ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এ কেমন নির্মমতা!

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

এ কেমন নির্মমতা!

নারায়ণগঞ্জের একটি উপজেলার নাম রূপগঞ্জ। নামটি মনকাড়া সন্দেহ নেই। রূপ বলতে আমাদের মনে সৌন্দর্যের রূপই ভেসে ওঠে। অথচ সাম্প্রতিককালে এই এলাকাটিতে এমন সব অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটে চলেছে যা শুনলে, রীতিমতো শিউরে উঠতে হয়। সন্দেহ হয় সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রয়োগকারী সংস্থা সক্রিয় রয়েছে কিনা। কোন এলাকা অপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠলে সেই এলাকার ভাবমূর্তি বিনষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। গণমাধ্যমের কল্যাণে তার খবরাখবর মানুষের গোচরে এলে দেশবাসীর কাছে ওই এলাকা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নেয়ারও আশঙ্কা থাকে। একটি এলাকার শতভাগ অধিবাসী অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবে- এটা অসম্ভব ও অবাস্তব একটি ব্যাপার। কিছু লোকের গর্হিত কর্মকা-ের জন্য এলাকার বদনাম হোকÑ এটা কোনক্রমেই এলাকাবাসীর কাম্য হতে পারে না। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি রূপগঞ্জে নির্মমতা ও কদর্যতার একের পর এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হচ্ছে। একটি অপকর্ম যেন নৃশংসতা আর অভিনবত্বে আরেকটি অপকর্মকে ছাড়িয়ে যেতে চলেছে। নারী নির্যাতনের ভয়ঙ্কর চেহারা দেখা যাচ্ছে রূপগঞ্জে। ছিনতাই সেখানে এখন নিত্য ঘটনা। রূপগঞ্জে মঙ্গলবার রাতে ছিনতাইয়ের শিকার হন তাড়াইল এলাকার এক ব্যবসায়ী। তিনি স্থানীয় ইটভাঁটির মালিক। ছিনতাইকারীরা অস্ত্র ঠেকিয়ে তার কাছ থেকে মোটরসাইকেলসহ ১২ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। তবু রক্ষে, তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। ছিনতাইকারীরা দয়া করে তার প্রাণনাশ করেনি। অথচ অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ব্যাপার হলো রূপগঞ্জের এক রাজমিস্ত্রির স্কুলপড়ুয়া শিশুপুত্রকে অপহরণকারীরা মেরে ফেলেছে। তারা মুক্তিপণ হিসেবে শিশুটির পিতার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। কিন্তু গরিব পিতার পক্ষে পাঁচ হাজার টাকার বেশি দেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে পাষ-রা শিশুটিকে হত্যা করে। এ কেমন নির্মমতা! কিছুকাল আগে রূপগঞ্জে লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে সালমা আক্তার সুমী নামে এক গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তাতে যে কারও শিউরে ওঠারই কথা। সুমীকে এক মাস ঘরে আটক রেখে নির্যাতন চালায় স্বামী-সতীন, দেবরসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পরে তার চুল কেটে, গলায় জুতার মালা পরিয়ে ও বেঁধে রেখে অপমান এবং লাঞ্ছিত করা হয়। বিয়ের পর থেকেই সে নিপীড়নের শিকার। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার এলাকায় বিচার-সালিশ হওয়ার পর কিছুদিন নির্যাতন বন্ধ ছিল। গত এক মাস ধরে ঘরে আটকে রেখে ফের নির্যাতন চালানো হয়। প্রশ্ন হচ্ছে এত দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে এক নারীর ওপর নির্যাতন চলেছে অথচ কেউ কি থানায় অভিযোগ করেনি? আর যদি করে থাকে তাহলে পুলিশ কি ভূমিকা রেখেছিল? এমন ধারণা সঙ্গত কারণেই করতে যায় যে, রূপগঞ্জের প্রশাসন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে ধারাবাহিকভাবে এতো সব অপরাধমূলক কর্মকা- সেখানে ঘটতে পারত না। প্রশাসনের সমস্যা ও দুর্বলতা কোথায় সেটা সংশ্লিষ্ট সংস্থার উর্ধতন মহলকেই শনাক্ত করতে হবে। তারপর যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। লোকবল বাড়ানোর প্রয়োজন হলে সেটাই করতে হবে। যদি কর্মী ও কর্মকর্তা অদলবদল করা লাগে তবে সেটা করা সমীচীন। রূপগঞ্জ অপরাধীচক্রের রাহুমুক্ত হোক এটাই প্রত্যাশা।
×