ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম-২০১৭

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম-২০১৭

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার আর্থ-সামাজিক কার্যক্রমের স্বীকৃতির আলোকে ২০১৭ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এই ফোরামের ৪ দিনব্যাপী সম্মেলনে সারা পৃথিবী থেকে ৩০০০ ব্যবসায়ী নেতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, স্বীকৃত আঁতেল ও সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেছেন। এ বছরে আমন্ত্রিত বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মধ্যে গণচীনের রাষ্ট্রপতি শিং জিনপিং ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে, সেভ দি চিলড্রেনের প্রধান থনিং স্মিডথ (ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী) অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অন্যান্য বিশিষ্টজনের মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী সার্ন (ইউরোপিয়ান পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র)-এর মহাপরিচালক ফেবিওলা গিয়ানতী, বিশ্ববিখ্যাত গায়িকা শাকিরা এবং আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা অর্কেস্ট্রা পরিচালিকা নেজিন খাপাল ওয়াক। আরও আমন্ত্রিত হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ওবামার মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরী ও জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব এন্টিওনিও গুতেরাস। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ফোরাম নামে অর্থনীতির (জার্মান) অধ্যাপক ক্লজ সোয়াব কর্তৃক ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার সময় ঘোষণা করা হয়েছিল যে, এটি ইউরোপীয় অর্থনৈতিক ফোরাম হিসেবে ইউরোপীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের বার্ষিক সম্মিলনী হিসেবে কাজ করবে। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি আলোচনার মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুগুলো সামনে নিয়ে আসে। এই প্রেক্ষিতে তখন থেকে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হতে থাকে। ১৯৮৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম নামায়িত হয়ে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুসমূহের পর্যালোচনার অন্যতম প্রধান সম্মিলনীতে রূপান্তরিত হয়। ডাভোস সম্মিলনীতে কয়েকটি ঐতিহাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১৯৮৯ সালে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের সভা এবং পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির নেতৃবৃন্দের মধ্যে সমঝোতা স্থাপনকারী সাক্ষাত উল্লেখ্য। ১৯৮৮ সালে এই ফোরামের আওতায় ডাভোস ঘোষণাপত্র সই করে গ্রীস ও তুরস্ক যুদ্ধের পথ থেকে সরে আসে। ১৯৯২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডি ক্লার্ক সেদেশের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন মান্ডেলার সঙ্গে মিলিত হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিমন পেরেজ ও প্যালেস্টাইন মুক্তি সংস্থার প্রধান ইয়াসীর আরাফাত কর্তৃক ডাভোসে গাজা ও জেরিকোর শাসন বিষয়ক চুক্তি প্রণয়ন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০১৪ সালে এই সম্মিলনীর প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল বিশ্বব্যাপী সমাজের পুনর্গঠন এবং সমাজ, রাজনীতি ও ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া। ২০১৫ সালে আলোচ্যসূচীতে স্থান পেয়েছিল নতুন পৃথিবীর প্রেক্ষিত। বিবর্তনশীল রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভাবনার আলোকে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ এক নতুন পৃথিবী সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন এ সম্মেলনে। ২০১৬ সালে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন বিষয়ে আলোচনায় এসেছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, অর্থবিজ্ঞানী ও শিল্পপতিগণ। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়নের আলোকে সমষ্টিগতভাবে কি করা প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। আর এ বছর ২০১৭ সালে আলোচনার বিষয় ছিল সংবেদনশীল ও দায়িত্বপূর্ণ নেতৃত্ব। সাম্প্রতিককালে কতিপয় রাষ্ট্র সীমানার মধ্যে জননিরাপত্তার প্রতিকূল ঘটনাপ্রবাহ, অভিবাসনের মাত্রা বৃদ্ধি ও দিক পরিবর্তন এবং পারমাণবিক ও ব্যাপক বিধ্বংসী সংঘাতের আশঙ্কা এবং সীমান্তবিহীন তথ্য ও বাণিজ্যের প্রবাহ এবং প্রযুক্তির সঞ্চালন সকল দেশে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও অভিগম্যতা বাড়িয়েছে। এই প্রেক্ষিতে সমকালীন নেতৃত্বের দু’প্রধান উপকরণ হিসেবে অন্তর্র্ভুক্ত হয়েছে সংবেদনশীলতা ও দায়িত্বপূর্ণতা। বিশ্বব্যাপী এই প্রেক্ষিতে কি পরিবর্তনের সারথী হিসেবে নেতারা ভূমিকা রাখবেন তার রূপরেখা প্রণয়ন করার লক্ষ্যে মূলত এ আলোচনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দেশে গণতন্ত্র স্থাপন ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে সফলভাবে প্রযুক্ত করে সারা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। পৃথিবীর দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের মূল্যায়নে তিনি বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের বিস্ময়’ হিসেবে প্রতিফলিত করেছেন। এই পটভূমিকায় ডাভোস সম্মেলনে সংবেদনশীল ও দায়িত্বপূর্ণ নেতৃত্বের পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় তাকে বিশেষভাবে সমর্থন জানিয়ে তার প্রতি বিশেষ সম্মান জানানো হয়েছে। এবার এই বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশ থেকে যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার উক্ত সম্মেলনে আমন্ত্রণ পান তেমনি চীন থেকেও আর্থসামাজিক উন্নয়নে চীনের সাম্প্রতিক সাফল্যের বিবেচনায় চীনের প্রেসিডেন্টকে প্রথমবারের মতো আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। জানা গেছে, চীনের প্রেসিডেন্ট এই সম্মেলনে সবচাইতে বেশি সংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ব্যাংক অব আমেরিকার প্রধান ব্রায়ান মইনিহান বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে অর্থ ও সম্পদের নির্বিঘেœ বহুজাতিক সঞ্চালন পৃথিবীব্যাপী প্রবৃদ্ধি অর্জনের অন্যতম শর্ত হিসেবে এই সম্মেলনে উপস্থাপন করেন। সামগ্রীকভাবে এই সম্মেলনে পৃথিবীব্যাপী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতৃত্বের সামনে ৪টি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার আহ্বান জানানো হয় : ১. বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা প্রসারণ, ২. অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন শক্তি প্রয়োগ, ৩. ধনতন্ত্রের সংস্কার এবং ৪. নতুন ও বিস্তৃত শিল্প বিপ্লব শুরু করার প্রস্তুতি গ্রহণ। প্রায় সব আলোচনাই সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও উন্নয়ন যথাক্রমে গুরুত্ব পায়। চীনের প্রেসিডেন্ট শিং জিনপিং এই সম্মেলনের তিনটি বৈঠকে অংশগ্রহণ করে সকল দেশের জন্যে সমান বাণিজ্য সুবিধা এবং ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তির বিঘœবিহীন স্থানান্তর ও গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি ডোনাল ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় বিশ্ব বাণিজ্যের মুক্ত প্রসারণের প্রতিকূলে নেয়া অবস্থানের বিপরীতে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধ কোন দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। তার কথায়, বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে দেশটির ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে বলেন, এখন থেকে যুক্তরাজ্য তার ভাষায় তার ভাগ্য ও ভবিষ্যত লক্ষ্যাদি জাতীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্ব বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিশ্বব্যাপী শৃঙ্খলা রক্ষাকরণে অধিকতর ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে। ইন্টারন্যাশনাল ব্রিজেস টু জাস্টিজ নামক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কারেন তেহে (চীন থেকে আসা মার্কিন নাগরিক) বলেন, জাতিসংঘের নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য নিচয়ের আওতায় পৃথিবীব্যাপী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব ও সুযোগ সংবেদনশীল এবং দায়িত্বপূর্ণ নেতৃত্বের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনের প্রায় সবকটি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। তার বক্তব্যে মূলত ৩টি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। এক. তৃতীয় বিশ্বের দেশ ও সমাজসমূহের বেড়ে উঠার জন্যে অধিকতর সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন। দুই. বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে উন্নত দেশসমূহ হতে উন্নয়নশীল দেশসমূহের অনুকূলে আরও বেশি অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তীয় সহায়তা আসতে হবে। তিন. বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর্মরত সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরের অযাচিত প্রশ্নে বাংলাদেশে সুন্দরবনের সন্নিকটে রামপালে স্থাপনীয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রের সম্ভাব্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, সেখানে বাস্তবায়নাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র জলবায়ু বা পরিবেশের ক্ষেত্রে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে না এবং এ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের তরফ থেকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও সর্বাধিক দূষণ দমন বা প্রতিহত করার জন্যে যথা প্রয়োজন প্রযুক্তীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। পক্ষান্তরে জানা যায়, আল গোর উত্থাপিত প্রশ্নটি বাংলাদেশের মুষ্টিমেয় শেখ হাসিনাবিরোধী ব্যক্তিবর্গের উৎসাহ ও কারসাজিতে উত্থাপিত হয়। এসব ব্যক্তি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তীয় আর্থসামাজিক উন্নয়ন যে দ্রুত গতিতে সাধারণ মানুষের জীবনে সফলতার উপাদান হয়ে এসেছে সে সম্পর্কে নিশ্চুপ থাকেন। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে সম্পূরক বক্তব্য উপস্থাপনায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, আল গোর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সমাজ সচেতন ব্যক্তি হিসেবে নিজ দেশে এই ধরনের প্রশ্নের অবতারণা করেননি। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে জানা গেছে যে, শেখ হাসিনার ব্যাখ্যামূলক বক্তব্যের পর আল গোর উত্থাপিত প্রশ্ন বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের প্রতিকূলে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি। জানা গেছে, সম্মেলনে আমন্ত্রিত সরকারপ্রধান ও অন্য দিকপালরা সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের বলে যে দেশে বা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন দ্রুত আনা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং বাংলাদেশকে এই প্রেক্ষিতে সংবেদনশীল ও দায়িত্বপূর্ণ নেতৃত্বের আওতায় নিয়ে আসা এবং এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সংবেদনশীল নেতৃত্বের প্রত্যয় উৎসারিত জনগণের অভিলাষ রাষ্ট্রীয় কর্মকা- পরিচালনায় যে প্রতিফলিত হয় সংশ্লিষ্ট সবাই বাংলাদেশে জনগণের স্বার্থরক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও জবাবদিহির দায়ে দায়বদ্ধ শাসন ব্যবস্থার সুফলের উদাহরণ হিসেবে পারস্পরিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারা স্বীকার করেছেন যে, দায়িত্বশীলতার নিশ্চয়তার বিধানে তেমনি বাংলাদেশে যুক্ত করা হয়েছে গণতান্ত্রিকতা এবং শিল্প বাণিজ্য ক্ষেত্রে গণসীমাবদ্ধ দায় বিশিষ্ট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান গড়া ও পরিচালনার ওপর উৎসাহ প্রদান। এই প্রেক্ষিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রযুক্তীয় আইন ও বিধানসমূহ প্রবর্তন এবং বিস্তৃত করার ওপর গুরুত্ব দেয়া সময়ের দাবি বলে সংশ্লিষ্ট সকলে উল্লেখ করেন। প্রান্তিকভাবে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণে প্রয়োজনে পৃথিবীব্যাপী তথ্য, প্রযুক্তি, অর্থ ও শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজন উল্লিখিত হয় এই সম্মেলনে। আলোচনার নির্যাস হিসেবে এই সম্মেলনে পৃথিবীব্যাপী জনগণের অন্তর্ভুক্তীয় উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্যে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অধিকতর মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই লক্ষ্যে বহুজাতিক সহায়তা ও অর্থায়ন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্পদের প্রবাহ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে পৃথিবীর সকল ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সমাজ, কর্মসংস্থান এবং জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের প্রত্যয়সমূহ নতুনভাবে অনুধাবনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সংবেদনশীল ও দায়িত্বপূর্ণ নেতৃত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে ২০১৭-এর ডাভোস সম্মেলনে ন্যূনপক্ষে দুটি অপূর্ণাঙ্গতা বা সীমাবদ্ধতা ওয়াকিফহাল মহলের দৃষ্টিতে এসেছে। এক. এই সম্মেলনে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কতিপয় দেশে দৃষ্ট অভিবাসন সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্টভাবে পালনীয় দায়িত্ব সম্পর্কে কোন আলোচনা অনুষ্ঠিত বা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। একটি সংবেদনশীল ও দায়িত্বপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তোলার জন্যে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের বিকল্প অন্য কিছু নেই। ডাভোস সম্মেলন ২০১৭এ বিষয়ে সুপারিশ বা সিদ্ধান্তের অনুপস্থিতি সবচাইতে বড় অপূর্ণাঙ্গতা হিসেবে ভবিষ্যতের ইতিহাসে দৃষ্ট হবে। দুই. এই সম্মেলনে তেরেসা মের ব্রেক্সিট সম্পর্কিত ব্যাখ্যাকৃত নীতি এবং (আসন্ন) ট্রাম প্রশাসন কর্তৃক উত্থাপিত মুক্ত বাণিজ্যের বিকল্পে জাতীয় স্বার্থে বাণিজ্যনীতি অনুসরণ করার প্রস্তাব বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাণিজ্য প্রসারণের অনুকূলে সংবেদনশীল ও দায়িত্বপূর্ণ ভাবধারার প্রতিফলন বলে বিবেচনীয় হতে পারে না। বস্তুত বিশ্ব বাণিজ্য ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রস্তাবকারী যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে সুসংহতকরণের প্রতিকূলে যাবে বলে ধারণা করা যায়। এক্ষেত্রে যথাযথ ইতিবাচক পরিবর্তন আনা ও পদক্ষেপ নেয়ার উদ্দেশ্যে ডাভোস সম্মেলনের এই অপূর্ণাঙ্গতা দূরীকরণে ভিন্নতর ও উচ্চতর ফোরামে ভিন্নতর এবং নতুনতর পদক্ষেপ নিতে হবে। ডাভোস সম্মেলন ২০১৭ নিয়ে বাংলাদেশে ঢাকা নগর শিল্প ও বণিক সমিতি গত ২৯ জানুয়ারি একটি সেমিনারের আয়োজন করে। এই সেমিনারে সরকার এবং শিল্প বাণিজ্যের প্রতিনিধিরা ভূ-রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান বিবর্তনের ফলে বিশ্বে বেকারত্ব বাড়ার ঝুঁকি আছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাদের সযতœ বিবেচনায় এই ধরনের বিবর্তনের সুফল অর্জন এবং বাড়াতে হলে জাতিভিত্তিক বৈষম্য ও বেকারত্ব দূর করা প্রয়োজন এবং এই লক্ষ্যে বিশ্বের সকল ক্ষেত্রের নেতৃবৃন্দকে অধিকতর উদ্ভাবনীয় ও সৃজনশীল হতে হবে। এই ক্ষেত্রে ও লক্ষ্যে সফলতার অন্যতম নিয়ামক হবে তরুণদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতকরণ (প্রথম আলো জানুয়ারি ৩০, ২০১৭)। এই সেমিনারে তুলে ধরা এ দুটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অধিকতর সক্রিয় থাকবে বলে আশা করা যায়। লেখক : সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা
×