ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পটুয়াখালীর বেলালের উদ্ভাবন

ফায়ার ফ্রি সেফটি সিকিউরিটি সিস্টেম

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ফায়ার ফ্রি সেফটি সিকিউরিটি সিস্টেম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পটুয়াখালীর মিন্টু, পুরো নাম বেলাল হোসেন মিন্টু। শহরের মুকুল হল মোড়ের বাসিন্দা। তিনি একজন উদ্ভাবক। দীর্ঘ গবেষণার পর মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আধুনিক এক অগ্নিনির্বাপণ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তিনি। কিন্তু সেই আবিষ্কার নিয়েই এখন বিপাকে পড়েছেন মিন্টু। মিন্টু ছোটবেলা থেকেই কাজ করেছেন বাবার ওয়ার্কশপে। লেখাপড়া তেমন হয়নি, বাবার সঙ্গে ওয়ার্কশপে কাজ করতে করতে প্রযুক্তি ভাবনার মধ্যে বেড়ে ওঠা। ভাবনার জগত যখন প্রসারিত হতে থাকল তখনই আবিষ্কারের নেশা পেয়ে বসল। ভাবনা থেকেই আবিষ্কার করলেন আধুনিক এক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। যাকে মিন্টু বলছেন, ফায়ার ফ্রি সেফটি সিকিউরিটি। এই আবিষ্কারের জন্য জেলা পর্যায়ের ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় মিন্টু পুরস্কারও জিতেছেন। আবিষ্কারের প্রতি আকৃষ্ট করেছেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরকে। কিন্তু এরপর আবিষ্কার নিয়ে মিন্টু দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন। মানুষের জীবন আর সম্পদকে নিরাপত্তা দেবে এমন উদ্ভাবনটি শেষ পর্যন্ত চুরিই হচ্ছে এমন আশঙ্কা তার। এখন আর যোগ্যতার মূল্যায়ন নয়, মিন্টু চান তার প্রযুক্তির অন্তত ব্যবহার হোক। ‘ফায়ার ফ্রি সেফটি সিকিউরিটি সিস্টেম’ এই পদ্ধতিতে একটি ওয়াটার গান (পানি নিভানোর জন্য প্রচলিত পদ্ধতি) এর সঙ্গে বাড়তি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ওয়াটার গান প্রেস করার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুত এবং গ্যাসের লাইন বন্ধ হয়ে যাবে। এই প্রযুক্তিতে মানুষের আগে আগুন লাগার বিষয়টি ক্যামেরায় ধরা পড়লেও বিদ্যুত এবং গ্যাসের লাইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। আগুন লাগার মুহূর্তে মানুষ না থাকলেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে। পোশাক কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান এমনকি আবাসিক ভবনেও বড় আতঙ্কের নাম আগুন। দেশের অধিকাংশ ভবনে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে। আগুনের লেলিহান শিখা শুধু স্বপ্ন নয়, পুড়িয়ে ছারখার করে জীবনও। মিন্টু বলছেন, ঢাকার পোশাক শিল্প কারখানার অগ্নিকা-ে বহু মানুষের মৃত্যুই তাকে নাড়া দিয়েছে, যা থেকেই আগুনে পোড়া মানুষকে বাঁচানোর জন্য কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় মিন্টুর এই আবিষ্কার। গত বছর পটুয়াখালির ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় মিন্টুর ‘ফায়ার ফ্রি সেফটি সিকিউরিটি সিস্টেম’ দর্শনার্থীদের জন্য তুলে ধরেন। এই সময় ফায়ার সার্ভিসের স্থানীয় প্রতিনিধিরা এই যন্ত্রের খুটিনাটি দেখেছিলেন। আরও বড় ঘটনাটি ঘটেছিল পরের দিন রাতেই। সেই রাতে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক তার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ফায়ার সার্ভিসের স্থানীয় প্রতিনিধিরা পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে মিন্টুকে খুঁজে বের করেন রাতেই। পরের দিন মহাপরিচালকের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়। ওই সময় সরাসরি ফায়ার সার্ভিসের হাতে যন্ত্রটি হস্তান্তর করতে চাননি মিন্টু। তিনি চেয়েছিলেন সরকার বা অন্য কারও পৃষ্ঠপোষকতায় এই যন্ত্রের বাজারজাত করতে। ঢাকায় এসেও তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু আগুন নিভানোর এই যন্ত্রর বিষয়ে তেমনটা কেউ আগ্রহ দেখায়নি। বাড়তি খরচ মনে করেছে সকলে। সেই সঙ্গে ভেবেছেন পটুয়াখালীর এক স্বল্প শিক্ষিত ছেলে আর কিইবা করতে পারেন! এরপর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের সঙ্গে দেখাও করতে গেছেন মিন্টু কিন্তু আর দেখা মেলেনি। অভ্যর্থনা কক্ষেই বসে থেকে হতাশ মনে চলে আসতে হয়। এ বিষয়ে অবশ্য ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মিন্টুর আশঙ্কা, ফায়ার সার্ভিস পরে মিন্টুর প্রযুক্তির মতোই একটি প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রযুক্তির সঙ্গে মিন্টুর প্রযুক্তির যথেষ্ট মিল রয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি। তিনি দাবি করেন, পটুয়াখালীতে যখন ডিজিটাল মেলায় মিন্টু তার আবিষ্কৃৃত পদ্ধতিটি দেখান তখনই ফায়ার সার্ভিসের স্থানীয় প্রতিনিধিরা তা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেন। কিভাবে তৈরি করা হয়েছে, কিভাবে কাজ করে সব কিছুই তাদের দেখিয়েও দেয় মিন্টু। ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালকের সঙ্গে মিন্টুর যোগাযোগের বিষয়টির সত্যতা রয়েছে বলে জানান পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মুফতি সালাহউদ্দিন। একটি বেসরকারী টেলিভিশনে তারই তৈরি করা প্রতিবেদন দেখেই ফায়ার সার্ভিস অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় মিন্টুকে বলে জানান তিনি। এই পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য কারখানা মালিকদের বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না। একটি কারখানায় যে স্বাভাবিক পানি সরবরাহ রয়েছে আগুন নেভানোর জন্য, ওই পানিই যথেষ্ট। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াটার পাম্প চালু হবে। লাইনের মাথায় একটি যন্ত্র থাকবে, যে যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বাভাবিক সাপ্লাই বন্ধ করে ফ্লোর টু ফ্লোরে পানি সরবরাহ করবে। আগুন নেভানোর এ পদ্ধতির সঙ্গে আরও রয়েছে অপারেটিং সংকেত, ফায়ার কন্ট্রোল ওয়াটার সাপ্লাই, পাওয়ার অফ ও জরুরী অটো ফ্যালাইট সার্ভিস। রাতের বেলা কারখানা বন্ধ করে সবাই চলে গেলেও অগ্নিকা-ের আশঙ্কা থাকে। এ জন্য প্রধান ফটক বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কারখানার বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে নিরাপদ সংকেত জ্বলবে। ফলে কারও অনুপস্থিতিতে অগ্নিকা-ের কোন আশঙ্কা থাকবে না।
×