ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ আসছে মালয়েশিয়া থেকে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ আসছে মালয়েশিয়া থেকে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজ আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশে আসছে। টেকনাফে এই জাহাজ পৌঁছালে তৃতীয় কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহ করা হবে। এদিকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য ত্রাণবাহী মালয়েশিয়ার জাহাজটি বৃহস্পতিবার মিয়ানমারে পৌঁছেছে। তবে সেখানে জাহাজটি পৌঁছানোর পর মিয়ানমারের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়া সরকার মিয়ানমার ও বাংলাদেশে একই জাহাজযোগে খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে। এই জাহাজ বৃহস্পতিবার ইয়াঙ্গুনের কাছে থিলোয়া বন্দরে পৌঁছেছে। আজ শুক্রবার থেকে জাহাজটি পণ্য খালাস করবে। তবে এই এটি বন্দরে পৌঁছানোর পরেই সেখানের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ত্রাণ পাঠানোর প্রতিবাদ জানিয়েছে। বৌদ্ধভিক্ষুরা বিক্ষোভের সময় বলেছেন, মিয়ানমারে কোন রোহিঙ্গা নেই। আমরা সকলকেই জানাতে চাই, এখানে কোন রোহিঙ্গা থাকে না। ত্রাণসামগ্রী যেন মিয়ানমারে না নামানো হয়, সে দাবিও জানিয়েছে তারা। এদিকে মালয়েশিয়ার ওই ত্রাণবাহী জাহাজটি আগামী সপ্তাহ নাগাদ বাংলাদেশে আসবে বলে জানা গেছে। মিয়ানমারে জাহাজের অর্ধেক ত্রাণসামগ্রী নামিয়ে দিয়ে জাহাজটি বাংলাদেশে আসবে। টেকনাফে জাহাজটি ভিড়বে। থিলোয়া বন্দর থেকে টেকনাফে পৌঁছাতে জাহাজটির সময় লাগবে তিন দিন। তবে বাংলাদেশ সরকার সরাসরি এই ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করবে না বলে জানা গেছে। কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মাঝে এই ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে। মালয়েশিয়ার মুসলিম সংগঠনগুলোর পাশাপাশি দেশীয় এবং বিদেশী ত্রাণ সংগঠন রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। আর এই ত্রাণ পাঠানোর উদ্যোগ নেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। গত ৩ ফেব্রুয়ারি এই ত্রাণবাহী জাহাজ মালয়েশিয়া থেকে মিয়ানমার অভিমুখে রওনা দেয়। এই জাহাজটির নাম নটিক্যাল আলিয়া। জাহাজে খাবার ও ওষুধসহ ২ হাজার ২০০ টন প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। ত্রাণসামগ্রীর অর্ধেক মিয়ানমারে নামিয়ে দেয়া হবে। এরপর জাহাজটি তিন দিনের যাত্রায় বাংলাদেশের টেকনাফ বন্দরের দিকে রওনা হবে। মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজটি বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে বলে আগে থেকেই আশঙ্কা করা হয়েছিল। জাহাজটিকে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটওয়ে অভিমুখে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি মিয়ানমার সরকার। অনেক ভেবেচিন্তে মিয়ানমার সরকার ইয়াঙ্গুনের কাছে থিলোয়া বন্দরে জাহাজ ভেড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল। তবে এরপরেও থিলোয়া বন্দরে বৃহস্পতিবার জাহাজ পৌঁছালে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিক্ষোভ প্রকাশ করে। মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর দমনপীড়ন নিয়ে প্রকাশ্যেই কড়া সমালোচনা করে এসেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নজিব রাজাক। মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে আউং সান সু চির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর দমনপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সহিংসতার বেশির ভাগ খবরই অতিরঞ্জিত বলে মন্তব্য করেছে মিয়ানমার সরকার। তাছাড়া রাখাইন রাজ্যে সংঘাতও ওই রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মিয়ানমার সরকার অভিহিত করেছে। গত বছর ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর থেকে রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চরম নিপীড়ন শুরু করেছে সেনাবাহিনী। শ’ শ’ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণ করা হয়েছে বহু নারীকে। জীবন বাঁচাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। মালয়েশিয়া সরকার বর্তমানে নিবন্ধিত এক লাখ ৪৯ হাজার ৪৭৪ শরণার্থীর দেখভাল করছে। মালয়েশিয়ার সরকারী হিসাবে, তাদের শরণার্থীদের মধ্যে ৫৫ হাজার ৫৬৫ জনই রোহিঙ্গা মুসলিম। মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে কাজ দেয়ার প্রকল্প আগামী মার্চ মাস থেকে শুরু হবে। এর আওতায় ৩০০ রোহিঙ্গাকে কৃষি ও উৎপাদন খাতগুলোতে কাজ দেয়া হবে। এদিকে ৯ অক্টোবরের পর থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। আর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ৩০ হাজার শরণার্থী রয়েছেন। এর আগে থেকেই আরও তিন লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজার থেকে সরিয়ে নিয়ে হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গারচরে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
×