ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও ৬৪৬ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

এখনও ৬৪৬ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ, হায়দরাবাদ থেকে ॥ হায়দরাবাদ টেস্টের দ্বিতীয়দিন শেষ হলো। দিনটি শেষ হতেই তাড়াহুড়ো করে ড্রেসিংরুম থেকে বের হয়ে উইকেটের কাছে গেলেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে। গভীর মনোযোগে উইকেট দেখতে লাগলেন। তখন কি ভাবছিলেন কোচ? এটাই কি যে, কি হয়ে গেল। নাকি ভাবছিলেন, কিভাবে এই উইকেটে এখন ইনিংস হার এড়ানো যায়। এখনও ভারত থেকে ৬৪৬ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। আর ফলোঅন এড়াতেই এখনও লাগবে ৪৪৭ রান। প্রথম ইনিংসে ভারত এত বেশি রান করেছে যে আর কোহলি এ্যান্ড গংকে ব্যাটিংয়ে নাও নামা লাগতে পারে। প্রথমদিন মুরালি বিজয় ১০৮ রান করেছিলেন। বিরাট কোহলিও ১১১ রানে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয়দিন কোহলি আরও ৯৩ রান যোগ করেন। দ্বিশতক করেন। ২০৬ রান করে আউট হন। শেষে গিয়ে ঋদ্ধিমান সাহাও অপরাজিত ১০৬ রান করেন। এক দ্বিশতক ও দুই শতকে ভারতের স্কোর যখন ৬ উইকেটে ৬৮৭ রান, তখন ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাট থেকেও আসে ৬০ রান। বাংলাদেশ স্পিনার তাইজুল ইসলাম ৩টি ও মেহেদী হাসান মিরাজ ২টি উইকেট নেন। দিনের শেষভাগে এসে ১৪ ওভার থাকতে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামে। তাতেই সৌম্য সরকারের উইকেট হারিয়ে বসে। তামিম ইকবাল (২৪*) ও মুমিনুল হক (১*) মিলে এখন ব্যাটিং করছেন। এ দুইজন দলকে ৪১ রানে নিতেই দিন শেষ হয়ে যায়। এখন যা করার ব্যাটসম্যানদেরই করতে হবে। কিন্তু কতটা ভাল করতে পারবেন তামিম, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, সাকিব, মুশফিক, সাব্বিররা? রানের পাহাড় মাথায়। চরম চাপও আছে। যেভাবে হোক, আগে ফলোঅন এড়ানোর ভাবনাতেই ব্যাটসম্যানরা মশগুল। কিন্তু একদিকে ভুবনেশ্বর কুমার, ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদবের গতি; আরেকদিকে বিশ্ব সেরা স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে রবীন্দ্র জাদেজার ঘূর্ণি আছে। যেভাবে দ্বিতীয়দিনেই উইকেটে স্পিন ভেল্কি দেখা গেছে, তাতে তো আজ অশ্বিন ও জাদেজাকে সামলাতেই হিমশিম খেতে হবে। এরসঙ্গে ভুবনেশ্বরের ‘রিভার্স সুইং’, ইশান্ত এবং যাদবের গতি ও বাউন্স তো আছেই। সৌম্য (১৫) যে দিন শেষ হওয়ার দুই ওভার আগে ৩৮ রানের সময় আউট হয়েছেন, সেটি তো যাদবের ১৪২ কিলোমিটার গতির বলেই। তবে এখানে যাদবের কৃতিত্ব প্রশংসনীয়। যাদব বল ছোড়ার পর সৌম্য রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেললেন। বল ব্যাটে হালকা ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার হাতে পড়ল। ঋদ্ধিমান, মিড অনে থাকা পুজারা, মিড উইকেটে থাকা বিজয়, কাভারে থাকা কোহলি; কেউই আউটের আবেদন জানাননি। শুধু যাদব আউট চান। আম্পায়ার না সূচক ইঙ্গিত দেন। কিন্তু যাদবের এতটাই বিশ্বাস ছিল যে, নাছোড় বান্দা। ‘রিভিউ’ নেন। আর তাতেই সৌম্য আউট হয়ে যান। সৌম্য গতির কাছে হার মেনেছেন। তামিম ও মুমিনুলও গতি আর বাউন্সের বেড়াজালে পড়েন। সেই সঙ্গে কোহলির আক্রমণাত্মক উইকেট সাজানো তো আছেই। তামিম ও মুমিনুল তা থেকে নিজেদের আপাতত রক্ষা করেছেন। কিন্তু আজ সকালের গুরুত্বপূর্ণ সেশনেও কি তা করা সম্ভব হবে? যদি হয়, তাহলে তো ভালই। কিন্তু না হলেই বিপদ ঘনিয়ে আসবে। বাংলাদেশের সামনে রানের পাহাড়। যে পাহাড় মুশফিকের হাত থেকে দ্বিতীয়দিন একবার করে ‘নতুন জীবন’ পাওয়া কোহলি ও ঋদ্ধিমান দিয়ে গেছেন। দ্বিশতক করার আগে কোহলি ও শতক করার বহু আগে ঋদ্ধিমান ‘নতুন জীবন’ পেয়ে আরও উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। ২৪৬ বলে ২০৪ রান করে কোহলি আউট হন। ১৫৫ বলে অপরাজিত ১০৬ রান করা ঋদ্ধিমান অপরাজিত থাকেন। সঙ্গে কোহলি ও ৮২ রান করা রাহানের চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের হয়ে করা ২২২ রানের জুটি এবং ঋদ্ধিমান ও অপরাজিত ৬০ রান করা জাদেজার সপ্তম উইকেটে করা ১১৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিই ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে। ঋদ্ধিমানের শতকের পর কোহলি আর অপেক্ষা করেননি। ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছেন। এমন সময় ইনিংস ঘোষণা করেছেন, যখন রানের চূড়ায় উঠে গেছে ভারত। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের সর্বোচ্চ স্কোর গড়া হয়েছে। এমনকি হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামেও সর্বোচ্চ স্কোর গড়েছে ভারত। এখনও বাংলাদেশ যে রানে পিছিয়ে আছে তা করতেই তো বারোটা বেজে যাবে। তার আগে তো ফলোঅন এড়াতে হবে। ফলোঅন এড়াতেই লাগবে ৪৪৭ রান। ইনিংস ব্যবধানে হার রুখতে হলে আগে এই রান করতে হবে। এরপর টেস্টে কি করবে বাংলাদেশ, তা সময়ই বলবে। তবে এই রান না করতে পারলেই আবার ব্যাটিংয়ে নামতে হবে দ্বিতীয় ইনিংসে। ৪৪৭ রান করতে না পারা মানে হচ্ছে কম করে হলেও ২৫০ রানে পিছিয়ে থাকা। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের দুর্দশা সবারই জানা। মুহূর্তেই ইনিংস ধসে পড়ে বাংলাদেশের। তা হলেই তখন ইনিংস হারের খপ্পরেই পড়ে যাবে। এখন দেখা যাক, বাংলাদেশ কি করতে পারে। প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০০০ সাল থেকে টেস্ট খেলা শুরু করে ২২টি দ্বিপাক্ষিক সফর ও ৯৭টি টেস্ট খেলে এবার ২৩তম সফর ও ৯৮তম টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। সেটি খেলতে পারছে ভারতের মাটিতে। যেখানে এরআগে কখনই টেস্ট খেলা হয়নি। সেই টেস্টটিতে বাংলাদেশ সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করুক, এটিই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু সেই প্রত্যাশার সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটের এক নম্বর দল ভারত যে রানের বস্তা বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের কাঁধে ঝুলিয়ে দিয়েছে সেই বস্তা এখন হালকা করতে হবে আগে। তা হলেই না ভাল কিছু মিলবে। না হলে যা ভাবনা এসে গেছে সবার ভেতর, সেই ইনিংস হারের জ্বালাই ভোগ করতে হবে।
×