ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার অভিযানে সন্ত্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশীরাও

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার অভিযানে সন্ত্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশীরাও

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে ॥ সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষিদ্ধের নির্বাহী আদেশ বহাল করা নিয়ে নবম সার্কিট আপীল কোর্টেও হেরে যাবার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ভার্জিনিয়া, নর্থক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, কানসাস এবং নিউইয়র্কে অভিযান চালিয়ে শত শত অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করে ‘ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের’ (আইস) এজেন্টরা। তবে আইস তথা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জিলিয়ান ক্রিস্টিনসে জানান, তারা আটলান্টা ও লসএ্যাঞ্জেলেস সিটিসহ চার সিটিতে অভিযান চালিয়েছে। কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছেÑসে ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের এই কর্মকর্তা। অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ সংবাদদাতাকে বলেন, এ ধরনের অভিযানের পর গোটা কমিউনিটিতে উদ্বেগ বেড়েছে। সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে অভিবাসীরা। ‘মেক দ্য রোড ইন নিউইয়র্ক সিটি’র মুখপাত্র ওয়াল্টার বেরিয়েন্টোস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আইসের অভিযানের পর। কেউ স্বস্তিবোধ করছেন না। গ্রেফতার আতঙ্কে তছনছ হয়ে গেছে জনজীবন।’ ওয়াল্টারসহ আরও কয়েকটি সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার অভিযান চালানো হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লসএ্যাঞ্জেলেস, ভিস্তা, পমোনা ও ক্যাম্পটন সিটি, টেক্সাসের অস্টিন, ডালাস এবং পিফ্লুগারভিলে, ভার্জিনিয়া রাজ্যের আলেক্সান্দ্রিয়া ও এনাডেল, নর্থ ক্যারোলিনার চার্লটি ও বার্লিংটন, ফ্লোরিডার প্ল্যান্ট সিটি, কানসাসের উইচিটা, ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো এবং নিউইয়র্কের হাডসন ভ্যালি এলাকায়।’ সঠিক সংখ্যা তারাও জানতে সক্ষম হননি বলে এসব সংস্থার পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়। তবে পাঁচ শতাধিক অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার হয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিবাসনের আইন লঙ্ঘন ব্যতীত অন্য কোন অভিযোগ নেই। অথচ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নির্বাহী আদেশে উল্লেখ করেছেন, গুরুতর অপরাধে লিপ্ত ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করবেন। শুক্রবার ফেসবুকে দেয়া সাপ্তাহিক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমার প্রশাসন আপনাদের নিরাপত্তা সুরক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ, সেজন্যই আমরা ভয়ঙ্কর উগ্রপন্থী, সন্ত্রাসী এবং চরমপন্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার রোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কোনভাবেই আমাদের উদার অভিবাসন ব্যবস্থাকে সন্ত্রাসী এবং বাজে লোকদের অবলম্বনে পরিণত হতে দিতে চাই না, যা আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আগামীকাল আমরা নিরাপদ, এটি নিশ্চিত করতেই আজ আমাদের সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে, সংবিধানকেও রক্ষা করতে হবে এবং আমাদের নাগরিকদের সত্যিকারের সমৃদ্ধি দিতে হবে’। ঢালাও গ্রেফতার অভিযান প্রসঙ্গে ইউএস সুপ্রীমকোর্টের প্রখ্যাত এ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী এ সংবাদদাতাকে বলেন, ‘আইসের এমন অভিযান সব সময় পরিচালিত হয়। প্রেসিডেন্ট ওবামার আট বছরে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতারের পর বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন বলে হৈ চৈ বেশি হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অভিবাসনের মর্যাদা যাদের নেই, অর্থাৎ যারা অবৈধ অভিবাসীর তালিকাভুক্ত, তাদের উচিত হবে অভিবাসনে অভিজ্ঞ এ্যাটর্নিদের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া।’ প্রসঙ্গত ২০০৯ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত আট বছর তথা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ২৮ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। স্মরণকালের আর কোন প্রেসিডেন্টের আমলে এত অধিক অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের নজির নেই। এজন্য ওবামাকে ‘ডিপোর্টার ইন চীফ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। টেক্সাস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, কানসাস এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ ৪৮ ঘণ্টার এ অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কোন বাংলাদেশী রয়েছেন বলে তারা নিশ্চিত হতে পারেননি। নিউইয়র্ক অঞ্চলে দক্ষিণ এশিয়ানদের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে আপোসহীন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দেশিজ রাইজিং আপ এ্যান্ড মুভিং’ (ড্রাম) এর সংগঠক কাজী ফৌজিয়া শুক্রবার রাতে এ সংবাদদাতাকে জানান, ‘আদালতে চপেটাঘাত খেয়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প প্রশাসন চুপিসারে অভিযান চালাচ্ছে। সমাজের সর্বস্তরে আতঙ্ক বিস্তারকারী এহেন অভিযানের প্রতিবাদে শনিবার স্থানীয় সময় বেলা দুটায় (বাংলাদেশ সময় রবিবার রাত একটা) নিউইয়র্ক সিটির ওয়াশিংটন স্কোয়ার পার্কে এক সমাবেশ হচ্ছে। ডজনখানেক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘আইস-ফ্রি এনওয়াসি’ এর ব্যানারে এই সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে।’ এদিকে সাত মুসলিম রাষ্ট্রের অধিবাসীসহ বিশ্বের মুসলিম রিফ্যুজিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার রোধে জারিকৃত ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ আপীলেও বাধাগ্রস্ত হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন আরেকটি নির্বাহী আদেশ জারি করবেন। আগামী সোম অথবা মঙ্গলবার এ আদেশ জারি হতে পারে বলে হোয়াইট হাউজের সূত্রগুলো গণমাধ্যমকে জানান। এদিকে অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার অভিযানের সংবাদে প্রবাসী বাংলাদেশীরাও আতঙ্কে রয়েছেন। নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলেস, প্যাটারসন, হ্যামট্রমিক, ডেট্রয়েট, হিউস্টন, ডালাস, শিকাগো, আটলান্টা, মায়ামি প্রভৃতি সিটিতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী রয়েছেন, যাদের অভিবাসনের মর্যাদা নেই। আমেরিকায় অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা সোয়া কোটি। এর মধ্যে লাখখানেক বাংলাদেশী রয়েছেন।
×