ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুশফিক মিরাজে আশার আলো

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মুশফিক মিরাজে  আশার  আলো

মিথুন আশরাফ, হায়দরাবাদ থেকে ॥ ভারতের প্রথম ইনিংস শেষে সব অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল, বাংলাদেশ না আবার হায়দরাবাদ টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হেরে যায়। মুশফিকুর রহীম ও মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সেই অন্ধকার দূর হতে লাগছে। আশার আলোর দেখা মিলতে শুরু করেছে। এখনও বাংলাদেশ ৩৬৫ রানে পিছিয়ে রয়েছে। তবে ৮১ রান করা মুশফিক ও ৫১ রান করা মিরাজ যদি আজকের দিনেও ব্যাটিং ঝলক বজায় রাখতে পারেন, অবিচ্ছিন্ন ৮৭ রানের জুটিটি আরও বড় করতে পারেন, তাহলে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ প্রথমবার টেস্ট খেলতে নেমেই ভাল কিছু পেয়ে যেতে পারে। সেই ভাল কিছুটা কি? প্রশ্ন উঠতেই পারে। প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে যে বলেছিলেন, ‘জয়ের জন্যই লড়াই করব।’ সেই জয় মেলার কোন অপশন বাংলাদেশের নেই। প্রথম ইনিংসে ৬৮৭ রান করেই বাংলাদেশের সেই সম্ভাবনা শেষ করে দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ যেহেতু ভালই খেলছে। আবারও শতকের কাছাকাছি গিয়ে বাজে শট খেলে আউট হওয়া সাকিব আল হাসানের (৮২) পর মুশফিক ও মিরাজের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ৬ উইকেটে ৩২২ রান করে ফেলেছে। ম্যাচ থেকে এখন সর্বোচ্চ প্রাপ্তি হতে পারে ড্র। তবে এ জন্য কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে। আগে ফলোঅন এড়াতে হবে। ফলোঅন এড়াতে এখনও ১৬৬ রান লাগবে। হাতে আছে ৪ উইকেট। এরমধ্যে দেশের হয়ে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন হাজার রান করা মুশফিক, মিরাজ ছাড়া সবাই বোলার। শেষ বেলায় এসে ইশান্ত শর্মার বাউন্সার করা বল লেগে মুশফিক আবার ডান হাতের তর্জনীতে ব্যথা পান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে একই স্থানে ব্যথা পেয়ে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতেই পারেননি। দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। এবার অবশ্য তা হচ্ছে না। তবে দিনের শেষ ওভারের চতুর্থ বলে ব্যথা পেয়েও মুশফিক আর মাঠ ছাড়েননি। স্প্রে নিয়েই খেলে গেছেন। তার আঙ্গুলে ব্যথা থাকাটাই স্বাভাবিক। সেই ব্যথা নিয়েই আজ ব্যাটিং করবেন মুশফিক। কিন্তু কতদূর যেতে পারবেন? সেই প্রশ্নই আছে। তৃতীয়দিন ২০৬ বলে ১২ চারে শতক থেকে ১৯ রান দূরে থাকা মুশফিক যদি আজ ইনিংসটাকে আরও বড় করতে পারেন, তাহলেই ফলোঅন এড়ানোর সম্ভাবনা থাকবে। আর যদি প্রথমবারের মতো অর্ধশতক করে নট আউট থাকা মিরাজও তৃতীয়দিনের মতোই খেলতে পারেন, তাহলে ফলোঅন এড়িয়ে আরও দূর যাওয়া সম্ভব। তখন টেস্ট পাঁচদিনে যাওয়ার সঙ্গে ড্র’র সম্ভাবনাও থাকবে। কিন্তু যদি মুশফিক দ্রুত আউট হয়ে যান। কিংবা মিরাজ আউট হয়ে যান। তাহলে ফলোঅনে পড়ে যাবে বাংলাদেশ। তখন প্রথম ইনিংস শেষে ৩০০ বা তার কাছাকাছি রানে পিছিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। যদি ভারত আর ব্যাটিং না করে ফলোঅনে পড়া বাংলাদেশকে আবার ব্যাট করতে পাঠায়, তাহলে হার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, হাতে আরও ২দিন আছে। চতুর্থ ও পঞ্চমদিনে পুরোদস্তুর উইকেটে স্পিন ধরবে। সেই সঙ্গে ভারত পেসাররা তো বাউন্স দিয়ে, রিভার্স সুইং করে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ভয় ধরানোর জন্য প্রস্তুত। ২৫০ রানের মতো ব্যবধানও যদি প্রথম ইনিংসে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ তো আবার ইনিংস হারের খপ্পরেও পড়ে যেতে পারে। দ্বিতীয় ইনিংসে যে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা আরও বাজে ব্যাটিং করার নজিরই বারবার রেখেছেন। তবে ম্যাচটি বাংলাদেশ হারলেও, যদি ৪০০ রান বা তারবেশি করতে পারে; তাতে করে পাঁচদিনে খেলা গড়ায়, তাহলেই অনেক বড় প্রাপ্তি হবে। ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার পরতো ম্যাচ পাঁচদিনে যাবে, সেটি ভাবাই কঠিন হয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশ তৃতীয়দিন পুরোটাই খেলেছে। বিশেষ কোন অঘটন না ঘটলে ম্যাচ এখন পাঁচদিনে যাবে, তাও নিশ্চিত। পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মুশফিক শত রানের (১০৭) জুটি গড়েন। এরপর সপ্তম উইকেটে মুশফিক-মিরাজ দেখান ব্যাটিং ভেল্কি। ঠিক যেন ২০০০ সালের স্মৃতির পুনরাবৃত্তিই হয়েছে। বাংলাদেশ নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্টেও খেলে ভারতের বিপক্ষে। একমাত্র টেস্ট সিরিজের সেই টেস্টের সপ্তম উইকেটে বড় জুটি হয়েছিল। বাংলাদেশ ইতিহাসের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও উইকেটরক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলট মিলে ৯৩ রানের জুটি গড়েছিলেন। যেটি প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের যে কোন ইনিংসেরই সবচেয়ে বড় জুটি। এই জুটি দলকে ৪০০ রানেও নিয়ে যায়। মুশফিক ও মিরাজ যেন সেই পথেই এগিয়ে চলেছেন। ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট খেলছে। সেই টেস্টেও সপ্তম উইকেটে বড় জুটিই গড়েছে বাংলাদেশ। এই জুটিই আবার বাংলাদেশকে বড় স্কোর গড়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। তৃতীয়দিন শেষে বাংলাদেশ আরও ভাল অবস্থানে থাকতে পারত। দ্বিতীয়দিনে ১ উইকেট হারিয়ে ৪১ রান করে দিন শেষ করে বাংলাদেশ ৬৪৬ রানে পিছিয়ে ছিল। তৃতীয়দিন এসে পিছিয়ে থাকার ব্যবধান অর্ধেকে নেমে এসেছে। তৃতীয়দিনে আরও ২৮১ রান করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু উইকেট চলে গেছে ৬টি। প্রথম সেশন শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই অহেতুক এক রান আউট হন তামিম। মুমিনুল হকও দলীয় ৬৪ রানে সাজঘরে ফেরেন। মাহমুদুল্লাহও বরাবরের মতো ব্যর্থ হয়েই চলেছেন। এরপর সাকিব ও মুশফিক মিলে দলকে দুই শ’ রানে নিয়ে যান। যেই দলের স্কোরবোর্ডে ২১৬ রান যোগ হয়। ১০২ বলে ১৪ চারে ৮২ রানে যান। সাকিব যেন বাউন্ডারি হাঁকানোর জন্য পাগল হয়ে যান। অশ্বিনের ক্যারিশমাহীন একটি বলে নিজের ভুলে বাজেভাবে ক্যাচ আউট হন। তার এ আউটই বাংলাদেশ দলকে পুরোদমে চাপে ফেলে দেয়। এরপর সাব্বিরও উইকেটে আসেন আর যান। বিপত্তিতে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার কাজ করেন মুশফিক ও মিরাজ। ইশান্ত, যাদবদের গতির ঝড়। বাউন্সের সঙ্গে রিভার্স সুইং। আরেকদিকে অশ্বিন ও জাদেজার ঘূর্ণি বলগুলোকে রুখতে থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন। মুশফিককে যোগ্য সঙ্গ দেন মিরাজ। মুশফিকও সাহস পান। এ দুইজনের এমন সাহস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলাতে বাংলাদেশও আশার আলো দেখছে।
×