ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুত আমদানি

ভারত-মিয়ানমার ঐকমত্যে পৌঁছাতে এডিবিকে পাশে চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ভারত-মিয়ানমার ঐকমত্যে পৌঁছাতে এডিবিকে পাশে চায় বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুত আমদানিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দুতিয়ালি প্রত্যাশা করেছে বিদ্যুত বিভাগ। নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশ জল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের চেষ্টা করছে। দেশ দুটিই দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে বাংলাদেশী বিনিয়োগ গ্রহণে একমত হয়েছে। কিন্তু উৎপাদিত বিদ্যুত বাংলাদেশে আনতে ভারত এবং মিয়ানমারের ভূখ-ে আন্তঃদেশীয় গ্রিড লাইন নির্মাণের প্রয়োজন পড়বে। ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে মূলত এই আলোচনায় এডিবিকে পাশে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হচ্ছে। এডিবি এবং বিশ্বব্যাংকও আন্তঃদেশীয় গ্রিড লাইন স্থাপনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু দেশগুলোর মধ্যে বহুপাক্ষিক আলোচনা সফল না হওয়ায় এই ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত আমদানি এই অঞ্চলে উদাহরণ হিসেবে দেখা হলেও ত্রিপক্ষীয় ক্ষেত্রে সাফল্য মিলছে না। অর্থাৎ যেসব ক্ষেত্রে তিনটি দেশকে সিদ্ধান্ত নিতে একমত হতে হবে, সেই আলোচনা সফল হচ্ছে না। এর মধ্যে ভারত নিজেদের ভূখ- ব্যবহারে নতুন নীতি গ্রহণ করায় জটিলতা আরও বেড়েছে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে হিমালয় থেকে প্রবাহিত নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে যেসব জলবিদ্যুত প্রকল্প ভারত, নেপাল ও ভুটান তৈরি করছে সেখান থেকে সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আনতে চায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে নেপাল থেকে বিদ্যুত আমদানি করতে চায় এক হাজার মেগাওয়াট। আর ভুটানের জলবিদ্যুত প্রকল্পে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চায়। বাকিটা আনতে চায় ভারতের কাছ থেকে। এ ছাড়া বাংলাদেশে যে বড় বড় বিদ্যুতকেন্দ্র গড়ে ওঠছে সেখান থেকে বাড়তি বিদ্যুত ভারতসহ পার্শ¦বর্তী দেশ মিয়ানমারে রফতানি করতে চায় সরকার। শীতে বিদ্যুতের চাহিদা গ্রীষ্ম থেকে অর্ধেকে নেমে আসে। ফলে শীতকালে ইচ্ছে করলেও বড় বড় বিদ্যুতকেন্দ্র (বেজড লোড পাওয়ার স্ট্রেশন) দিনের পর দিন বন্ধ রাখা সম্ভব হবে না। আবার এ সময় হিমালয় অঞ্চলে বরফ পড়ার কারণে নদীগুলোর পানি থেকে বিদ্যুত উৎপাদনও কমে আসবে। এ সময় বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে গেলেও প্রতিবেশী দেশে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুত রফতানি সম্ভব। কিন্তু ভারতের নীতিগত পরিবর্তনে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ভারত গত ৫ ডিসেম্বর ‘গাইড লাইন অন ক্রস বর্ডার ইলেকট্রিসি’ প্রণয়নের সময় নতুন একটি সিদ্ধান্ত জুড়ে দিয়েছে। ওই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ভারতের ভূমি ব্যবহার করে অন্য কোন দেশ যদি বিদ্যুত নিতে চায়, সেক্ষেত্রে ওই বিদ্যুত প্রকল্পে ভারতের সরকারী বা বেসরকারী কোন কোম্পানির ৫১ শতাংশ মালিকানা থাকতে হবে। যদি ৫১ শতাংশ মালিকানা ভারতের সরকারী বা বেসরকারী কোন কোম্পানির না থাকে তাহলে ভারতীয় ভূমি ব্যবহার করে অন্য কোন দেশ বিদ্যুত নিতে পারবে না। ভারতের নতুন শর্তের কারণে বিপাকে পড়েছে প্রতিবেশীরা। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই ঝাং বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বৈঠক করেন। এতে ভারতের ভূখ- ব্যবহারের আলোচনায় বাংলাদেশের সঙ্গে থাকার আহ্বান জানানো হয়। এসব বিদ্যুত কেন্দ্রে এডিবিও বিনিয়োগ করতে চায়। আলোচনায় প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত তুলে ধরেন। তিনি বলেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ করে তা কাম্য নয়। দ্রুততর সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এ সময় বিদ্যুত কেন্দ্রের আধুনিকায়ন, জলবিদ্যুত, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সোলার ও উইন্ড পাওয়ার, বর্জ্য হতে বিদ্যুত, সোলার পার্ক, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, এসপিএম, গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন, পাইপ লাইনে তেল সঞ্চালন, ব্লু ইকোনমি, ইআরপি, স্ক্যাডা, এনএলডিসি, টাপি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস চেয়ারম্যান বাংলাদেশে গৃহিত প্রকল্পসমূহ ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে যথাসম্ভব কম সময়ে করার উদ্যোগ নেয়া হবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে কিভাবে আরও সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে একটি স্ট্যাডি চলছে। এডিবি জ্বালানিসহ শিল্প, পল্লী উন্নয়ন, যোগাযোগ ও আইসিটি খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। ক্যাপাসিটি উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি বা রিফর্ম বিষয়ক সাপোর্ট লাগলে করা হবে। তিনি জ্বালানির বহুমুখী ব্যবহার ও বর্জ্য জ্বালানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ইমিশন (কার্বনসহ অন্যান্য গ্যাস) নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সহযোগিতা করা হবে। সাক্ষাতকালে, অন্যদের মাঝে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উভয় বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা ও এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজুহিকু হিগোচি উপস্থিত ছিলেন।
×