ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কোহলিকে চটিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কোহলিকে চটিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার, হায়দরাবাদ থেকে ॥ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার মাইক হাসি বলেছিলেন, ‘কোহলি এখন যে কোন দলের জন্যই এক নম্বর শত্রু। যত দ্রুত সম্ভব ওকে ফেরাতে হবে। আমি হলে অন্তত কোহলিকে খেপিয়ে দিতাম না। ও প্রচ- কঠিন এক প্রতিদ্বন্দ্বী। লড়াইটা করতে ও ভালবাসে। মাঠের যুদ্ধটা পছন্দ করে।’ তাহলে কি কোহলিকে চটিয়েই বিপদে পড়ল বাংলাদেশ? তাই বোধহয় হলো। এ মুহূর্তে বিশ্বের এ সেরা ব্যাটসম্যান বুঝিয়ে দিলেন তিনি কি জিনিস। শতক করেই ছাড়লেন। তাও আবার ১৪১ বলে ১২ চারে ১১১ রান করে অপরাজিতও আছেন। দ্বিশতক করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। কোহলিকে চটালেন কে? আর কে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। টেস্ট পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বুধবার মুশফিক বলেছিলেন, ‘নিঃসন্দেহে কোহলি এ মুহূর্তে সেরা ব্যাটসম্যান। দ্বিশতক, এরও বেশি রান করার ক্ষমতা আছে।’ প্রশংসার সঙ্গে চটিয়েও দিয়েছেন এই বলে, ‘তবে একটি খারাপ বলই যথেষ্ট। খুব দ্রুত আউটও হতে পারে।’ মুশফিক আরও বলেছেন, ‘নাম্বার ওয়ান টেস্ট দল হওয়া বড় কথা নয়। এখানে বিরাট কোহলি বলেন আর (রবিচন্দ্রন) অশ্বিন বলেন তারা অনেক বড় এবং অনেক উঁচু মাপের ক্রিকেটার। তারা দুইজন ভাল করাতেই যে দল জিতে গেছে সেটা নয়।’ এমন কথা শোনা এবং জানার পর কি আর কোন ক্রিকেটারের ভেতর জেদ না ধরে উপায় আছে। ক্রিকেটার হচ্ছেন আবার কোহলি। তাকে যে দলই চটায়, তারাই ধরা খায়। বাংলাদেশও বোধহয় তাই খেল। এ মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানকে চটিয়ে এখন হায়দরাবাদ টেস্টেই যেন এলোমেলো হয়ে গেছে বাংলাদেশ। চেতশ্বর পুজারা ও মুরালি বিজয়ের জুটি যখন ভাঙ্গে ১৮০ রানে; তখনই ব্যাট হাতে নামেন কোহলি। তার ব্যাট হাতে নামতেই হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার দর্শকদের সে কি করতালি। ‘কোহলি, কোহলি’ রব উঠেছে পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে। যেন কোন বীর নামছেন। সবাই দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছেন। যেই কোহলি উইকেটে গেলেন, সবদর্শক বসলেন। কোহলি কি আর বসতে দেন। প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দিলেন। মেহেদী হাসান মিরাজের করা শর্ট বলটিতে পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি মারতে খুব টেকনিকের প্রয়োজন পড়েনি। জায়গায় দাঁড়িয়ে শট নেন। বাউন্ডারি হয়ে যায়। এই যে শুরু হয়, আর শেষ হয় না। ‘আতঙ্কের দুসরা নাম কোহলি।’ এখন এটাই যেন হায়দরাবাদ টেস্টের বিজ্ঞাপন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩১ রানে থাকার সময় একবার তাইজুল ইসলামের বল কোহলির পায়ের মাঝখানে লাগে। কোহলি একটু ফ্রন্টফুটে খেলতে যান। মনে করা হয় এলবিডাবলিউ হতে পারে। তাই ‘রিভিউ’ নেয়া হয়। কিন্তু ‘রিভিউ’ খারিজ হয়ে যায়। এরপর কোহলি এগিয়ে যেতেই থাকেন। কোন কিছুতেই কোহলিকে থামানো যায়নি। ৭০ বলে গিয়ে অর্ধশতক করে ফেলেন কোহলি। মিরাজের বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইনিংসের শুরুটা করেন। সেই মিরাজের বলেই মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৩০ বলে শতক পূরণ করেন। শেষ পর্যন্ত আরও ১১ রান যোগ করে অপরাজিত আছেন। সৌরভ গাঙ্গুলীর পর বিরাট কোহলিকে ধরা হয় আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার। এ মুহূর্তে আক্রমণাত্মক অধিনায়কও। কি নিয়তি এবং দুইজনের সঙ্গে কত মিল। বাংলাদেশ যখন প্রথম টেস্ট খেলে দেশের মাটিতে, তখন ভারতের বিপক্ষে খেলে, ২০০০ সালে। গাঙ্গুলী ভারতের নেতৃত্ব দেন। এবার যখন ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ, তখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিরাট কোহলি। শুধু তাই নয়। মিল আছে আরও। হায়দরাবাদ টেস্টের প্রথমদিনে শতক করে কোহলি টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬তম শতক পূরণ করলেন। গাঙ্গুলীও ১৬ টেস্ট শতক নিয়েই টেস্ট খেলা শেষ করেন। কোহলি ও গাঙ্গুলী এখন শতকের দিক দিয়ে সমান অবস্থানেই আছেন। বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের প্রথম টেস্টে গাঙ্গুলী প্রথম ইনিংসেই বড় ইনিংস (৮৪) খেলেছিলেন। ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে কোহলিও বড় ইনিংস খেললেন। গাঙ্গুলী বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি শতক করেছেন। কোহলিও সেই কোটা বৃহস্পতিবার পূরণ করেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় ম্যাচেই শতক করেন কোহলি। শুধু তাই নয়, এ শতক করে সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষেই অন্তত একটি করে শতক করার রেকর্ড গড়লেন কোহলি। পাকিস্তান ও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এখনও খেলাই হয়নি। বাকি সবদেশের বিপক্ষেই করেছেন। এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রান করার দিক দিয়ে বীরেন্দ্র শেবাগের পরেই আছেন কোহলি। ২০০৪-০৫ মৌসুমে শেবাগ ১৭ ম্যাচে ৪ শতকসহ ৬৯.০৬ গড়ে ১১০৫ রান করেছিলেন। কোহলি ২০১৬-১৭ মৌসুমে ১৫ ম্যাচে ৪ শতকে ৮৯.৫৮ গড়ে ১০৭৫ রান করেছেন। সুযোগ আছে শেবাগকে পেছনে ফেলে এক নম্বর হয়ে যাওয়ারও। শেবাগের সঙ্গে রানের পার্থক্য বেশি নয়, মাত্র ৩০ রান। আজ দ্বিতীয়দিনেও তা হয়ে যেতে পারে। শুধু হতেই পারে না, আরও বড় ইনিংসও হয়ে যেতে পারে। কোহলিকে চটিয়ে এমনিতেই বিপদে আছে বাংলাদেশ। চটানোর ফল আরও খারাপই নাকি হয়ে যায়।
×