ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

রাশিয়ার চেখভ স্টুডিওর নাটকে মুগ্ধ দর্শক

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রাশিয়ার চেখভ স্টুডিওর নাটকে মুগ্ধ দর্শক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর নাট্যকর্মী ও নাট্যপ্রেমীদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা মেরে ধরলো ‘চেখভ ও গাংচিল’ নামের নাটকটি। চারটি অঙ্কে বিন্যস্ত বিশ্বখ্যাত রুশ নাট্যকার আন্তন চেখভ রচিত প্রযোজনাটি একসঙ্গে মঞ্চস্থ হলো তিনটি মঞ্চে। আর এ নাটক নিয়ে কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নাট্যভ্রমণ করলো রাশিয়ার নাট্যদল চেখভ স্টুডিও। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার নাট্যদলটি পরিবেশন করে চেখভের নাটক গাংচিল অবলম্বনে নির্মিত প্রযোজনা ‘চেখভ ও গাংচিল’। নাটকের প্রথম অঙ্ক পরিবেশিত হয় শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত আঙিনা নন্দন মঞ্চে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অঙ্ক মঞ্চস্থ হয় একাডেমির কফি কর্নারে। চতুর্থ পর্বটি অভিনীত হয় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে। ব্যতিক্রমী এ নাট্য প্রদর্শনী শিল্প রসিকদের মাঝে ছড়িয়ে মুগ্ধতা। নান্দনিক উপস্থাপনার সঙ্গে সংলাপ ও অনবদ্য অভিনয়ের পরিবেশনায় পড়েছে কয়েক দফা করতালি। নির্মল আনন্দে কেটেছে দর্শকরা কাটিয়ে দিয়েছেন তিনটি ঘণ্টা। যৌথভাবে এ প্রদর্শনী আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকাস্থ রুশ দূতাবাস। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আমন্ত্রণ ঢাকায় আসা রাশিয়ার চেখভ স্টুডিও আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে উপস্থাপন করবে আন্তন চেখভের কমেডি নাটক ‘ভল্লুক’। একঝাঁক রুশ নাট্যশিল্পীর অভিনয়ে চেখভ ও গাংচিল নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন ভøাদিমির বাইচার। নাট্য প্রদর্শনীর একাডেমির নন্দন মঞ্চে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। উদ্বোধক ও প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেনÑ সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকাস্থ রাশিয়ার রাষ্টদূত আলেক্সান্দর ইগনাতভ ও মস্কোর রুশ নাট্য বিশ^বিদ্যালয়ের নির্দেশনা বিভাগের ডিন ভøাদিমির বাইচার। স্বাগত বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী ও রাশিয়ার চেখভ স্টুডিওর বাংলাদেশ নাট্যভ্রমণের প্রধান সমন্বয়কারী ইসরাফিল শাহীন। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি সচিব মোহাম্মদ ইব্রাহীম হোসেন খান। উদ্বোধনী বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এ ধরনের প্রযোজনা দেখার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। তাই নাট্যকর্মী ও দর্শকদের জন্য এটা এক নতুন অভিজ্ঞতা। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই আমরা সেই প্রমাণ পেয়েছি। দেশটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অকৃত্রিমভাবে সহযোগিতা করেছে। সেই সূত্রেই বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের দেশের শিল্পীরা যেমন এ দেশে আসছে তেমনি বাংলাদেশের শিল্পীরাও রাশিয়ায় গিয়ে বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার এই সাংস্কৃতিক যোগাযোগ দুই দেশের মানবিক ভবিষ্যত রচনায় আগামী দিনগুলোতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে। নাটকের গল্পে উঠে আসে গ্রামাঞ্চলের এক খামার বাড়ি। সেই খামার বাড়ির মালিক পিটার সোরিন। সে একজন প্রাক্তন উচ্চপদস্থ সরকারী আমলা। ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে সে সরকারী চাকরি থেকে অবসর নেন। তিনি প্রখ্যাত অভিনেত্রী ইরিনা আর্কাদিনার ভাই। ইরিনা তার প্রেমিক লেখক বরিস ত্রিগোরিনের সঙ্গে অবকাশ যাপন করতে এ খামার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এরপর নানা ঘটনা-রটনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় নাটকের প্রথম অঙ্ক। সেখানে অনেকগুলো ত্রিভুজ প্রেমের সম্পর্ক প্রকাশ পায়। প্রায় তিন ঘণ্টা ব্যাপ্তির নাটকে অভিনয় করেছেন নাতালিয়া বেলিয়ায়েভা, পলিনা এলিসিভা, মারিনা সুভোরোভা, তাতিয়ানা ফেদিয়ুশিনা, সার্গেই ফাতিয়ানভ, আইভান কোঝেভনিকভ, ইউরি গলিশেভ, আন্দ্রেই বগদানত, সার্গেই কিরিয়ুশকিন, ভিক্টর রিয়াভব, আলেক্সান্দার গ্রিয়াজনভ, লিওনিদ কাভারগিন, ভদ্মাদিমির সিমোনভ, সার্গেই বিচকভ, বরিস দিরচিকভ ও এলেনা সিমোনভা। বাংলাদেশে নাট্যভ্রমণের অংশ হিসেবে চেখভ স্টুডিও তিনদিনের একটি কর্মশালা পরিচালনা করেছে। অভিনয়, ডিজাইন ও নির্দেশনাবিষয়ক রুশ শিক্ষা পদ্ধতিভিত্তিক কর্মশালায় অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের নির্বাচিত নাট্যকর্মীরা। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি মহড়াকক্ষে চলমান এ কর্মশালা পরিচালনা করছেন ভøাদিমির বাইচার ও তাতিয়ানা ফেদিয়ুশিনা। ১১ দেশের অংশগ্রহণে এশিয়ান কিউরেটোরিয়াল ফোরাম ॥ শিল্পীর সৃজিত শিল্পকর্মটি নান্দনিক উপস্থাপনে জুড়ি নেই কিউরেটরের। তাই আধুনিক বিশ্বে শিল্পকলার এক অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে কিউরেটিং। তবে এ দেশে এখনও সেভাবে ভিত্তি অর্জন করেনি পেশাদার কিউরেটর বা কিউরেটিং। কিউরেটিংকে পেশাদারিত্বে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো সমসাময়িক কিউরেটোরিয়াল চর্চার ওপর আলোচনাভিত্তিক আয়োজন এশিয়ান কিউরেটোরিয়াল ফোরাম। এ ফোরামে সমবেত হয়েছেন এশিয়ার ১১টি দেশের মোট ১৩ জন পেশাদার শিল্পী ও কিউরেটর। শিল্প কিউরেটিং বিষয়ে বিভিন্ন ধারণা ও চর্চার ক্ষেত্র নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনার মাধ্যমে গুরুত্ব তুলে ধরছেন এ কিউরেটর ও শিল্পীরা। তাদের সঙ্গে রয়েছে দেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প উদ্যোগ এবং প্রতিষ্ঠান যেমন ছবি মেলা, ঢাকা আর্ট সামিট, কলাকেন্দ্র ইত্যাদি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থাপনা। যৌথভাবে এ ফোরামের আয়োজন করছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, বৃত্ত আর্টস ট্রাস্ট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, তাইওয়ানের কুয়ান্দু চারুকলা জাদুঘর এবং দেশটির জাতীয় সংস্কৃতি ও শিল্পকলা ফাউন্ডেশন। বৃহস্পতিবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে তিনদিনের এ ফোরামের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী আয়োজনে বক্তব্য রাখেনÑ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী এবং কুয়ান্দু চারুকলা জাদুঘরের পরিচালক তেহ আই চু। প্রথম দিনের আয়োজনে দুটি পর্ব ছিল। প্রথম পর্বের আলোচনায় এশিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় (পাবলিক বা প্রাইভেট; অথবা অলাভজনক বা বাণিজ্যিক) একজন কিউরেটরের বিভিন্ন মুখী ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়। এ আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের বৃত্ত আর্টস ট্রাস্টের তৈয়বা বেগম লিপি, নেপালের কাঠমান্ডু ট্রিয়েনালের প্রতিষ্ঠাতা সঙ্গীতা থাপা এবং ব্যাংকক আর্ট এ্যান্ড কালচার সেন্টারের প্রদর্শনী বিভাগের হেড পিচায়া সুফাভানিজ। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ভিস্যুয়াল আর্ট বিভাগের উপদেষ্টা হেড্রিয়ান ডিয়াজ। দ্বিতীয় পর্ব আলোচনার পূর্বে বাংলাদেশের শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান গ্যালারি কলাকেন্দ্র নিয়ে ৩০ মিনিটের একটি উপস্থাপনা পরিবেশন করেন। দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল কীভাবে একজন কিউরেটর তার কাজের মধ্যে আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটের প্রতিফলন ঘটায়। শিল্পে বিশ্বায়নের প্রভাব এবং আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটের সমন্বয় সাধনের বিষয়টি একজন কিউরেটরের জন্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা আলোচকরা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বর্ণনা করেছেন। এ পর্বের আলোচনায় অংশ নেন মালদ্বীপের কিউরেটর উমাইর বাধিউ, চীনের গুয়াংজু একাডেমি অফ ফাইন আর্টসের ফেং ফেং এবং মালয়েশিয়ার লস্টজেন্স নামক আর্ট স্পেসের এর প্রতিষ্ঠাতা লিয়ান হেং ইয়হ। এ পর্ব সঞ্চালনা করবেন তাইওয়ানের কুয়ান্দু জাদুঘরের কিউরেটর নবুও তাকামরি। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয় বাংলাদেশী শিল্পী শেহজাদ চৌধুরীর লঙ্গিচিউড ল্যাটিচিউড নামক আর্ট প্লাটফর্মের ওপর একটি উপস্থাপনা পরিবেশনার মাধ্যমে। আজ শুক্রবার ফোরামের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচী শুরু হবে আগামীকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা আর্ট সামিটের ওপর একটি উপস্থাপনা পরিবেশনার মাধ্যমে। কাল শনিবার মূল আলোচনা পর্ব থাকবে একটি এবং এরপর সকল কিউরেটর ঢাকার কয়েকটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান ও গ্যালারি ঘুরে দেখবেন। বাংলাদেশ ছাড়া ফোরামে অংশগ্রহণকারী অন্য কয়েকটি দেশ হলোÑ চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভারত। ১৪ নারী চিত্রশিল্পীর প্রদর্শনী ॥ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের জয়নুল গ্যালারি-১ এ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো ১৪ নারী চিত্রশিল্পীর দলবদ্ধ প্রদর্শনী ‘কালারস’। বিকেলে সাত দিনের এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চারুকলা অনুষদের ডিন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন, চিত্রশিল্পী অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য, শিল্প সমালোচক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক। সমকালীন নারী চিত্রশিল্পীদের সংগঠন ‘কালারস রিফ্লেশন অব লাইফ’ এর উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে যাদের চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে তারা হলেনÑ ফারহানা আফরোজ বাপ্পী, ফারজানা ইসলাম মিল্কি, কানিজ সোহানী ইসলাম, মনিদীপা দাশগুপ্তা, মুক্তি ভৌমিক, মর্জিয়া সুমী, মনিরা সুলতানা মুক্তা, শায়লা আকতার, মোর্শেদা হক বকুল, নিশাত চৌধুরী জুঁই, রেহানা ইয়াসমীন শীলা, রেবেকা সুলতানা, রিফাত জাহান কান্তা ও সুকন্যা আইন। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উš§ুক্ত থাকবে প্রদর্শনী।
×