ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ রাজধানী ঢাকায় এখন চলছে অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা। বিভিন্ন আয়োজন থেকে শ্রদ্ধা ভালবাসায় স্মরণ করা হচ্ছে ভাষা শহীদদের। তবে বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহরের প্রধান আয়োজন অমর একুশে গ্রন্থমেলা। শফিক রফিক জব্বারদের স্মৃতিবিজড়িত মেলা বৃহস্পতিবার নবম দিন পার করেছে। এদিনও বহু মানুষের উপস্থিতিতে মুখর ছিল বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বিকেলে মেলায় প্রবেশ করতেই দেখা হয় তাম্রলিপি প্রকাশনীর কর্নধার তরিকুল ইসলাম রনির সঙ্গে। গত বছরের মেলায় তরুণ প্রকাশক বলেছিলেন, বড় একটি কাজ করছেন। বিষয় মুক্তিযুদ্ধ। ‘৬৪ জেলার কিশোর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ গ্রন্থ প্রকাশের এই কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এই সিরিজটি অপেক্ষাকৃত কম বয়সী ও কিশোর পাঠকদের উপযোগী করে লেখা। প্রকাশনার এটি মূল বৈশিষ্ট্য। কথা বলতে বলতেই রনি প্রস্তুত হচ্ছিলেন প্রকাশনা উৎসবে যাওয়ার জন্য। বললেন, একটু পরই আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ উন্মোচন করা হবে। তার চোখে মুখে আনন্দের চ্ছটা। একটা পরিতৃপ্তি। এর পর কয়েকটি স্টল ঘুরে মুক্তমঞ্চের পাশে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই চলে এসেছেন। মঞ্চে ছিলেন শিশু-কিশোরদের প্রথম পছন্দ খ্যাতনামা লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও জনপ্রিয় উপন্যাসিক আনিসুল হক। ৬৪ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পাদনার কাজ করেছেন আমিনুর রহমান সুলতান। তিনিও ছিলেন মঞ্চে। সামান্য কথা বলে শুরুটা করে দেন প্রকাশক। পরে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, একটা সময় ছিল দেশে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা যেতো না। মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের পরিচয় দিতেন না। রাজাকাররা দেশের মন্ত্রী হয়েছিলেন। এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনালালিত সময় ফিরে এসেছে। এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের ভবিষ্যত গড়বার সময়। এ কাজে নতুন প্রকাশনাটি ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন আনিসুল হক। প্রকাশক জানান, পুরো সেটটি ১০ হাজার টাকায় মেলা থেকে সংগ্রহ করা যাবে। কেউ একটি সংগ্রহ করতে চাইলে, সেটির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ১২৫ নতুন বই ॥ মেলার নবম দিনে মেলায় এসেছে ১২৫টি নতুন বই। এগুলোর মধ্যে গল্প ২৪, উপন্যাস ২৭, প্রবন্ধ ৭, কবিতা ২৮, গবেষণা ২, ছড়া ৫, শিশুসাহিত্য ১, জীবনী ৩, মুক্তিযুদ্ধ ২, নাটক ২, বিজ্ঞান ১, ভ্রমণ ১, ইতিহাস ২, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ২, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ১ এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর ১৭টি বই ছিল। মোড়ক উন্মোচন ॥ মেলায় এদিন মোট ১৯টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরে দুটি গ্রন্থ এসেছে অনন্যা থেকে। ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ ও ‘ইউরোপের পথে পথে’ শিরোনামের বই দুটির মোড়ক উন্মোচন করেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। নির্বাচিত বই ॥ মেলায় প্রতিদিন আসা বই থেকে কিছু বই নির্বাচন করা মুশকিলের কাজ। খোঁজাখুঁজির পর কয়েকটি বইয়ের নাম পাওয়া যায়। মেলায় এ্যাডর্ন এনেছে আ ম ম ফজলুর রাশিদের অনুবাদ ‘দি আর্ট অব ওয়ার।’ খুব প্রাচীন এবং অবশ্যই ব্যতিক্রমী একটি গ্রন্থ। মূল লেখক চীনের নাগরিক সান তিজু। ষষ্ঠ শতাব্দীর সফল জেনারেল এবং সামরিক কৌশলবিদ হিসেবে খ্যাতি তার। তার রচনা চীন ও জাপানের সামরিক বাহিনীতে বিপুলভাবে গ্রহণযোগ্য হয়। মাও সে তুং তার গেরিলা অভিযানের সাফল্যের পেছনে গ্রন্থটির ভূমিকা ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন। নেপোলিয়ন স্টালিন, ফিদেল ক্যাস্ত্রোর মতো নেতারাও যুদ্ধ কৌশল নির্ধারণে বইটির সহায়তা নিয়েছেন বলে জানা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হওয়া বইটি প্রথমবারের মতো বাংলায় অনুবাদ করল এ্যাডর্ন। একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে মেলায় এসেছে ‘বাংলাদেশ প্রায়োরিটিজ।’ মূল লেখক বিয়র্ন লোমবোর্গ। তার পরিচয়টা উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট। ব্যয়-সুবিধার মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যার সমাধান, সেরা সমাধানের শ্রেণীবিন্যাস করেছেন। টাইম ম্যাগাজিনের মূল্যায়নে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী শত ব্যক্তিত্বের একজন লোমবোর্গ। তার লেখা বইয়ের অনুবাদ করেছেন মোসা. তাসনুভা বাশার তন্বী। বইতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পরও বাংলাদেশের যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বইটির মূল্য ২৭৫ টাকা। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উৎস থেকে প্রকাশিত হয়েছে দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ লেখক বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বছর।’ সিলেটে জন্ম নেয়া বিপিনচন্দ্র ১৮৮৫ সাল থেকে কংগ্রেসের প্রগতিশীল অংশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সুদৃঢ় অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের নেতা। ‘সত্তর বছর’ পাঠে তাঁকে জানার সুযোগ পাবেন এই প্রজন্মের পাঠক। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে মেলায় এসেছে সদ্য প্রয়াত কবি সৈয়দ শামসুল হকের নতুন কাব্যগ্রন্থ ‘কর্কটবৃক্ষের শব্দসবুজ শাখায়।’ গত বছরের জুন জুলাই মাসে লেখা কবিতা। বইটি এখন পর্যন্ত প্রকাশিত তাঁর শেষ কাব্যগ্রন্থ বলেই ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ করার মতো তথ্য, বইতে যুক্ত করা হয়েছে কবির হাতে লেখা কবিতার খসড়া। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলা ভাষায় ইতিহাস চর্চা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবর রহমান। আলোচনা করেন অধ্যাপক মেসবাহ কামাল ও ড. আশফাক হোসেন। সভাপতিত্ব করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন, দিল আফরোজ রেবা, আকরামুল ইসলাম এবং পাগলা বাবলু।
×