ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় ঢাকায় রেন্ট-এ-কারের রমরমা ব্যবসা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় ঢাকায় রেন্ট-এ-কারের রমরমা ব্যবসা

বিডিনিউজ ॥ ক্ষমতাসীন দল সংশ্লিষ্ট এক সংগঠনের স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় রাজধানীর উত্তরায় চলছে রেন্ট-এ কারের রমরমা ব্যবসা। রাস্তার দু’পাশের নো পার্কিং জোনে গাড়ি রেখে অনুমোদনহীনভাবে চলছে এই ব্যবসা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আর থানা-পুলিশকে ম্যানেজ করে তারা গাড়ি চালাচ্ছেন। আওয়ামী মোটর চালক লীগের স্থানীয় একজন নেতা বলেছেন, তিনি টাকা নিয়ে পুলিশকে দেন, তবে নিজে নেন না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুই পাশে সারি করে রাখা গাড়ির কারণে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর সড়কে দিন-রাত যানজট লেগে থাকে। পারত পক্ষে গাড়ির যাত্রী ও পথচারীরা ওই সড়ক এড়িয়ে চলেন। বৃহস্পতিবার ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে রেন্ট-এ কারের বেশ কয়েকটি দোকান। কাঠ, বাঁশ আর টিন দিয়ে দোকান তুলে ছোট একটি টেবিলে ভিজিটিং কার্ড সামনে নিয়ে যাত্রীর আশায় বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। ট্রেড লাইসেন্স না থাকায় তাদের স্থায়ী দোকান নেই। প্রয়োজনও নেই। উত্তরা মডেল থানা আওয়ামী মোটর চালক লীগের সভাপতি খোকন ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে তারা নির্বিঘেœ ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখানে ব্যবসা করতে কাগজপত্র লাগে না, ২০-২৫ হাজার টাকা আর অন্য ব্যবসায়ীদের সাথে বোঝাপড়া হলেই টং দোকান দিয়ে বসা যায়। আসল ব্যাপারটা হলো নেটওয়ার্কিং’। তিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি। ২০-২৫ হাজার টাকা কাকে দিতে হয় জানতে চাইলে তিনি আওয়ামী মোটর চালক লীগের দুই নেতার কথা বলেন। এরা হলেন হাবিব ভাই ও খোকন ভাই। সব দিক তারাই দেখেন। মাসিক একটা নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয়। এখানে সবাই ভাই ভাই, দোকান রাখতে হলে সবার সঙ্গেই খাতির রাখতে হয় বলে তিনি জানান। ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন করলে ওই ব্যবসায়ী তাচ্ছিল্যের সুরে বলেন, ‘ ট্রেড লাইসেন্স আর এমন কি! দুই-আড়াই হাজার টাকা দিলেই ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যায়।’ এভাবে সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করেই মাসে কোটি টাকার ব্যবসা হয় বলে জানালেন শামীম নামের এক ব্যবসায়ী। ওই সড়কে তার দোকান না থাকলেও গাড়ি রাখতে কোন সমস্যা হয় না। শামীম নামে আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, হাবিব ভাইরা সব ম্যানেজ করেন। রেজা নামের আরেক ব্যবসায়ীর ভাষ্য, কেবল তারাই নন, অনেক ‘গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাও’ এভাবে রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে আওয়ামী মোটর চালক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানের অফিসে গিয়ে সেখানে ‘সততা রেন্ট-এ কার’ এর মালিক ছগির হোসেনকে পাওয়া যায়। তিনি নিজেকে হাবিবের ‘ছোট ভাই’ বলে পরিচয় দেন। ছগির বলেন, ব্যবসা করতে চাইলে হাবিবুর রহমান ‘সব ব্যবস্থাই করে দেবেন’। তবে ‘লাইন-ঘাট’ জানা থাকা লাগবে। রাস্তায় কার অনুমতি নিয়ে গাড়ি রাখা হয় জানতে চাইলে একটি টালি খাতা বের করেন তিনি। সেটি দেখিয়ে বলেন, ‘প্রতি মাসে থানায় গাড়ি প্রতি ২০০ টাকা করে দেই আমরা। তাছাড়া সবাই সবাইকে সাহায্য করে। এজন্য এই ব্যবসায় ট্রেড লাইসেন্স কোন ব্যাপার না।’ অফিসে না পেয়ে হাবিবুর রহমানকে ফোন করলে তিনি অনুমোদনহীন রেন্ট-এ কার ব্যবসায় জাড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও টাকা লেনদেনে হাত থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গাড়ি আর দোকানের জন্য পুলিশকে ‘কিছু টাকা দিতেই হয়’ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়ে তিনি সেই টাকা থানায় দেন, নিজে কিছু নেন না। তিনি বলেন, ‘আমি কোন টাকা খাই না, দোকানের জন্য, গাড়ি রাখার জন্য থানায় কিছু টাকা দিতে হয়। তবে কাকে টাকা দিই, কোন থানায় তা বলব না।’ তিনি দাবি করেন, ওই রাস্তায় যত গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা দেখা যায়, তার বেশিরভাগই বিভিন্ন অফিসের গাড়ি, রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ীদের নয়। অনুমোদনহীন রেন্ট-এ কারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুলিশের টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আলি হোসেন বলেন, হাবিবুর রহমানকে তিনি চেনেন না। তিনি বলেন, ‘টাকা-পয়সার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই রেন্ট-এ কারের দোকানগুলো উচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে। সিটি করপোরেশন এগিয়ে এলে আমরা দ্রুত সেগুলো সরিয়ে ফেলব, এ ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স রয়েছে।’ পুলিশের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন জোন-১ এর নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন বলেন, বেশ কয়েকদফা রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। পরে তারা আবারও বসেছে। তিনি বলেন, ‘এরা তো ভ্রাম্যমাণ, ট্রেড লাইসেন্স পাবে কি করে। তাদের আমরা উচ্ছেদ করি, আবার বসে। সামনে আবার উচ্ছেদ করব।’ কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগের প্রধান রবীন্দ্র বড়ুয়াও বলছেন, অনুমোদনহীন রেন্ট-এ কারের ব্যবসা বন্ধে তারা সচেষ্ট। তার বক্তব্য, ‘এগুলো সব অবৈধ দোকান, ব্যবসাও অবৈধ। সিটি কর্পোরেশন যে কোন সময় এগুলো উচ্ছেদ করবে।’
×