ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রথম ফোনালাপ

সামরিক সম্পর্ক জোরদার করবে ॥ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সামরিক সম্পর্ক জোরদার করবে ॥ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ফ্রন্টে সম্পর্ক কেমন দাঁড়াবে, তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ থাকতে পারে কিন্তু দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ক্ষেত্রে এরূপ কোন গভীর দুশ্চিন্তা নেই। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের সম্প্রসারণশীল দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্কের গতিকে টিকিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। এটিই হবে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার ও তার মার্কিন প্রতিপক্ষ জেনারেল জেমস নরম্যান ম্যাটিসের মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠেয় আলোচনায় তাদের সামগ্রিক সামরিক অংশীদারিত্বের মূল স্তম্ভ। গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পর দু’মন্ত্রীর মধ্যে প্রথম টেলিফোন সংলাপ সম্পর্কে পেন্টাগন এক বিবৃতি দেয়। এতে পেন্টাগন বলেছে, ম্যাটিস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে অর্জিত বিরাট অগ্রগতিকে ভিত্তি করে কাজ করে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের সামরিক গুরুত্ব ও বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার অগ্রগতি সাধনে ভারতের ভূমিকা তুলে ধরেন। নয়াদিল্লীতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দু’মন্ত্রী কথা বলেন, যথাশীঘ্র সম্ভব সাক্ষাত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা অংশীদারী আরও সুসংহত ও সম্প্রসারণ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। পারিকার ম্যাটিসকে একথাও বলেন, তিনি (ম্যাটিস) বিশ্বের এ অংশের সঙ্গে পরিচিত আছেন, কারণ তিনি ইতোপূর্বে আফগানিস্তানে কাজ করেছিলেন এবং পরে ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধানও ছিলেন। ঐ সংলাপে দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও বাণিজ্য উদ্যোগের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। ভারতে যৌথভাবে কি কি সামরিক সামগ্রীর উন্নয়ন ও উৎপাদন করা যায় তা চিহ্নিত করতে ২০১৩ সালে ঐ উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র এর অত্যাধুনিক ‘ভার্টিক্যাল লিফট এয়ারক্র্যাফট’ প্রোগ্রামের আওতায় পরবর্তী জেনারেশনের সামরিক হেলিকপ্টার যৌথভাবে উন্নয়নের প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে পদাতিক যুদ্ধের যানবাহন উন্নয়নও করতে চায়। ভারত এখনও ওবামার শাসন থেকে ট্রাম্পের শাসনে উত্তরণ পূর্ণ অনুধাবন করতে পারেনি। কিন্তু ভারতের মূল্যায়ন হলো, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অনেকগুলো মৌলিক বিষয়েই দু’দেশের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশেষত ট্রাম্পের তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগর ও বাণিজ্য নিয়ে চীনের নীতিতে চ্যালেঞ্জ করা সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। এক কর্মকর্তা বলেন, সামরিক যোগাযোগ তো বহাল রয়েছে, আমরা রাজনৈতিক সম্পর্কের বিস্তারিত বিষয় জানার অপেক্ষায় রয়েছি। রাজনৈতিক বিবেচনায় নির্বাচিত আরও অনেকেই মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরে যোগ দেয়ার পর আলোচনা প্রসারিত হবে। গত দশকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় ১ হাজার ৫শ’ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের অস্ত্র বিক্রির অর্ডার পেয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র স্বভাবতই ভারতের আকর্ষণীয় অস্ত্রবাজারের আরও বড় অংশ দখল করতে আগ্রহী রয়েছে। এর বিনিময়ে ভারত এর নতুন প্রতিরক্ষা শিল্প ভিত্তি জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে উন্নত মানের অস্ত্র প্রযুক্তি পেতে আগ্রহী। ঐ কর্মকর্তা বলেন, ভারত ইতোমধ্যেই অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারের বিষয়ে উৎসাহ দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এক বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে অভিহিত করায় ভারতে উন্নত প্রযুক্তি হস্তান্তরে সুবিধা হবে। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সাল থেকে ভারতের কাছে দেড় হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির ফরমায়েশ পেয়েছে। গত দু’তিন বছরে ভারতের অস্ত্র বিক্রির পরিমাণের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে ছাড়িয়ে গেল। পাকিস্তানের দাবি বানোয়াট ॥ ভারত পাকিস্তান শুক্রবার বলেছে, ভারত আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ও গোপনে পরমাণু উপাদান মজুদ করার মতো থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র উৎপাদনের জন্য একটি ‘গোপনে পরমাণু শহর’ গড়ে তুলছে। ভারত এ অভিযোগকে কল্পনাপ্রসূত ও বানোয়াট বলে অভিহিত করেছে এবং সন্ত্রাসের প্রতি দেশটির সমর্থনের রেকর্ড থেকে দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার এক চেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে। এনডিটিভি জানায়, পাকিস্তানী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে গোপন পরমাণু শহর সম্পর্কে ঐ মন্তব্য করেন। মন্তব্যে কোন প্রমাণ উল্লেখ করা হয়নি বা বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, তথাকথিত গোপন শহর নির্মাণ বিষয় পাকিস্তানের দাবি কল্পনাপ্রসূত ও বানোয়াট বলে মনে হচ্ছে। ভারত সবসময় এর আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলে। পাকিস্তান এমন এক সময় এ দাবি তুললো যখন ভারত ৪৮ দেশভুক্ত পরমাণু সাপ্লাইয়ার্স গ্রুপ বা এনএসজির সদস্যপদ লাভের চেষ্টা করছে। এ এনএসজি অত্যাধুনিক পরমাণু উপাদান ও প্রযুক্তির ওপর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। চীন এ গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে। ভারত নিউক্লিয়ার নন প্রলিফারেশন ট্রিটি বা পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বলে এ সংস্থায় প্রবেশে ভারতকে বাধা দেয়া হচ্ছে। বেজিং যুক্তি দেখিয়েছে, ভারতকে এনএসজিতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হলে পাকিস্তানকেও তা দিতে হবে। পরমাণু অস্ত্র বিস্তারে পাকিস্তানের ইতিহাস ভাল নয়। দেশটির পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচীর জন্য বেশ কয়েক বছর একটি অবৈধ নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেছেন। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া ও ইরানসহ বিভিন্ন দেশে গোপনে পরমাণু উপাদান বিক্রি করা হয়েছে।
×