ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নার্সিং সেবায় নারীর অগ্রযাত্রা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নার্সিং সেবায় নারীর অগ্রযাত্রা

নার্সিং একটি সেবামূলক পেশা। সেবার ব্রত নিয়ে যে কয়েকটি পেশায় মানুষ নিজেকে নিয়োজিত করে থাকে নার্সিং তার অন্যতম। নার্সিং শব্দের আভিধানিক অর্থ তত্ত্বাবধান করা বা সেবা করা। এই নার্সিং শব্দটি থেকেই এসেছে নার্স শব্দটি। যারা নার্সিং বিষয়ে দক্ষ, তাদেরই বলা হয় নার্স। এর বাংলা অর্থ সেবিকা। অসুস্থ মানুষের সেবা করাই এ পেশার প্রধান দায়িত্ব। আর মানুষ যখন অসুস্থ হয় তখন ওই ব্যক্তিটির বা তার আপনজনদের একটিই প্রার্থনা বা চাওয়া স্রষ্টার কাছে তা হলো অসুস্থ ব্যক্তিটির আরোগ্যলাভ। কেননা স্বাস্থ্যই সব সুখের মূল এমন কথাও আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত। সারাজীবন অসুস্থ মানুষের পাশে থেকে সেবা করে যাওয়ার যে আনন্দ তার চেয়ে সম্মানের কাজ আর কি হতে পারে। অচেনা অজানা মানুষকে নিজের আত্মীয়ের মতো ভালবেসে সেবা দিয়ে থাকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কর্তব্যরত নার্স বা সেবিকারা। তারপরেও আবার অনেক সময় নিজের ছোট ছোট সন্তান রেখে অনেক সময় রাতেও ডিউটি করতে হয় অনেক মাকে। আমরা আমাদের আপনজনদের নিয়ে থাকতেই হাসপাতালে অস্বস্তি বোধ করি সেখানে তারা পুরো কর্মজীবন এ কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তাইতো নার্সিং পেশাটির প্রতি মানুষের একটি শ্রদ্ধা কাজ করে থাকে। যদিও এক সময় এ পেশাতে অনেকে আসতে চাই তো না। কিন্তু এ পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। তাই তো প্রতিনিয়ত এ মহান পেশার প্রতি মানুষের আগ্রহের জন্ম নিচ্ছে। তাছাড়া নার্সিং বিষয়ে পড়াশোনা করে কেউ বেকার থাকে না। খুব দ্রুত একটি কর্মসংস্থান হয়ে থাকে সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। শুধু দেশে নয় বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে নার্সদের চাহিদা। আসলে নার্সিং এমন একটি পেশা যার চাহিদা স্থান কাল পাত্রে সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে প্রাইভেট হাসপাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা। আর রোগীর সংখ্যা তো বাড়ছে তার চেয়ে আরও বেশি। কেননা সরকারী হাসপাতালগুলোতে গেলে দেখা যায় সিট না পেয়ে মেঝেতে শুয়ে রয়েছে বহু রোগী। মহান এ পেশাটির রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। যুক্তরাজ্যে জ্যেষ্ঠ নারী সেবিকারা সিস্টার নামে পরিগণিত হয়ে থাকেন। নার্সিংয়ের ইতিহাসে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ও পরিবর্তন সাধন ঘটে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে। বিশ্ব খ্যাত ইংরেজ নার্স ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল নার্সিংয়ের পেশাদারী পর্যায়ে সূচনা করেন। তার প্রণীত নোটস অন নার্সিং গ্রন্থটিকে এ বিষয়ে পথিকৃত মনে করা হয়। পেশাদারী পর্যায়ে এ পেশার মানোন্নয়নে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নার্স ব্যক্তিত্ব রূপে ম্যারি সিকোল, এগনেস এলিজাবেথ জোন্স এবং লিন্ডা রিচার্ড ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছেন। লিন্ডা রিচার্ডস আমেরিকার প্রথম পেশাদার ও প্রশিক্ষিত নার্স হিসেবে ১৮৭৩ সালে বোস্টনের নিউ ইংল্যান্ড হসপিটাল ফর উইম্যান এ্যান্ড চিল্ড্রেন থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডে জাতীয় পর্যায়ে নার্সদের নিবন্ধিত করা হয়। ১৯০১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর নার্সেস রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট প্রতীত হয়। এলেন ডাফাটি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রথম নিবন্ধিত নার্স। তাদের আদর্শ মনে করে এগিয়ে চলেছে বর্তমানের এ পেশার অসংখ্য সেবিকারা। যদিও একসময় আমাদের দেশে শুধু নার্সিং ডিপ্লোমা কোর্সটি চালু ছিল কিন্তু বর্তমানে সরকারী পর্যায়ে ৭টি বেসিক বিএসসি নার্সিং কলেজে এই কোর্স চালু রয়েছে। এর বাইরে বেসরকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে নার্সিংয়ের ওপর অনার্স করার সুযোগ। এসব জায়গা থেকে বের হয়ে শুধু যে দেশেই নয় দেশের বাইরেও অনেকে চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ১৩শ’ নার্স সৌদি আরব, লিবিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। ইংরেজী জানা ও উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ নার্স গড়ে তুলতে পারলে এই খাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নার্সিং সেবার প্রতি বিশেষ নজর রেখে চলেছেন। পাশাপাশি তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মান দিয়েছেন। বেতনভাতাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বর্ধিত করেছেন। বর্তমানে এ পেশার প্রতি মানুষের যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে এটিও তার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। আবার অনেকে বলে থাকেন একজন রোগীর সঙ্গে ভাল ব্যবহারও চিকিৎসারই একটি অংশ। নার্সরা তাদের যতœ ও সুন্দর ব্যবহার দিয়ে একজন রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একজন নার্স রোগীর সব দায়িত্ব নিজেই বহন করে থাকেন। রোগীকে আপন মনে করে সেবা দেয়াই হচ্ছে একজন নার্সের প্রধান দায়িত্ব। তাই তো মনীষীরাও বলে গেছেন মানব সেবাই হচ্ছে পরম ধর্ম।
×