ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা মুনাফার হাতিয়ার নয়

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শিক্ষা মুনাফার হাতিয়ার নয়

শিক্ষা জাতির মেরুদ-। যে কোন সমাজ এবং দেশকে সমৃদ্ধির দ্বারে পৌঁছে দিতে শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর এই শিক্ষা যেন কোন মুনাফার হাতিয়ার হয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। ৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ১৬তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্যের ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেছেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। বিশ্ব পরিসরে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অপ্রতিরোধ্য ধারাকে অনুসরণ করে শিক্ষার গুণগতমানকে আরও উৎকর্ষ করার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মনে করিয়ে দেয়া হয়, যা সময়ের চাহিদা এবং যুগের প্রয়োজন। দেশপ্রেমিক এবং উন্নত মানবসম্পদ সৃষ্টিতে শিক্ষার অনবদ্য ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই শিক্ষা যেন কোন মুনাফার হাতিয়ার হয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। উক্ত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্যের ভাষণে রাষ্ট্রপতি এই দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বিশ্ব পরিসরে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অপ্রতিহত ধারাকে অনুসরণ করে শিক্ষার গুণগত মানকে আরও উৎকর্ষ করার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মনে করিয়ে দেয়া হয়, যা দেশের যোগ্য নাগরিক গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কিংবা ডিগ্রী অর্জন সামগ্রিক উন্নয়নে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তার জন্য প্রয়োজন নিত্যনতুন উদ্ভাবনী ক্ষমতার সঙ্গে সুশিক্ষিত মানুষ তৈরি করার এক অনবদ্য প্রয়াস, যা দেশের সামগ্রিক মানোন্নয়নে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করবে। বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা দেশ এবং জাতির কল্যাণে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়, যা রাষ্ট্রপতির ভাষণে স্পষ্টভাবে উঠে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত শিক্ষার্থীরা জাতির ভবিষ্যত। এই ভবিষ্যত প্রজন্মকে জ্ঞান ও শিক্ষার আলোকে উদ্দীপ্ত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক জীবনগঠনে পরিবার, সমাজ এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদান গুরুত্বপূর্ণ। সেভাবে নিজেদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সততা, নিষ্ঠা এবং দক্ষতার সঙ্গে গড়ে তুলতে হবে। দেশের যোগ্য এবং উপযুক্ত উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে তৈরি করা ছাড়া আগামী প্রজন্মের সামনে বিকল্প কোন পথ নেই। শিক্ষা শুধু পুঁথিগত কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক গ-িতে সীমাবদ্ধ থাকে না। দেশের ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং চারিত্রিক দৃঢ়তাও শিক্ষার আবশ্যকীয় শর্ত হিসেবে বিবেচিত। আর এই লক্ষ্যেই ছাত্রছাত্রীদের উন্নয়নের গতিধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যুগ আর সময়ের দাবি। এসব উন্নয়নের সূচকের বিভিন্ন স্তরে বর্তমান প্রজন্ম নিজেদের দক্ষতা এবং যোগ্যতার প্রমাণ দেবে এ আশাও রাষ্ট্রপতির ভাষণে ব্যক্ত করা হয়। বর্তমান সময়ের সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদ উন্নয়নে গতিপথকে বিঘিœত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করা অসম্ভব নয়। দেশের সব শ্রেণীর মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় এ ধরনের সহিংস কার্যকলাপ নির্মূল করতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। বর্তমান পরিস্থিতি সেই সম্ভাবনারই দিক নির্দেশ করে, যা রাষ্ট্রপতির ভাষণে স্পষ্ট। সমাজ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করে যায় তাহলে সমস্যা খুব বেশি মাথা চাড়া দিতে পারে না। নতুন প্রজন্মের অসামাজিক কার্যকলাপে দেশ ও জাতির উদ্বেগ খাটো করে দেখার বিষয় নয়। আর এই কারণে পিতা-মাতাকে সন্তানের ব্যাপারে আরও যতœশীল, সতর্ক এবং দায়িত্ববান হওয়ার বিশেষ প্রয়োজনও রয়েছে। কারণ পরিবার থেকেই কোন সন্তানের এগিয়ে চলার পথ শুরু হয়। সন্তান যেন কোন বিপন্ন পরিস্থিতির দুর্বিপাকে পড়তে না পারে সে ব্যাপারে বাবা-মাকে আন্তরিক হতে হবে। বাংলাদেশের সাফল্য এবং সমৃদ্ধি সারা বিশ্বে একটি রোল মডেল। একে সামনে রেখে নিজেদের অদম্য স্পৃহা, অবিচলিত মনোবল, দৃঢ় প্রত্যয় আর আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে নতুন প্রজন্মকে উন্নয়নের নিরন্তর গতির সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্য আগামী প্রজন্মের জন্য একটি মাইলফলক। এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে এ আশা সকলের।
×