ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাঘা-আড়ানীতে স্বাবলম্বী অনেকে

হলুদে রঙিন কৃষকের আঙ্গিনা

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

হলুদে রঙিন কৃষকের আঙ্গিনা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ কম পরিশ্রমে হলুদ চাষে ভাগ্য ফিরেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার প্রান্তিক কৃষকের। এরই মধ্যে কৃষকের আঙ্গিনা হলুদের রঙে রঙিন হয়েছে। উপজেলার সমতল ও চর এলাকায় এ বছর ব্যাপক হলুদের চাষাবাদ হয়েছে। হলুদকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক চাতাল। এসব চাতালে চলছে হলুদ সেদ্ধসহ প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পতিত ও অনাবাদী জমিতে অন্যান্য ফসলের সঙ্গে অনেক কৃষক হলুদ চাষ করছেন। কৃষকরা জানান, বিগত বছরগুলোয় হলুদ আবাদ করে ব্যাপকভাবে লাভবান হওয়ায় এবারও বিপুল পরিমাণ জমিতে চাষ হয়েছে হলুদের। সম্প্রতি এসব হলুদ উত্তোলন শুরু হয়েছে। হলুদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে হলুদ শিদ্ধ ও শুকানোর বড় বড় চাতাল। কৃষকরা জানান, অল্প সময় ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভ এবং কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না হলুদ আবাদে। এ কারণে অনেকেই আম-বাগানসহ পতিত জমিতে হলুদ চাষাবাদে ঝুঁকে পড়ছেন। হলুদ চাষীরা জানান, এক শতক জমিতে ৬ থেকে ৭শ’ টাকা খরচ করে হলুদ চাষ করে ৩ থেকে ৪ মণ হলুদ পাওয়া যায়। দাম পাওয়া গেলে বিক্রি হয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়। আর শ্রমিকরা সকাল ৮টা হতে বেলা ১টা পর্যন্ত হলুদ তুলে মজুরি পান ২০০ টাকা। উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের কৃষক হাফিজুর রহমান জানান, তিনি বিগত সময়ে চরের মাটিতে কখনই হলুদের চাষাবাদ করেননি। কিন্তু অন্যের দেখে এবার দুই বিঘা জমিতে হলুদ আবাদ করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে ওই হলুদ তুলে গরম পানিতে সিদ্ধ করার পর রোদে শুকাচ্ছেন বলে জানান। এদিকে নিজ উদ্যোগে উপজেলার বাউসা এলাকার একটি আম বাগানে হলুদ চাষ করেছেন উদ্যমী যুবক আব্দুল ওহাব। তিনি একজন কৃষক ও শিক্ষক। তিনি জানান, এ বছর প্রায় তিন বিঘা জমিতে হলুদের চাষ করেছেন। এর মধ্যে এক বিঘা রয়েছে আম বাগানে। তিনি বলেন, শ্রম কম দিয়েও হলুদ চাষে সাবলম্বী হওয়া সম্ভব। আব্দুল ওহাব জানান, হলুদ চাষের সময় তিনি ১১ হাজার টাকার বীজ কিনে রোপণ করেন। রোপিত হলুদের গাছ গজানোর সময় দুই একটি সেচ ও পরিমাণ মতো রাসায়নিক ছাড়া তেমন কিছুই দেননি। বর্তমানে তার যে পরিমাণ হলুদ উৎপাদন হয়েছে তাতে খরচের তুলনায় দশগুণ বেশি টাকা আয় হবে । আড়ানী এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হক রাজ, নওটিকার আমজাদ হোসেন, তেথুলিয়ার সাইফুল ইসলাম, বলিহার গ্রামের আব্দুল জলিল, আমোদপুর গ্রামের আলী আকবর ও শাজাহান আলী জানান, সরকার হলুদের ন্যায্য বাজার নিশ্চিত করলে দেশে কখনোই হলুদ সংকট হবে না। বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চলে যে পরিমাণ আম বাগান রয়েছে তার মধ্যে সবাই যদি কম-বেশি হলুদ চাষাবাদ করেন তাহলে দেশের চাহিদা পূরণের পর বিদেশেও রফতানি সম্ভব। আড়ানী এলাকার হলুদ ব্যবসায়ী সিদ্দিক শেখ জানান, বর্তমানে আড়ানী পৌর এলাকার মধ্যে কাঁচা হলুদ কেনা ও সিদ্ধ করে শুকানোর পর বিক্রির জন্য ৫০টির বেশি চাতাল তৈরি হয়েছে। এ সমস্ত চাতালে ভাল হলুদ (কাঁচা) ৬শ’ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে বেচাকেনা হচ্ছে। অপরদিকে শুকানোর পর ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম জানান, হলুদ উৎপাদনের ক্ষেত্রে জেলা অফিস থেকে লক্ষ্য মাত্রার কোন তালিকা হয়নি। তাই কত বিঘা জমিতে হলুদ উৎপাদন হচ্ছে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এ উপজেলায় প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ হচ্ছে। তার মতে, উপজেলার মাটি হলুদ উৎপাদনের জন্য উপযোগী।
×