ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপূর্ব শর্মা

জমে উঠছে বইমেলা

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

জমে উঠছে বইমেলা

সঙ্কটের এই কালে পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। সেই লক্ষ্যেই স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশে। আরও নানা পদ্ধতিকে তরুণ প্রজন্মকে বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলার প্রচেষ্টা চলছে। তবে, যে চেষ্টার প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়েছে পাঠক, সেটি হচ্ছে বইমেলা। চিত্তরঞ্জন সাহার একক বইমেলা আজ তাই পরিণত হয়েছে বাঙালীর মিলন মেলায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মেলার পরিধি, বাড়ছে লেখক প্রকাশকদের সংখ্যা। বছরের এই মাসটির জন্য সারাদেশের লেখকরা অপেক্ষায় থাকেন। শুধু দেশের লেখকরাই নন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী লেখকরাও দিন গুনেন বইমেলার। বই বের করেই ক্ষান্ত হন না তারা। ছুটে আসেন দেশে, মেলা প্রাঙ্গণে। একের সঙ্গে অন্যের দেখা হয়। ভাবের আদান প্রদান করেন লেখকরা। এ বছরও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। সময় যতই গড়াচ্ছে ততই জমজমাট হয়ে উঠছে বইমেলা। নিñিদ্র নিরাপত্তায় স্বস্তি ‘মেলায় আগত প্রত্যেককে নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে যেতে হবে, এমনকি আমাকেও এই তল্লাশির ভেতর দিয়ে যেতে হবে।’ মেলা শুরুর প্রাক্কালে এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন সংস্কৃতমিন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি আরও বলেছিলেন ‘মেলাকে সুশৃঙ্খল এবং নিরাপদ রাখতে যা যা করণীয়, তার সবই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মিলে করা হবে।’ দুই বছর আগে বইমেলা উপলক্ষে ঢাকায় এসে খুন হয়েছিলেন মুক্তমনা লেখক-ব্লগার অভিজিত রায়। অভিজিতের পর একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় আরও কয়েকজন ব্লগার, অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ও প্রকাশককে। এরপরই লেখক, প্রকাশকদের নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনায় আসে। মেলাকে নির্বিগ্ন করার দাবি উঠে বিভিন্ন মহল থেকে। সেই দাবির প্রেক্ষিতে মেলার নিরাপত্তায় নেয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা। মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে প্রত্যক্ষ করা গেলে মন্ত্রীর বক্তব্যের বাস্তবতা। লেখক, প্রকাশক এবং ক্রেতাদের নিñিদ্র নিরাপত্তা দিতে নেয়া হয়েছে ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মেলার নিরাপত্তায় পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ার করেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে সাদা পোশাকে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে মেলা প্রাঙ্গণ ‘ভালভাবে’ পর্যবেক্ষণের জন্য বাড়ানো হচ্ছে আলোক সজ্জা। দোয়েল চত্বর থেকে শুরু করে শামসুন্নাহার হল পর্যন্ত রাস্তায় থাকছে ২৫০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। বাংলা একাডেমিতে, শাহবাগ থানায় ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপিত তিনটি কন্ট্রোল রুম থেকে এসব ক্যামেরা মনিটর করছে ১৭টি ইউনিট। ডিএমপির কন্ট্রোল রুম থেকে ২৪ ঘণ্টা মনিটর করা হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণ। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন, বইমেলার নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে শঙ্কাবোধ করলে যে কোা লেখক, প্রকাশক চাইলে নিরাপত্তা পাবেন। লেখক শেখ ফজলে এলাহী নিরাপত্তা ব্যবস্থায় স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, একুশে বইমেলা বাঙালীর আবেগের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে মিশে গেছে। তা যেনও কোনভাবে বিনষ্ট না হয়। আর সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সচেষ্ট থাকতে হবে। স্বকৃত নোমান বলেন, গত বেশ ক’বছরের তুলনায় এবারের বইমেলায় বেশ ভাল হচ্ছে। অনেক শৃঙ্খলা এসেছে। পাঠক লেখক প্রকাশকদের তেমন কোন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে না। স্টলগুলোর পরিসর বড়। খেলামেলা জায়গা। ধুলোবালি নেই বললেই চলে। মেলার শুরুতে দুদিন ছুটির দিন পড়ায় শুরুতে দর্শকদের ভিড় চোখে পড়েছে। আশা করছি শেষ পর্যন্ত মেলা ভাল হবে। তারুণ্যের বইমেলা তারুণ্যের বইমেলায় পরিণত হয়েছে একুশের গ্রন্থমেলা। মেলায় প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে অধিকাংশ লেখকেরই বয়স চল্লিশের কোটায়। মেলায় যারা আসেন তাদের অধিকাংশই তরুণ। কিন্তু তারুণ্যের বইমেলায় তরুণদের নিয়েই আছে হতাশা। অভিযোগ উঠেছে, তরুণরা এখন আর আগের মতো বই কিনেন না। আগে যে পরিমাণের বই কিনতেন তরুণরা ঠিক সে পরিমাণের বই এখন আর তারা কিনছেন না। এছাড়াও সিরিয়াস সাহিত্যের প্রতি তরুণদের ঝোঁক কম। ‘কবিতা লেখার প্রতিই এখন অধিকাংশের আগ্রহ। কিন্তু যে পরিমাণে কবিতার বই বের হচ্ছে ঠিক সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না। হাতেগোনা কয়েকজন কবির কবিতার বই বাদ দিলে ২০-৩০ কপি কবিতার বই বিক্রি হয় না অনেক লেখকের’ এমন অভিযোগ হরহামেশাই করে থাকেন প্রকাশকরা। লেখক হায়াৎ মামুদও বললেন একই কথা। তার মতে, ‘তরুণরা বই পড়ার প্রতি যতটা আগ্রহী হওয়ার কথা, এখন ঠিক ততটা নয়। তারা অন্যান্য অনেক বিষয়ের দিকে ঝুঁকছে। এটা খুবই খারাপ লক্ষণ। এ থেকে উত্তরণ করতে হবে। আর সেজন্য শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি পারিবারিক গুরুজনদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের ভাল বই পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় আমরা এক গাঢ় অন্ধকারে নিমজ্জিত হব। প্রকাশনায় পেশাদারিত্বের অভাব প্রতিবছর বইমেলায় ৩ হাজার কিংবা সাড়ে ৩ হাজার বই প্রকাশিত হচ্ছে। ২০১৬ সালে বইমেলায় প্রকাশিত হয় ৩ হাজার ৪৪৪টি বই। বিক্রি হয়েছিল ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই। মেলার পরিসর ও প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বই বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে বলে দাবি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তা আশানুরূপ নয়, এমন বক্তব্য প্রকাশকদের। আর বোদ্ধা পাঠকদের অভিযোগ প্রকাশনায় পেশাদারিত্বের অভাবে ঘটছে এমনটি। কেউ কেউ বলছেন, মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এমন বিপত্তি ঘটছে। শব্দসৈনিক কামাল লোহানীর মতে, সর্বক্ষেত্রেই যখন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে সেখানে প্রকাশনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি আমরা। প্রতিবছর প্রচুর বই বের হচ্ছে; কিন্তু আদত গ্রন্থের অভাব রয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আগে বইয়ের প্রথম সংস্করণ ১২৫০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত হতো। আর তা করা হতো নির্ভুলভাবে। সম্পাদকদের দিয়ে সম্পাদনা করিয়ে বই বের করতেন প্রকাশকরা। এখন তা বিরল। আর লেখকরাও পরিশ্রমী নন। গুগল সার্চ করে অনেককে লিখতে দেখা যায়। এগুলো আর যাই হোক সমৃদ্ধ সাহিত্য না। ভাল লেখক হতে গেলে প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে। সৎ এবং মেধাসম্পন্ন লেখকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সঙ্কট থেকে উত্তরণ সম্ভব। এ প্রসঙ্গে লেখক স্বপন নাথের বক্তব্য হচ্ছে, ‘কেউ কেউ বলে থাকেন যে, মানসম্পন্ন বই প্রকাশ হচ্ছে না। মানলাম, কিন্তু মান বিচারের মানদ- কোথায়? তা কালই বিচার করবে। লেখক হওয়ার জন্য অনেকেই চেষ্টা করছে, এটাই বড় কথা। তবে প্রকাশনায় পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে। একইসঙ্গে লেখক-প্রকাশক-পাঠক সম্পর্ক যৌক্তিক ও নিবিড় হওয়া প্রয়োজন। বাজার ও বিপণনের দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে বাড়বে পাঠক। তরুণ কথাসাহিত্যিক ফারজানা মিতু বলেন, গোটা ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের প্রাণের মাস, ভাষার মাস। আমাদের অসামান্য উৎসব, অসামান্য মিলন মেলার মাস। বইমেলা বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম একটি উৎসব। কোন রকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছাড়াই বইমেলা চষে বেড়াবেন পাঠক। লেখকরা পাঠকের হাতে তুলে দেবেন তাদের চিন্তা চেতনা আর আবেগের ফসল। পাঠকের চোখে মুখে লেগে থাকবে নতুন বই হাতে নেবার আনন্দ। বইমেলায় সব পাঠকের জন্য মানসম্মত বই প্রয়োজন। অনেককেই বলতে শোনা যায়, অনেক বই আছে কয়েক পাতা পড়ার পর আর পড়া যায় না। এই ব্যাপারে প্রকাশকদের ভূমিকা অনেক। ভাল সম্পাদনার প্রয়োজন। লিটলম্যাগ চত্বর লিটলম্যাগ চত্বরকে অনেকে বইমেলার প্রাণ বলে থাকেন। এখানেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লেখকের আড্ডা বসে। চলে ভাবের আদান-প্রদান, যুক্তিতর্ক। কিন্তু এ বছর এখনও জমে উঠেনি বইমেলার প্রাণের সেই চত্বর। তবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জমে উঠবে এই চত্বর এমন আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের। কারণ অনেক লিটলম্যাগ এখনও প্রকাশিত হয়নি। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লিটলম্যাগ সংশ্লিষ্টরা এখনও আসেননি মেলায়। জমে না উঠলেও লিটলম্যাগ চত্বর নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেন লেখক উজ্জ্বল দাশ। তিনি লিটল ম্যাগাজিনের চত্বর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লেখকদের চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে লিটলম্যাগ। সেহেতু এর পরিসর আরও বড় করার প্রয়োজন ছিল। তাহলে লেখকদের সমাগম আরও বেশি হতো। বসার স্থান নিয়ে ক্ষোভ উন্মুক্ত স্থানে বইমেলার দাবি ছিল লেখক এবং প্রকাশকদের। সেই দাবি পূরণ হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা সম্প্রসারিত করায় বইমেলায় এসেছে কাক্সিক্ষত পরিবেশ। কিন্তু এত বড় বইমেলায় লেখকদের বসে আড্ডা দেয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। হাঁটতে হাঁটতে যখন ক্লান্ত হবেন লেখক তখন দুদ- বসে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলারও কোন অবকাশ পাবেন না! এ বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখা উচিত ছিল সংশ্লিষ্টদের। প্রচ্ছদ চিত্রশিল্পী চারু পিন্টুর অভিযোগ, আসলে এটাকে বাংলা একাডেমির গাফিলতি বলা চলে। কারণ, যে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো কাজ নেয়, তারা হয়ত লেখকদের মেজাজটা ঠিকমতো বোঝে না। তবে বাংলা একাডেমি যে সেটা বোঝে না, সেটা বললে ভুল হবে। তাই এ উদ্যোগটা বাংলা একাডেমির নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা প্রতিবারই সেই আশ্বাস দিয়েও উদ্যোগ নিচ্ছে না। এত বড় বইমেলায় লেখকদের জন্য আড্ডা দেয়ার জায়গা থাকবে না, সেটা মেনে নেয়া যায় না। অন্যদিক থেকে হিসাব করলে দেখা যাবে, যদি পাঠকরা সমস্ত মেলা ঘুরে বই কিনতে চান, তাহলে তারা মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। সেক্ষেত্রে মাঝে মাঝে একটু জিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও দরকার পড়ে বসার জায়গার। কিন্তু সেটা থেকেও পাঠক বঞ্চিত। এটা বাংলা একাডেমির গাফিলতি ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রথম সপ্তাহের উল্লেখযোগ্য বই বাংলা একাডেমির দেয়া তথ্য অনুযায়ী বইমেলায় প্রথম সপ্তাহে এসেছে ৫৭২ নতুন বই। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ২২টি। গল্প গ্রন্থ ৮৯টি। উপন্যাস ৮৬টি। প্রবন্ধ গ্রন্থ ৩৭টি। কবিতার বই ১৪৯টি। গবেষণা গ্রন্থ ৮টি। ছড়ার বই ১৫টি। শিশুতোষ ১৮টি। জীবনী গ্রন্থ ৮, রচনাবলী ৪, নাটক ৩, বিজ্ঞান ১০, ভ্রমণ ১২, ইতিহাস ৮, রাজনীতি ৪, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ৫, কম্পিউটার ২, রম্য ২, ধর্মীয় ২, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ১২ এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর ৭৬টি নতুন বই এসেছে। মেলার প্রথম দিনই প্রকাশিত হয় হাসান আজিজুল হকের নতুন দুই বই ‘দুয়ার হতে দূরে’ ও ‘স্মৃতিগদ্য : বন্ধনহীন গ্রন্থি’। তার বই এনেছে ‘ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ’। ‘আগামী প্রকাশনী’ মেলায় এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’। ‘ঐতিহ্য’ থেকে এসেছে বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণের সংকলন ‘ওঙ্কারসমগ্র’, যার শ্রুতিলিখন ও সম্পাদনা করেছেন নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের অনুবাদে ‘হ্যামলেট’, সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফির ‘মায়া মেঘ নির্জনতা’ ও মোস্তফা কামালের ‘রূপবতী’ এনেছে অন্যপ্রকাশ; মৌলি আজাদের ‘রক্তজবাদের কেউ ভালোবাসেনি’ এনেছে আগামী প্রকাশনী, ড. রশিদুন্নবী ও শাহীনূর রেজা সম্পাদিত ‘হাজার বছরের বাংলা গান সংগ্রহ’ এনেছে অনুপম, পাপড়ি রহমান ও নিয়াজ জামানের ‘অ্যালিস মানরো নির্বাচিত গল্প’, হরিশংকর জলদাসের ‘ইরাবতী’ এনেছে মাওলা ব্রাদার্স, ইমদাদুল হক মিলনের ‘নয়মাস’ এনেছে অনন্যা। সময় প্রকাশনী এনেছে মুনতাসীর মামুনের ‘ঊনিশ শতকের পূর্ববঙ্গের থিয়েটার ও নাটক’, অন্যপ্রকাশ এনেছে ‘হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী-‘নবম খ-’, ‘হুমায়ূন আহমেদের কথামালা’, শাহাবুদ্দীন নাগরীর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ ‘আকবর রাজাকার হয়েছিল’, মোশতাক আহমেদের ‘সেরা ৫ সায়েন্স ফিকশন’ এবং মোস্তফা কামালের ‘রূপবতী’, উৎস এনেছে সাহাদাত পারভেজের ‘গজারিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’, পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে এসেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর এ্যাডভেঞ্চার ‘আবারো টুনটুনি ও আবারো ছোটাচ্চু’, অনন্যা থেকে এসেছে ইমদাদুল হক মিলনের কিশোর উপন্যাস ‘ভূতের নাম রমাকান্ত’, আ লিটল বিট থেকে প্রকাশিত হয়েছে আবু সাঈদ তুলুর ‘পাতার বাঁশি’, প্রতীক এনেছে ধ্রুব এষের ‘ভয় পাবে তুমি’ এবং আহসান হাবীবের ‘হুমায়ূন হিউমার এবং নিজস্ব’, নুজহাত চৌধুরীর ‘এ লড়াই অনিবার্য ছিল’ এনেছে মাওলা ব্রাদার্স, তারা আরও এনেছে ‘শ্রেষ্ঠ মিসির আলি’, ঐতিহ্য এনেছে শারমিন আহমেদের ‘মুক্তির কা-ারী তাজউদ্দীন কন্যার অভিবাদন’। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সুবর্ণ এনেছে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত ‘বাংলাদেশ চর্চা-১৩’, মুর্শিদা বিন্তে রহমানের ‘আঠারো ও উনিশ শতকে বাংলার বানিয়া’, মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ ও মাখন লাল রায় চৌধুরীর ‘জাহানারার আত্মকাহিনী।’ জাগৃতি প্রকাশনী থেকে এসেছে অনার্য আদিমের ‘শূন্যতার স্বর’, মুরাদ হুসাইনের ‘শিকড়ের জলছাপ’, মাহবুবুর রহমান শিশিরের উপন্যাস ‘দূর বাগানের সাহেব’ ও রিয়াজুল আলম শাওনের রহস্য গল্প ‘একজন সাইকো।’ অনিন্দ্য প্রকাশ এনেছে স্বকৃত নোমানের ‘শেষ জাহাজের আদমেরা’, মোশতাক আহমেদের ‘সেরা পাঁচ উপন্যাস’, সাব্বির খানের ‘পোড়া মৃতদেহের রাজনীতি ও সময়ের গল্প’ ও কবিতা ও কাব্য চিন্তা নিয়ে স্বপন নাথের রচনা ‘কবিতার নন্দনবিশ্ব’ এবং শংসয়ের বসতি বের করেছে নাগরি। চন্দন আনোয়ারের গল্পগ্রন্থ ‘ত্রিপাদ ঈশ্বরের জিভ’ প্রকাশ করেছে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ। ‘ইচ্ছামৃত্যুর ইশতেহার’ প্রকাশ করেছে কথাপ্রকাশ। প্লাটফর্ম এনেছে আবু হাসান শাহরিয়ারের ‘অসময়ে নদী ডাকে’, কথা প্রকাশ বের করেছে পিয়াস মজিদের ‘করুণ মাল্যবান ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’, রাত্রি প্রকাশনী এনেছে আহসান হাবীবের ‘মেছো ভূত’, ঐতিহ্য এনেছে আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কালো সূর্যের নিচে বহ্ন্যুৎসব’, অনুপম বের করেছে হুমায়ূন আহমেদের ‘সায়েন্স ফিকশন গল্পসমগ্র’, অনুপম প্রকাশনী; ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ বের করেছে সেলিনা হোসেনের ‘উত্তর সারথি’, পার্ল পাবলিকেশন্স এনেছে আনিসুল হকের ‘দ্য বস ইজ অলওয়েজ রাইট’, অবসর এনেছে হরিশঙ্কর জলদাসের ‘জীবনানন্দ ও তাঁর কাল’। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের ‘আন্দোলন-সংগ্রামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ এনেছে অন্বেষা প্রকাশনী, পিয়াস মজিদের ‘নিঝুম মল্লার’ প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স। বইমেলায় প্রবাসী লেখকদের বই প্রবাসীরা শুধু মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রেমিটেন্সই পাঠান না, লেখালেখিতেও রয়েছে তাদের প্রবল ঝোঁক। সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে বসে কাজের ফাঁকে কিংবা অবসরে সাহিত্যচর্চা চালিয়ে যান তারা। তৈরি করেন পা-ুলিপি। দেশের লেখকদের মতো তারাও অপেক্ষায় থাকেন ফেব্রুয়ারি মাসের। অনেকে ছুটে আসেন বইমেলায়। এ বছরের বইমেলায় ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্য থেকে ছুটে এসেছেন লেখিকা শামীম আজাদ। আর টরেন্টো থেকে এসেছেন জসিম মল্লিক। তাদের মতো আরও অনেকেরই মেলার মাঝামাঝি দেশে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই বইমেলায় অংশগ্রহণ করে লেখক-পাঠকদের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর প্রবাসীদের লেখা প্রায় ৫০টির মতো বই বের হচ্ছে একুশে বইমেলায়। এরই মাঝে মেলায় এসেছে অনেকের বই। নিউইয়র্ক প্রবাসী কাজী জহিরুল ইসলামের ভ্রমণসমগ্র প্রথম ও দ্বিতীয় খ- প্রকাশ করছে রূপ প্রকাশন। একই প্রকাশনা থেকে বাজারে এসেছে ইতিহাসভিত্তিক প্রবন্ধের বই ‘শেকড়ের খোঁজ’। তার প্রবন্ধের বই ‘অসীম শূন্যতে তিষ্ঠ’ প্রকাশ করছে অনিন্দ্য প্রকাশনী। শামীম আজাদের কবিতাগ্রন্থ ‘দেহখাঁজ খঞ্জর’ প্রকাশ করেছে সাহিত্য বিকাশ। চৈতন্য এনেছে মুজির ইরমের ‘চম্পূকাব্য’। জসিম মল্লিকের ছোট ছোট স্মৃতিকথা নিয়ে ‘স্মৃতির নির্জনতা’ প্রকাশ করেছে অনন্যা আর মাকে নিয়ে লেখা ‘আমার মা’ এনেছে রিদম। এছাড়াও প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে মাশুক ইবনে আনিস, জুয়েল রাজ, আবু মকসুদ, সুজাত মনসুর, এ কে এম আব্দুল্লাহ, মোহাম্মদ ইকবাল, মিলটন রহমান, নবাব উদ্দীন, আনোয়ার শাহজাহান প্রমুখের বই। মেলা প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্য প্রবাসী লেখক সাংবাদিক জুয়েল রাজ বলেন, ‘বাঙালী হিসেবে আমাদের ঐতিহ্যের একটা অংশ একুশের গ্রন্থমেলা। পৃথিবীর কোথাও মাসব্যাপী গ্রন্থমেলার ইতিহাস জানা নেই। শুধু মেলা বললে আসলে ভুল হবে। একুশের গ্রন্থমেলা লেখক, কবি, পাঠক প্রকাশেরও মিলন মেলা। প্রবাসে থেকে সেই অনূভূতিটা আসলে বুঝানো যাবে না। বইপ্রেমী যারা প্রবাসে থাকেন, শুধু তাঁরাই অনুধাবন করতে পারেন। নতুন বইয়ের গন্ধ, প্রিয় লেখকের সান্নিধ্য এসব অবশ্যই মিস করি। আর প্রবাসী একজন লেখকের বইমেলায় আসছে কিন্তু তিনি তা ছুঁয়ে দেখতে পারছেন না, সেই বেদনাটা ও অবশ্যই বুকে বাজে।
×