ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দিনেশ মাহাতো

ঘুরে আসুন চায়ের দেশে

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঘুরে আসুন চায়ের দেশে

চা শিল্পের জন্য শ্রীমঙ্গলের সুনাম বিশ্বব্যাপী। চা বাগান মানেই অপার্থিব মুগ্ধতা ছড়ানো এক অস্তিত্ব। চা বাগান মানেই সবুজের অবারিত সৌন্দর্য। যত দূর চোখ যায় কেবল সবুজের হাতছানি। সারি সারি চা বাগান, আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথ আর ঘন সবুজ আরণ্যের অপরূপ সোন্দর্য যে কাউকেই আকৃষ্ট করে। তাই তো নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল দেশী-বিদেশী পর্যকটদের পদচারণায় বছরের প্রতিটি দিন থাকে মুখরিত। শ্রীমঙ্গল মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা হলেও সারাদেশে এর পরিচিতি আছে চা বাগান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। ‘শ্রী’ অর্থ সুন্দর এবং ‘মঙ্গল‘ অর্থ শান্তি। সুন্দর ও শান্তির দেশ শ্রীমঙ্গল। নামের সঙ্গে কি যথার্থ মিল। সুনীল আকাশ, দিগন্তজুড়ে বিশাল হাওড়, সাজানো সবুজ চা বাগান আর সুউচ্চ সবুজ পাহাড়ী টিলার মনোরম দেশ শ্রীমঙ্গল। কিছুদিন আগেই আমার সেখানে যাবার সুযোগ হয়েছিল। শহরের কোলাহল ও কর্মব্যস্ত জীবন থেকে মুক্ত হয়ে একটু প্রশান্তি খোঁজার জন্যই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলকেই বেছে নিয়েছিলাম। যদিও অল্প সময়ের জন্য তার পরেও সেখানকার সৌন্দর্য মতো অজ্ঞের লেখায় ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব। শ্রীমঙ্গলের চমৎকার বর্ণনা ফুটে উঠেছে কবি ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক নৃপেন্দ্র লাল দাশের একটি কবিতায়- চা-পাতার আঁচল ছড়ানো একটি আবাসস্থল/ অনেক প্রাণের মমতা জড়ানো আমার শ্রীমঙ্গল/। ‘শ্রী’ এখানে মুদ্রা তোলে শ্রমিক নারী হাতে/ মঙ্গল এখানে সোচ্চার হয় সবুজ প্রপাতে/। বাংলা নামের দেশের মুখে একটি সবুজ তিল/ সুন্দর তার অঙ্গ-শোভার পেয়েছে মধুর মিল.../। কি চমৎকার বর্ণনা। শ্রীঙ্গল দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ। ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩৮টি চা বাগান রয়েছে সেখানে। চা বাগানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পর মনে হলো কোন চিত্র শিল্পী মনের মাধুরী মিশিয়ে সবুজ-শ্যামল মাঠ তৈরি করে রেখেছে। কিভাবে সবুজ পাতাগুলো চা-এ পরিণত হচ্ছে যন্ত্রের বা মেশিনের সাহায্যে সেটাও আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল। আর অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু ঘুরে দেখতে যাদের আন্তরিক সহযোগিতা আমি পেয়েছিলাম তারা হলেন- সজীব, পাপন, বাপ্পী ও অঞ্জন আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের সহযোগিতা ছাড়া মাত্র দুই দিনে এতকিছু দেখা সম্ভব হতো না। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল প্রবেশের মুখেই রয়েছে একটি দারুণ ভাস্কর্য। যার নাম ‘চা-কন্যা’ ভাস্কর্য। সেখানে দেখা যাচ্ছে চা পাতা তুলছে এক তরুণী শ্রমিক। এই আদলে তৈরি সাদা ভাস্করটি শ্রীমঙ্গলের প্রবেশ পথেই দৃষ্টি কেড়ে নেবে। ‘চা-কন্যার’ সামনেই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সাতগাঁও চা বাগান। তার পাশেই রয়েছে আদিবাসী খাসিয়া পল্লী। সেই পল্লীটিও আমার ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল । কি মনোরম তাদের বাড়িঘরগুলো । সিঁড়ির বেয়ে একটির পর একটি বাড়িতে উঠতে হচ্ছে, টিলার ওপর তাদের বাড়ি। দারুণ চাকচিক্য তাদের বাড়িঘর। চারপাশে ফুলের গাছে ঘেরা। পাশে বিভিন্ন সবজি ও ফলের গাছ। এক কথায় অসাধারণ সুন্দর খাসিয়া পল্লীটি। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটও শ্রীমঙ্গলেই। পর্যটকদের জন্য এটিও একটি আকর্ষণীয় স্থান। চা শিল্পের উন্নয়নে কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিদিন বিকেলে ও সরকারী ছুটির দিনে এখানে পর্যটকদের ঢল নামে। প্রতিষ্টানটির ভেতরে চা বাগান ছাড়াও অনেক কিছুই দেখার মতো আছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতিসাপেক্ষে আমাদেরও ভেতরে যাওযার সুযোগ হয়েছিল। শ্রীমঙ্গল থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে আরেকটি দর্শনীয় স্থান তা হলো লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। ১৯২০ সালে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গাজুড়ে প্লান্টেশন করে তৈরি ধনরাজি এখন ঘন প্রাকৃতিক বনের আকার ধারণ করেছে। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই পার্কে দেখা মেলে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পশুপাখি। এখানকার উঁচু উঁচু গাছ যে কোন মানুষকে আকৃষ্ট করবে। অনেক অচেনা গাছের দেখাও মিলবে সেখানে যেগুলো আমরা সচরাচর বাইরে দেখতে পাই না। বিশেষ করে কবিরাজদের জন্য খুব উপকারী জায়গা সেটি বলে আমার মনে হয়েছে। কেননা সেখানে নাকি নানা ঔষধি গাছ রয়েছে যা বাইরে নাই বা বিলুপ্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা আমাদের লাউয়াছড়া উদ্যানে খুব ভাল কেটেছিল। অনেকে বলে থাকেন ভ্রমণ মানুষের জ্ঞানের পরিধিকে বাড়িয়ে দেয়। মনকে করে উৎফুল্ল তাই সময় ও সুযোগ পেলে ঘুরে আসুন চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল ও লাউয়াছড়া উদ্যান থেকে।
×