ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পাননি তারা

এখন থেকেই নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন কূটনীতিকরা

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

এখন থেকেই নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন কূটনীতিকরা

তৌহিদুর রহমান ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া এখন থেকেই পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। তারা নতুন নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপও দেখতে চাইছেন। বিশেষ করে নতুন নির্বাচন কমিশনকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে বলেও মতামত দিয়েছেন তারা। নতুন নির্বাচন কমিশন চাইলে যে কোন ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুতও বিদেশীরা। এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া বাংলাদেশের একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার করার সুযোগ পাননি তারা। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। এখন এই নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ দেখতে চাইছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর নতুন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট মন্তব্য করেছেন, জনগণের আস্থা অর্জন করাটাই নতুন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশনকে তাদের কাজের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগের দিনই ঢাকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদ্যুন জানিয়েছিলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন চাইলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশন শক্তিশালী করতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে। তারা আগ্রহভরে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের অপেক্ষায় রয়েছেন বলেও জানিয়েছিলেন। পিয়েরে মায়াদ্যুন বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন সুনির্দিষ্ট কোন সহায়তা চাইলে ইইউ প্রস্তুত আছে। কেননা ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোন কর্মসূচী নেই। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের অংশীদায়িত্বমূলক সম্পর্ক রয়েছে। সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে বিদেশী কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের বিশেষ আগ্রহ ছিল। বাংলাদেশে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দক্ষ নির্বাচন কমিশন দেখতে চেয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশেষ করে গত ডিসেম্বরে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সুশাসন ও মানবাধিকার বিষয়ক সাব গ্রুপের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছিল, তারা বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ, নির্দলীয় ও দক্ষ নির্বাচন কমিশন দেখতে চায়। নির্বাচন কমিশন গঠন ও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন বিদেশী কূটনীতিকরা। জাতিসংঘের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে তারা আলোচনাও করতে চেয়েছিলেন। তবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে তারা অনুমতি পাননি। সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করে সরকারের নীতি নির্ধারকরা। সে কারণে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিদেশী কূটনীতিকদের আলোচনার কোন সুযোগও নেই। তবে তারা চাইলে অন্য যে কোন বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। সূত্র জানায়, আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৮ সালে। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে একটি সার্চ কমিটি গঠন করে সরকার। জাতীয় নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক দলও আলোচনা করেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শও দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন মিশনের কূটনীতিকরাও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। জাতিসংঘের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশের প্রভাবশালী বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিক এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিন্স গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জাতিসংঘের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে চান। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সরকার কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে বিষয়ে আমরা জানতে চাই। আগামী নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা খোলামেলা আলোচনা করতে আগ্রহী। তবে রবার্ট ওয়াটকিন্স এসব কথা বললেও তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার কোন সুযোগ পাননি। বাংলাদেশে বরাবরই একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান দেখতে চান কূটনীতিকরা। সকল রাজনৈতিক দল যেন এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, সেটাই প্রত্যাশা করে আসছেন তারা। এছাড়া নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন সহায়তাও দিয়ে আসছে জাতিসংঘ। সে কারণে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ আয়োজনের চেষ্টায় ঢাকায় এসেছিলেন তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তিনি সে সময় দু’পক্ষের মধ্যে একাধিক বৈঠক করে সমঝোতায় আনার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। যদিও তার সেই চেষ্টা সফল হয়নি।
×