ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একে মোহাম্মাদ আলী শিকদার

রাজনীতি ঠিক হলে নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রাজনীতি ঠিক হলে নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে

গত প্রায় দেড়-দুই মাস ধরে মিডিয়াসহ রাজনৈতিক অঙ্গনের মূল আলোচনা কেন্দ্রীভূত ছিল নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও তার প্রক্রিয়া নিয়ে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে দশজন যোগ্য লোকের নাম সুপারিশ করার জন্য রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। তদানুসারে অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশকৃত দশজনের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে গত সোমবার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদা। কমিশনারগণ হলেন- সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী, সাবেক জেলা জজ কবিতা খানম এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার। অনুসন্ধান কমিটির কাজের প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে এবং সফলভাবে দশজন যোগ্য লোকের নাম সুপারিশ করতে পারায় সকল পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুসন্ধান কমিটি গঠনের পরপরই একমাত্র বিএনপি উক্ত কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ এবং প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়। তারপর দু-একদিন যেতেই যখন দেখলেন সকলেই কমিটির কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন, তখন নিজের প্রত্যাখ্যাত কমিটির কাছে অন্যান্য দলের মতোই বিএনপিও তাদের পছন্দের পাঁচজনের নাম দিলেন। যাদেরকে প্রথম দর্শনেই প্রত্যাখ্যান করলেন আবার তাদের কাছেই নাম জমা দেয়ায় সকলের মনে হলো তাহলে বোধহয় বিএনপির শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। বিএনপি যাদের নাম দিয়েছিল বলে পত্রিকায় এসেছে তাদের মধ্যে একজন সাবেক সচিবের নাম ছিল যিনি চরম সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মানুষ এবং দম্ভভরে তিনি তা প্রকাশ করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ ও বাহন পহেলা বৈশাখ পালন করাকে তিনি বেদাত ও বিধর্মীদের কাজ বলে মনে করেন। যে কথা বছর ছয়-সাতেক আগে তাঁকে আমি এক টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে বলতে শুনেছি। ব্যক্তিগতভাবে একজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি তার নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু রাষ্ট্র ও জাতির মৌলিক দর্শন ও সংস্কৃতির চরম বিপরীতে দৃষ্টিভঙ্গির কেউ যখন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন তখন তা সমগ্র জাতির জন্য ক্ষতির কারণ হয়, যা আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছি ২০০১-২০০৬ মেয়াদে জামায়াতের দু’জন যুদ্ধাপরাধী মন্ত্রী হওয়ার মধ্য দিয়ে। বিএনপির প্রতি অনুরক্ত অনেক অবসরপ্রাপ্ত সচিব রয়েছেন, যারা বাঙালী সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিরুদ্ধে অন্তত প্রকাশ্যে কথা বলেন না। কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে দম্ভ নিয়ে নিজের চরম সাম্প্রদায়িক মনোভাব যিনি ব্যক্ত করেন তাকে বিএনপি কর্তৃক সুপারিশ করার পর আবার যখন অস্ত্র হাতে মাঠে যুদ্ধ করা একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হওয়ার বিরোধিতা করে তখন প্রকৃতপক্ষে বিএনপির আসল রূপ মানুষের কাছে আবার নতুন করে ধরা পড়ে। বাংলাদেশের রাজনীতির মূল সমস্যাটা এখানে নিহিত, মুক্তিযুদ্ধের দর্শনের পক্ষে ও বিপক্ষের বিভাজন। সাম্প্রদায়িক ও অসাম্প্রদায়িক বাঙালী সংস্কৃতির মধ্যে সংঘাত, যাকে অন্য কথায় বলা হয় পরিত্যক্ত পাকিস্তানী পন্থা ও মুক্তিযুদ্ধের দর্শনের পন্থার সংঘর্ষ। এটা নতুন কিছু নয়, শুরু হয়েছে ১৯৭৫ সালের পর থেকে, বিএনপি-জামায়াতের এক সঙ্গে আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সেটাই আবার প্রকাশ্যে এসেছে, সামনে আরও আসবে। অনুসন্ধান কমিটি সকলের প্রত্যাশা অনুযায়ী সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করেছেন। সুপারিশকৃত দশজনের নাম তারা প্রকাশ করেছেন, যেটা নিয়ে কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তালিকা থেকে একজন করে এবং অন্যান্য প্রায় ২৫টি দলের দেয়া তালিকা থেকে আরও তিনজনের নাম নিয়ে মোট পাঁচজনের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি। এর থেকে ভারসাম্যমূলক সিদ্ধান্ত আর কি হতে পারে। সবাই সবার কাছে পছন্দের হবেন না, এটাই স্বাভাবিক। সেনাবাহিনী থেকে যিনি নিয়োগ পেয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কেউকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। পত্রিকার খবর অনুসারে নিয়োগপ্রাপ্ত পাঁচজনের কেউই বহুল পরিচিত লোক নন। এ পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে কেউ-ই কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কখনও সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা, অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছেন ৯ নম্বর সেক্টরে। নিজের জীবনবাজি রেখে দেশের স্বাধীনতার জন্য স্বইচ্ছায় যারা অনিশ্চয়তার পথে অস্ত্র হাতে নেমেছেন, তাদের দেশপ্রেম ও নৈতিক সাহসিকতা নিয়ে বাংলাদেশে প্রশ্ন তুলতে পারেন দুই শ্রেণীর মানুষ। প্রথমত. মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী গোষ্ঠী ও তাদের বংশধরগণ। আর দ্বিতীয়ত. মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সব রকম সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যারা শুধু সাহসের অভাবে মুক্তিযুদ্ধে যাননি তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার দেশপ্রেম নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতে পারে, অন্য কেউ নয়। কাপুরুষদের দল সব সময় বীরদের সমালোচনায় মুখর থাকে। নির্বাচন কমিশন তো দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য কাজ করবেন। যে রাষ্ট্র পাবার জন্য একজন স্বেচ্ছা মুক্তিযোদ্ধা নিজের জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তিনি সুযোগ পেলে রাষ্ট্রের সেবাই করবেন। বিরুদ্ধে কিছু করবেন না, করতে পারেন না। এই বিশ্বাস বাংলাদেশের জন্য গর্বের, সম্মানের ও গৌরবের। রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য যে কাজ হয় তা কোন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে যায় না। তাতে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে জয় পরাজয় নির্ভর করে না। নির্বাচনে জয়-পরাজয় দলের কর্ম-অপকর্মের ওপর নির্ভরশীল। ফাঁকাবুলি আর মিথ্যাচারের দিন শেষ। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের সুযোগে সব দলের পারফরমেন্সের তুলনামূলক চার্ট এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। বিদেশী বড়বড় জরিপকারী সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বছরভিত্তিক এবং মেয়াদভিত্তিক উন্নয়ন অগ্রগতি ও অধগতির তথ্য উপাত্ত বিশ্ব মিডিয়ায় নিয়মিত প্রকাশ করে যাচ্ছেন। বিএনপি কর্তৃক নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরোধিতা করার রাজনৈতিক কারণ হতে পারে সরকারকে আগামী দুই বছর চাপে রেখে নির্বাচনের সময় আরও কিছু সুযোগ সুবিধা আদায় করা। যতটুকু আদায় করা যায় ততটুকুই বিএনপির জন্য প্রাপ্তি। কারণ, বিএনপিসহ সবাই জানেন আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিকল্প কোন রাস্তা বিএনপির জন্য খোলা নেই। তবে কেএম নুরুল হুদার সম্পর্কে যে কথা বলে বিএনপি বিরোধিতা করছে তা কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের জন্য সেটা অত্যন্ত অপমানজনক ও ঘৃণিত বক্তব্য। বিএনপির ভাষ্য হলো, ২০০১-২০০৬ মেয়াদে জামায়াতসহ ক্ষমতায় এসে বিএনপি কেএম নুরুল হুদাকে চাকরিচ্যুত করেন, আর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এসে তাঁকে পুনরায় চাকরিতে পুনর্বাহল করেন। এটা বিএনপির কাছে কেএম নুরুল হুদার অযোগ্যতা। প্রকৃত সত্য হলো, বিএনপি কর্তৃক চাকরিচ্যুতির আদেশ রাষ্ট্রের আদালত কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করার ফলে তিনি চাকরিতে পুনর্বহাল হন। বিএনপি বলছে তিনি ১৯৯৬ সালের আন্দোলনের সময় জনতার মঞ্চের সঙ্গে ছিলেন। তা যদি হবে তাহলে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি তাঁর বিরুদ্ধে সরকারী চাকরি বিধি ভঙ্গের অভিযোগ এনে তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা না নিয়ে স্বেচ্ছাচারী পন্থায় চাকরিচ্যুত করলেন কেন? বিএনপির অভিযোগ যে সত্য নয় তা আদালতে প্রমাণিত হওয়ায় তিনি আদালতের হুকুমে চাকরি ফিরে পান। সে সময় কেবল নুরুল হুদা বা এক-দুইজন চাকরিচ্যুত হয়েছেন তা নয়, ২০০১ সালে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সরকার গঠন করে কোন রকম কারণ দর্শানো ও তদন্ত ব্যতিরেকে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সামান্য সুযোগ না দিয়ে সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের শত শত মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারী হুকুমের মাধ্যমে। একজন মুক্তিযোদ্ধাও সেদিন জানতে পারেননি আসলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটা কি? অপরাধ করেছেন কি করেননি সেটা তো আরও পরের কথা। সুতরাং এতবড় অন্যায় ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামান্য কিছুটা প্রতিকার করেছে পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার। প্রত্যেক মানুষের জন্য অন্যায়ের প্রতিকার করা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব। তার জন্য কেউ ওই সরকারের দলীয় লোক হয়ে যায় না। বাংলাদেশের সচেতন মানুষের কাছে একটা প্রশ্ন রাখতে চাই। জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের সরকারে নিয়ে তাদের প্রভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর যে সময়ে বিএনপি যে চরম অন্যায় ও অবিচার করেছে তার জন্য কি মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তারা বাংলাদেশের সকল কাজের জন্য অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যাবেন? এই বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, এ কথা যেন কেউ ভুলে না যান। আসলে আমাদের রাজনীতির মূল সমস্যা হলো, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষের অভাবনীয় এবং তুলনাহীন বিভাজন, যা বিশ্বের কোথাও নেই। আর সে জন্যই বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাজনীতির সংস্কৃতি ও স্বরূপ বাংলাদেশে অচল এবং অনুপস্থিত। বিপরীতমুখী অবস্থানের ফলে কোন পক্ষই গণতান্ত্রিক রাজনীতির সৌন্দর্য নির্বাচনে হেরে যাওয়াকে সহজে গ্রহণ করতে পারে না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের কঠিন সংগ্রাম এবং একাত্তরে ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত মৌলিক রাষ্ট্রনীতির সঙ্গে কোন আপোস মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ করতে পারবে না। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ পক্ষ ভাল করে জানে গণতন্ত্রের পথ ধরে স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি বজায় থাকলে চুম্বকের মতো আকর্ষণীয় গৌরবোজ্জ্বল ঘটনার মোড়কে আবিষ্ট মুক্তিযুদ্ধের দর্শন সংবলিত উদার ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ ও বিস্তার অনিবার্য, সেটা তারা গণতান্ত্রিকপন্থায় ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বড় রাজনৈতিক দলকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দেয়ার জন্য ২০০১-২০০৬ মেয়াদে জামায়াত-বিএনপি সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড আক্রমণের ঘটনা ঘটে এবং বিশ্বখ্যাত একজন মানুষ ও সিটিং সংসদ সদস্য শাহ এএমএস কিবরিয়াকে গ্রেনেড আক্রমণে প্রাণ দিতে হয়। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ ও তার দর্শন এবং আদর্শের প্রতিফলন ঘটে এমন সব কিছুকেই বিএনপি দলীয় অপবাদ দিয়ে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করবে সেটাই স্বাভাবিক। এটাই তারা করে আসছে ১৯৭৫ সালের পর থেকে। মুক্তিযোদ্ধা কে এম নুরুল হুদার বিরোধিতা করছে বিএনপি ওই একই কারণে এবং একই কৌশলে। প্রতিটি নির্বাচনই সুষ্ঠু হতে হবে, এর বিপরীতে অন্য কিছু কাম্য নয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনে হেরে যাওয়াকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে গ্রহণ করতে না পারে, তাহলে কোন দিনই শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। লেখক : ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক, নিউ অরলিনস, ইউএসএ
×