিম উদ্দিন ও আমতলী স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ মোঃ আবদুল মতিন ওই দু’ভাইয়ের খোঁজখবর নিতে তাদের গ্রামের বাড়ি কালীবাড়ি যান এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পরামর্শ দেন। শনিবার ওই দুই ভাইকে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। জানা গেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের কালীবাড়ি গ্রামের ফকু তালুকদারের চার ছেলে স্বপন, রিপন, শিপন ও সোলায়মান। স্বপনের বয়স যখন আট বছর তখন তার শরীরের পরিবর্তন দেখা দেয়। তার দু’পায়ের হাঁটু মোটা হয়ে আস্তে আস্তে হাত-পা শুকিয়ে রগ খিঁচুনি দিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে। তিনি তার সাধ্যমতো চিকিৎসা করিয়েছেন কিন্তু কোন চিকিৎসাই কাজে আসছে না। ডাক্তাররা এ লক্ষণ দেখে রোগ শনাক্ত করতে পারছেন না। পঙ্গুত্ব অবস্থায় ৯ বছর বিছানায় থেকে ২০০৮ সালে স্বপন মারা। এরপর ছোট ভাই রিপন ও শিপনের আট বছর হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে একই লক্ষণ দেখা দেয়। সন্তানদের বাঁচানোর জন্য বহু চিকিৎসক ও ওঝার কাছে ধর্ণা দিয়ে কোন কাজ হয়নি। ৮ বছর ধরে বিছানায় পড়ে থাকে শিপন ও রিপন। গত বছরের নবেম্বর মাসে একই অবস্থায় রিপন মারা যায়। বর্তমানে শিপন বিছানায় পড়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। শিপনের হাত-পা চিকন হয়ে শুকিয়ে গেছে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাঁকা হয়ে পড়ে আছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। বাব-মা হাল ছেড়ে দিয়ে ছেলের মুত্যু দেখার অপেক্ষায় আছেন। শেষ ও ছোট সন্তান সোলায়মান তালুকদার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। তারও শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। তার পায়ের হাঁটু মোটা হয়ে যাচ্ছে। তাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। একেক করে দুরারোগ্য রোগে দু’ছেলের মৃত্যু এবং দু’ছেলের এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ায় বাবা-মা দিশাহারা। কান্না যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।
×