ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোহলির ‘বিরাট’ ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কোহলির ‘বিরাট’ ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার, হায়দরাবাদ থেকে ॥ মুশফিকুর রহীম নিজেই বলেছিলেন, ‘নিঃসন্দেহে কোহলি এ মুহূর্তে সেরা ব্যাটসম্যান। দ্বিশতক, এরও বেশি রান করার ক্ষমতা আছে।’ সঙ্গে জানিয়েছিলেন, ‘তবে একটি খারাপ বলই যথেষ্ট। খুব দ্রুত আউটও হতে পারে।’ এমন এক ব্যাটসম্যানকে আউট করার সুযোগ পেয়েও করতে পারলেন না মুশফিক। স্ট্যাম্পিং করার এত সহজ সুযোগ ছিল। অথচ হাতছাড়া করলেন। আর মুশফিকের এ ভুলে দ্বিশতকও করে ফেললেন কোহলি। দ্বিশতক বা তার বেশি রান করার কথা যে বলেছিলেন মুশফিক, সেটিই প্রমাণ হলো। ইতিহাসের পাতাতেও নাম লেখালেন কোহলি। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা চার সিরিজেই কোন না কোন টেস্টে দ্বিশতক করার ইতিহাস এখন কোহলির নামের পাশে যুক্ত হয়ে গেছে। যেখানে কোহলি একাই আছেন। টানা তিন টেস্ট সিরিজে ডাবল শতক করা অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ডন ব্র্যাডম্যান ও ভারতের ‘দ্য ওয়াল’ খ্যাত রাহুল দ্রাবিড়কেও ছাড়িয়ে গেলেন কোহলি। শেষ পর্যন্ত দলের ৪৯৫ রানের সময় ২৪৬ বলে ২৪ চারে ২০৪ রান করে আউট হন কোহলি। ৫৪ টেস্টের ক্যারিয়ারে চতুর্থ দ্বিশতক করেন কোহলি। স্কোরবোর্ডে ৫০০ রান হতে যখন ৫ রান দরকার, এমন মুহূর্তে তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণি বলে এলবিডাবলিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন কোহলি। অথচ তিনি দ্বিশতকও করতে পারতেন না। যদি মুশফিক স্ট্যাম্পিং মিস না করতেন। তাইজুলের বলেই ১৬৫ রানে থাকা কোহলিকে যদি আউট করার সহজ সুযোগ হাতছাড়া না করতেন। তখন ভারতের স্কোরবোর্ডে রান ছিল ৪৪১। তাইজুল বল ছোড়েন। কোহলি সবসময়ই ব্যাটিংয়ে চরম আত্মবিশ্বাসী থাকেন। বল ঘুরবে না, এ ভেবেই এককদম এগিয়ে গিয়ে ফ্লিক করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাইজুল দুর্দান্ত বুদ্ধিমত্তা দেখান। কোহলি আগে বাড়বেন বুঝতে পেরে অফ স্ট্যাম্পের একটু বাইরে বলটিকে ছোড়েন। কোহলি অনেকটা এগিয়ে যান। বল তার ব্যাটে না লাগায় বল উইকেটে পড়ে ঘূর্ণি খেয়ে মুশফিকের হাতে যায়। স্ট্যাম্পে বল লাগিয়ে দিলেই, বেলস পড়লেই এ মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানটি আউট হয়ে যাবে। কিন্তু মুশফিক করলেন কি, একবারেই উইকেটে বল লাগাতে পারলেন না। বল মুঠোবন্ধী করে উইকেটে লাগানোর জন্য হাত বাড়ালেন। কিন্তু কি হলো, উইকেট তার গ্লাভস ছুঁলো না। দ্বিতীয়বার যখন উইকেটে গ্লাভস ছোঁয়ালেন ততক্ষণে কোহলি ‘পপিং ক্রিজে’ কোহলি ব্যাট ছুঁয়ে দিলেন। হায় মুশফিক এমন আউটও করতে পারলেন না। সবাই যেন তখন আফসোসে পুড়েন। সবার মুখে একই প্রশ্ন। এ কি করলেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক? বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানকে আউট করার সুযোগ এমনভাবে হাতছাড়া করলেন? সবার মাথায় তখন হাত। হায়দরাবাদ রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রতিটি দর্শকের মাথাতেও তখন হাত। স্বাভাবিকভাবেই কোহলি আউট হবেন, সেটি ভারত দর্শকরাও চান না। কিন্তু মুশফিক এতটাই সহজ সুযোগ হাতছাড়া করলেন যে, ভারতের দর্শকরাও মাথায় হাত তুলে দিলেন। এমন ব্যাটসম্যানকে সুযোগ দিলে কি আর তা কাজে না লাগান। কোহলি তাই আর কোন সুযোগই দিলেন না। এগিয়ে যেতে থাকলেন দ্বিশতকের দিকে। ধীরে ধীরে তাইজুলের বলেই কাভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দ্বিশতক পূরণ করলেন কোহলি। এ দ্বিশতক করে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা চার টেস্ট সিরিজে দ্বিশতক করার ইতিহাসও গড়ে ফেললেন কোহলি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত বছর জুলাইয়ে দ্বিশতক করা দিয়ে শুরু। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই দ্বিশতক করেন। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে দ্বিশতক করে ব্র্যাডম্যান ও দ্রাবিড়ের সমকক্ষ হন। শুক্রবার বাংলাদেশ-ভারত হায়দরাবাদ টেস্টের দ্বিতীয়দিনে দ্বিশতক করে তাদেরও ছাপিয়ে যান। শুধু কি তাই। ভারতের হয়ে প্রথম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি দ্বিশতকও (৪টি) করেন কোহলি। আর ভারত ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬টি দ্বিশতকক করা বিরেন্দর শেবাগ, শচীন টেন্ডুলকর ও ৫টি দ্বিশতক করা রাহুল দ্রাবিড়ের পরই কোহলির অবস্থান (৪টি দ্বিশতক)। তার সঙ্গে অবশ্য আছেন ভারতের সেরা ওপেনার সুনীল গাভাস্কারও। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের স্টিফেন ফ্লেমিং (২০০৪ সালে ২০২ রান), গ্রায়েম স্মিথের (২০০৮ সালে ২৩২ রান) পর তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে দ্বিশতক করেন ভারতের বর্তমান সেরা এ ব্যাটসম্যান। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে শচীন টেন্ডুলকরের (২০০৪ সালে ২৪৮) পর দ্বিতীয় ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিশতক করেন কোহলি। এক ক্রিকেট মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ১১৬৮ রানও করেন তিনি। বিরেন্দর শেবাগকে (১১০৫) পেছনে ফেলে দেন। হায়দরাবাদ টেস্টের প্রথমদিনেই শতক করে ফেলেছিলেন কোহলি। অপরাজিত ১১১ রান করেছিলেন। তখন শেবাগকে টপকে যেতে ৩১ রানের দরকার ছিল। তাতো করেছেনই, আরও ৬৩ রান বেশি করেছেন। আগেরদিনের সঙ্গে আরও ১০৩ রান যোগ করে আউট হন কোহলি। কোহলি আবার চতুর্থ উইকেটে অজিঙ্কেয়া রাহানের সঙ্গে যে ২২২ রানের জুটি গড়েন, সেটি বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে ভারতের সেরা জুটিও হয়। ভারতের হয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ২০০ রানের বেশি করা জুটিতেও সেরা জুটি এখন কোহলি ও রাহানের জুটিই। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার মাইক হাসি বলেছিলেন, ‘কোহলি এখন যে কোন দলের জন্যই এক নম্বর শত্রু।’ বাংলাদেশের জন্যও শত্রু হয়েই ধরা দিলেন কোহলি। প্রথমদিন চেতশ্বর পুজারা ও মুরালি বিজয়ের জুটি যখন ১৮০ রানে ভাঙ্গে তখন ব্যাট হাতে নেমে ভারতের স্কোরবোর্ডে ৪৯৫ রান করা পর্যন্ত উইকেট আঁকড়ে থাকেন কোহলি। সেটি হত না। যদি মুশফিক স্ট্যাম্পিং করতে পারতেন। তার ভুলেই কোহলি দ্বিশতক করে একাধিক রেকর্ড গড়ার সঙ্গে ইতিহাসও গড়লেন।
×