স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একটা সময় ছিল যখন দিয়াগো ম্যারাডোনা মানেই যেন ফিফার কড়া সমালোচক। ফুটবল ক্যারিয়ার, ফুটবল থেকে অবসরের পর, কোচ থাকাকালীন সময়ে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাকে হরহামেশাই সমালোচনা করেছেন ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
সেই ম্যারাডোনাই এখন ফিফার গুণমুগ্ধ। সেপ ব্লাটার যুগ শেষ হওয়ার পর নতুন সভাপতি হিসেবে জিয়ান্নি ইনফান্টিনো আসার পর থেকেই যেন আগের সব বিদ্বেষ ভুলে গেছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। এখন নিয়মিতই ফিফার গুণগান করেন কিংবদন্তি ফুটবলার। ইনফান্টিনোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার কারণেই যে এমন সেটাও স্পষ্ট। এরই অংশ হিসেবে ফিফার শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ শুরুর অপেক্ষায় আছেন ম্যারাডোনা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ম্যারাডোনা নিজেই। ফিফার বর্তমান সভাপতি ইনফান্টিনোর সঙ্গে নিজের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ম্যারাডোনা নতুন দায়িত্ব পাওয়ার খবরটি দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন বিষয়টি চূড়ান্ত। অবশেষে আমার সারা জীবনের একটি স্বপ্ন পূরণ করতে পারছি। সত্যিকার অর্থে যারা ফুটবল ভালবাসে তাদের সঙ্গে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ ফিফার জন্য কাজ করব। এই নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যারা আমাকে উৎসাহিত করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। গত মাসে ফিফার বেস্ট এ্যাওয়ার্ড পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ম্যারাডোনা। বর্ষসেরা কোচ ক্লাওডিও রানিয়েরির হাতে পুরস্কার তুলে দেন তিনি। ১৯৮৬ সালে দেশকে বিশ্বকাপ জেতানো ম্যারাডোনা ফিফার সাবেক সভাপতি ব্লাটারের কঠোর সমালোচক ছিলেন। ২০১৫ সালে এক দুর্নীতির অভিযোগে সভাপতির পদ ছাড়তে হয় ব্লাটারকে। বর্তমানে ফুটবলের সবধরনের কর্মকা-ে নিষিদ্ধ সাবেক ফিফা প্রধান। এরআগে ম্যারাডোনাকে ইতালিয়ান ক্লাব নেপোলি কোচ ও দূত দুইরূপেই চেয়েছে। কোচ না হলেও দূত হিসেবে ইতালিয়ান ক্লাবটির সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন কিংবদন্তি ম্যারাডোনা। ফুটবল ক্যারিয়ারের তুখোড় ফর্মে থাকাকালীন নেপোলির হয়ে দীর্ঘ সাত বছর খেলেছেন তিনি। ফুটবলের এই জাদুকর ক্লাবটিতে খেলে তিনবার সিরি ’এ শিরোপা, উয়েফা কাপ, কোপা ইতালিয়া আর সুপারকোপা ইতালিয়ার শিরোপা জিতেছেন।
এরআগে আর্জেন্টিনা জাতীয় দল, দেশটির দ্বিতীয় সারির একটি ক্লাব, প্রিমিয়ার বিভাগে খেলা রেসিং ক্লাব এবং দুবাইয়ের আল ওয়াসলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ম্যারাডোনা। কিন্তু এই ফুটবল জাদুকর একেবারেই সফল হতে পারেননি কোচিং ক্যারিয়ারে। সম্প্রতি জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দ্বিতীয় দফা বিনা পারিশ্রমিকে দায়িত্ব পালনের ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু আর্জেন্টিনা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন তাতে রাজি হয়নি। এই সময়ে সব প্রতিবন্ধকতা যেন দূর হয়ে যাচ্ছে ম্যারাডোনার। ফিফার সঙ্গে যেমন যুক্ত হচ্ছেন তেমনি দীর্ঘ ২২ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রও তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। গত বছরের শেষভাগে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে মার্কিন সরকার। যে কারণে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মার্কিন মুল্লুকে যাওয়ার পথও উন্মুক্ত হয়েছে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়কের।
এরই নমুনা মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যারাডোনার আমন্ত্রণ পাওয়ার মধ্য দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্প্রিনিং সেমিস্টারে ছাত্রদের সামনে বক্তৃতা দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান হয়েছে আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বরকে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে যখন একের পর এক ভিসা প্রত্যাখ্যান হচ্ছে, সেখানে ম্যারাডোনার এই আমন্ত্রণ নজর কেড়েছে অনেকের। বিশ্ব ক্রীড়া, ফুটবল, রাজনীতি এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতি এসব হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাবিত বিষয়বস্তু। এর ওপরই ম্যারাডোনাকে বক্তৃতা দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান হয়েছে। হার্ভার্ডের এই আমন্ত্রণে ম্যারাডোনা যাবেন কিনা সেটা অবশ্য এখনও নিশ্চত হয়নি।