ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২৯ ছাত্রের সিট বাতিল ॥ তদন্ত কমিটি

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

২৯ ছাত্রের সিট বাতিল ॥ তদন্ত কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর মেডিক্যাল কলেজে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে মেতেছে কতিপয় শিক্ষার্থী। কলেজ ক্যাম্পাসের পাশাপাশি হোস্টেলও চলছে মহড়া। প্রভাব বিস্তারকারীদের কথা মতো যারা চলতে চাইছেন না, তাদের উপর নামছে অত্যাচার ও নির্যাতনের খড়ক। অত্যাচারের তীব্রতা সইতে না পেরে প্রথম বর্ষের ২৩ শিক্ষার্থী হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। শুধু হোস্টেল ত্যাগ নয়, ওই শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসেও অংশগ্রহণ করেননি। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত ষষ্ঠ ব্যাচের ২৯ শিক্ষার্থীর সিট বাতিল করা হয়েছে। জানা গেছে, অধ্যবসায় এবং নিষ্ঠার সঙ্গে চিকিৎসা শিক্ষা লাভ করে দক্ষ চিকিৎসক হওয়ার শপথ নিয়ে গত ১০ জানুয়ারি যশোর মেডিক্যাল কলেজের সপ্তম ব্যাচের ৫৭ শিক্ষার্থী যাত্রা শুরু করে। তাদের মধ্যে ২৩ ছাত্রের জন্যে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া করা ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের দ্বিতীয় ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়। ওইদিনই শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে ওঠেন। একই হোস্টেলে বসবাস করেন ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হয়ে হোস্টেল জীবন শুরুর প্রথম দিনেই সপ্তম ব্যাচের ২৩ শিক্ষার্থীর চরম পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। ষষ্ঠ ব্যাচের জাফর, লিয়ন, সোহান, জুয়েল, শুভ, দ্বীপ, উবাইদুল ও প্যারিসের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তুলে নতুন শিক্ষার্থীদের নাজেহাল করার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন ২৩ শিক্ষার্থীকে গভীর রাতে কনকনে শীতের মধ্যে হোস্টেলের ছাদে ডেকে নেয়া হয়। নিয়ম-কানুন শিক্ষার নামে কয়েক ঘণ্টা খোলা আকাশের নিচে দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়। হুঁশিয়ারি দেয়া হয় সিনিয়রদের যেকোন আদেশ অমান্য করলে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এমনকি লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। প্রথম অবস্থায় নতুন শিক্ষার্থীরা কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। পরিবার-পরিজন ছেড়ে হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতে আসা শিক্ষার্থীরা সিনিয়রদের সব আদেশ মান্য করেই মানিয়ে চলতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতে পোষাচ্ছিল না সিনিয়রদের। শুধু সম্মান করলে চলবে না, সিনিয়রদের আবদারও মেটাতে হবে জুনিয়রদের! প্রতিনিয়ত চলতে থাকে র‌্যাগিং। কারণে-অকারণে জুনিয়রদের ডেকে কটু কথা শোনানোসহ বিভিন্ন অশালীন কার্যকলাপে জড়িত হওয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়। এতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন নতুন শিক্ষার্থীরা। লেখাপড়া তো দূরের কথা হোস্টেলে এক দ- অবস্থান করাও তাদের জন্য অসনীয় হয়ে ওঠে। বিষয়টি কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার এএইচএম মাহবুব উল মওলা চৌধুরী ও হোস্টেল সুপার সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার রবিউল ইসলাম অবহিত হলেও সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে নতুন শিক্ষার্থীরা সিনিয়রদের অত্যাচার রুখতে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। এতেই উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ৬ষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উপর রাতভর শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করে। পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে না থাকায় ৭ম ব্যাচের ২৩ শিক্ষার্থী ৮ ফেব্রুয়ারি সকালে হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন কলেজ অধ্যক্ষকে মোবাইলে জানিয়েছেন কেন হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। অধ্যক্ষকে ফোন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝতে পেরে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হোস্টেল সুপারদের নিয়ে জরুরী বৈঠক করেন অধ্যক্ষ। হোস্টেলও পরিদর্শন করেন। ৈৈবঠকে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার এএইচএম মাহবুব উল মওলা চৌধুরীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার শ্যামল কৃষ্ণ সাহা, সহকারী পরিচালক ডাক্তার একেএম কামরুল ইসলাম বেনু, একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ডাক্তার শেখ ছাইদুল হক, ইন্টার্ন ডাক্তার কো-অর্ডিনেটর ও অর্থো-সার্জারি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার এমএ শামসুল আরেফিন, ইএনটি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার আক্তারুজ্জামান, সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার এনকে আলম, হোস্টেল সুপার সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার এএইচএম আব্দুর রউফ, ডাক্তার রবিউল ইসলামসহ সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ। বৈঠকে সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় ঘটনা তদন্তের জন্যে কমিটি গঠনের ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের হোস্টেলের সিট বাতিলের। সিদ্ধান্ত মোতাবেক কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার এএইচএম মাহবুব উল মওলা চৌধুরী ৭ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এ কমিটিতে সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার আক্তারুজ্জামানকে আহ্বায়ক ও সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার দ্বীন উল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি তদন্তসম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের নামে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে হোস্টেল ছাড়া করার দায়ে অভিযুক্ত ৬ষ্ঠ ব্যাচের ২৯ শিক্ষার্থীর হোস্টেলের সিট বাতিল করে আদেশ জারি করা হয়েছে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যে তাদের হোস্টেল ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×