ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শতক করলেন ঋদ্ধিমানও

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শতক করলেন ঋদ্ধিমানও

স্পোর্টস রিপোর্টার, হায়দরাবাদ থেকে ॥ খুব সাদা-সিদে তিনি। কোন অহঙ্কার নেই। সবসময় চুপচাপ থাকেন। দলে থাকলেও কিছু নিয়েই ভাবেন না। দলে না থাকলেও ভাবনাহীনই থাকেন। শতক করলেও নেই তেমন উদযাপন। কোন উচ্চবাচ্য। খারাপ করলেও থাকে মুখে কুলুপ। তার লক্ষ্য একটাই, যেভাবেই হোক পরিশ্রম করে, কষ্ট করে নিজেকে নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতায় রাখবেন। ভারতের এ মুহূর্তে সেরা উইকেটরক্ষক তিনি। টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলির ভরসার পাত্রও। তিনি ঋদ্ধিমান সাহা। হায়দরাবাদ টেস্টে যিনি শতক করে দেখিয়েছেন। ১৫৫ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ১০৬ রান করেছেন। ৮৬ বলে ৫০ রান করেছেন। আর ১৫৩ বলে শতক করেছেন। তার শতকের আশাতে কোহলিও বসে ছিলেন। কখন ঋদ্ধিমান শতক করবেন, আর তিনি ইনিংস ঘোষণা দেবেন। তাই করলেন কোহলি। ঋদ্ধিমান অবশ্য এত রান করতে পারতেন না। যদি ৪ রানে থাকার সময় উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীম স্ট্যাম্পিং করতে পারতেন। কিন্তু স্ট্যাম্পিং করতে একটু সময় বেশি নেয়ায় বেঁচে যান ঋদ্ধিমান। ৪৭ রানের সময়ও একবার রানআউট হওয়া থেকে বাঁচেন। মুমিনুল রানআউট করতে পারেননি ঋদ্ধিমানকে। সেই যে দুইবার ‘নতুন জীবন’ পান। টেস্টে দ্বিতীয় শতকই তুলে ফেলেন। যখন তিনি ৯৮ রানে থাকেন, এমন মুহূর্তে তাইজুল ইসলামের বলে ছক্কা হাঁকিয়েই শতক করেন ঋদ্ধিমান। আর ৬ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করতেই ইনিংস ঘোষণা করে দেন কোহলি। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন এ উইকেটরক্ষক কাম ব্যাটসম্যান। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রবেশের আগে তিনি অনুর্ধ-১৯ ও অনুর্ধ-২২ দলে খেলেন। ২০০৬-০৭ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফি প্রতিযোগিতায় আসামের বিপক্ষে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। কিন্তু ঐ খেলায় তিনি ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। পরের খেলায় ব্যাটিংয়ে নামলেও তিনি শূন্য রানে আউট হন। ২০০৭-০৮ মৌসুমে হায়দরাবাদের বিপক্ষে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। বাংলার ১৫তম খেলোয়াড় হিসেবে তিনি অভিষেকেই শতরান হাঁকানোর গৌরব লাভ করেন। দুর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করায় ২০০৮ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। ইসরাইলের আমন্ত্রিত একাদশের বিরুদ্ধে তিনটি সীমিত ওভারের খেলায় অংশগ্রহণের জন্য তাকে ভারতের এ দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দীনেশ কার্তিকের বিপরীতে সংরক্ষিত উইকেটকিপার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে অংশ নেয়ার জন্য ২০১০ সালে ঋদ্ধিমানকে ভারতের টেস্ট দলে ডাকা হয়। প্রথম টেস্টে ভিভিএস লক্ষ্মণের আঘাতপ্রাপ্তি ও অনুশীলনে রোহিত শর্মা আহত হওয়ায় মাঠে নামার সুযোগ পান তিনি। ২০১০ সালে নাগপুরে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে অভিষেক ঘটে তার। প্রথম ইনিংসে শূন্য ও দ্বিতীয় ইনিংসে দর্শনীয় ৩৬ রান করেন। ভারত ঐ খেলায় ইনিংস ও ৬ রানে পরাজিত হয়েছিল। তখন দল থেকে ছিটকে পড়েন ঋদ্ধিমান। আবার ২০১৪ সালে খেলেন। আবার বাদ পড়েন। আবার ২০১৫ সালে খেলেন। সেই থেকে ঋদ্ধিমান যেন দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার হয়ে উঠেছেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি টেস্ট থেকে অবসরের পর টেস্টে ঋদ্ধিমানের বিকল্প এখন কেউ নেই। ওয়ানডে ও টি২০তে ঋদ্ধিমানকে নিয়ে এত ভাবনা করা হয় না। কিন্তু টেস্টে তিনি উইকেটের পেছনের দায়িত্বে এখন এক ও অদ্বিতীয় হয়ে উঠেছেন। মাঝে চোট পেয়ে ছিটকে পড়েছিলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে আবার ফেরেন। ফিরেই করেন শতক। বাংলাদেশের বিপক্ষে সুযোগ পাওয়ার পর ঋদ্ধিমান বলেছিলেন, ‘র‌্যাঙ্কিংয়ের কথা ভাবলে কাগজে-কলমে তারা (বাংলাদেশ) সহজ প্রতিপক্ষ। কিন্তু মাঠে নামার আগে তাদের হালকাভাবে নিচ্ছি না আমরা। এটা আসলে নির্ভর করেছে পরিস্থিতির ওপর। আমি পরিস্থিতি অনুযায়ী লড়াই করব।’ ঋদ্ধিমান লড়াই করলেন এবং শতকও তুলে নিলেন। এখন পর্যন্ত ২১ টেস্ট খেলেছেন ঋদ্ধিমান। ৩২.২৬ গড়ে ৮৩৯ রান করেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৫ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো খেলতে নেমেছেন। তাতেই শতক হাঁকিয়েছেন। ১০৬ রানের যে ইনিংসটি খেলেছেন, এটিই ঋদ্ধিমানের সেরা ইনিংস। বাংলাদেশ-ভারত হায়দরাবাদ টেস্টে মুরালি বিজয় ও বিরাট কোহলির পর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক করেন ঋদ্ধিমান।
×