ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম দিনেই বড় সংগ্রহ ভারতের

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রথম দিনেই বড় সংগ্রহ ভারতের

মিথুন আশরাফ, হায়দরাবাদ থেকে ॥ একটি ঘটনাই বলে দিতে পারে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার হায়দরাবাদ টেস্টের চালচিত্র। যখন চা বিরতি হয়েছে, তখন ড্রেসিংরুমে যাওয়ার সময় বিরাট কোহলি ও মুরালি বিজয় খুনসুটি করছেন আর প্রাণখুলে হাসাহাসি করছেন। আরেকদিকে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা নীরবে, হাঁটিহাঁটি পা পা করে, হতাশ ভঙ্গিতে ড্রেসিংরুমের দিকে এগিয়ে চলেছেন। দিনশেষে প্রথমদিনের দুই সেরা ব্যাটসম্যান হয়েছেন কোহলি ও বিজয়ই। দুইজনই শতক করেছেন। কোহলি ১১১ রান করে অপরাজিত আছেন। আর ১০৮ রান করে আউট হয়ে গেছেন বিজয়। তাদের এ দুই শতকে ভারত প্রথমদিনেই ৩ উইকেট হারিয়ে ৩৫৬ রান করে ফেলেছে। দিনশেষে কোহলির সঙ্গে বিজয় না থাকতে পারলেও আছেন আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আজিঙ্কেয়া রাহানে (৪৫*)। রাহানেকে নিয়েই দিনশেষে হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়েন কোহলি। বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের হতাশাও যেন আরও বাড়ে। আফসোস, হাহাকার, হতাশা; বাংলাদেশ-ভারত ‘ঐতিহাসিক’ টেস্টের প্রথমদিনে বাংলাদেশ শিবিরে শুধু এ সবই কানে বাজছে। হওয়ারই কথা। প্রথমদিনে কোন সুখস্মৃতি যে নেই। একদিনেই যদি প্রতিপক্ষ শিবির সাড়ে তিন শ’ রান করে ফেলে, তাহলে কি আর কোন সুখ থাকে। তবে এ অবস্থা নিজেদের ভুলেই হয়েছে। যে ভুলগুলো বারবার হচ্ছেই। শুরুতে তাসকিন ঝড়। এরপর মিরাজের ভুল। সেই ভুলে বিজয়-পুজারার বড় জুটিতে ভারতের ভিত শক্ত হয়ে ওঠা। মাঝে মিরাজের ভুলের খেসারত দেয়া। তাতে তাইজুলের স্পিন বিষ যুক্ত হওয়া। তার আগেই বিজয়ের শতক করে ফেলা। শেষে আবার কোহলির শতকের সঙ্গে কোহলি-রাহানে বড় জুটিতে ভারতের রানের পাহাড় গড়া। এই সবই ঘটেছে প্রথমদিনে। তাতে করে পুরো দিনটিই ভারত দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশের যে আশা জাগানিয়া কোন পারফর্মেন্সই নেই। টস জিতে যখন ব্যাটিং নিয়েছে ভারত, দিনের শুরুতেই লোকেশ রাহুলকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন। গতির ঝড়ে রাহুল বোকা বনে যান। তাই বলে কি সবাই এমন বোকা নাকি! অবশ্যই না। তবে বোকা বানানো সম্ভব ছিল। যদি ৩৫ রানে থাকা পুজারাকে রানআউট করতে পারতেন মিরাজ। শর্ট মিড উইকেটে বল ঠেলে দিয়ে রানের জন্য দৌড় দেন বিজয়। পুজারাও রান নিতে যান। কামরুল ইসলাম রাব্বি দ্রুতই বল ঠেলে দেন বোলার মেহেদী হাসান মিরাজকে। শুধু উইকেটে বল লাগানো গেলেই হত। কিন্তু বল লাগানোর আগে স্ট্যাম্পে বল লাগানোর ভাবনাতেই গোলমাল বাধিয়ে ফেলেন মিরাজ। রানআউট থেকে বেঁচে যান পুজারা। দলের ৬৭ রানের সময় পুজারা আউট হয়ে গেলে বিপদেও পড়তে পারত ভারত। উল্টো বিজয়-পুজারা মিলে ১৭৮ রানের জুটি গড়ে ফেললেন। মিরাজের ভুলে যা ভারতকে ১৮০ রানে নিয়ে যায়। মিরাজই ভুলের খেসারত দেন। শতক থেকে ১৭ রান দূরে থাকা পুজারাকে (৮৭) সাজঘরে ফেরান তিনিই। কিন্তু তাতে কি আর লাভ হলো। দ্বিতীয় উইকেটেই বড় জুটি তো হয়ে গেল। যে জুটি ভারতকে শক্ত অবস্থানেও নিয়ে গেল। এ জুটি ভাঙ্গার পরই ব্যাট হাতে নামেন এ মুহূর্তে বিশ্ব সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। বিজয়ের সঙ্গে অবশ্য বেশিক্ষণ শখ্য গড়া হয়নি কোহলির। আসলে তাইজুল গড়তে দেননি। তবে বিজয় যে টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম শতকটি তুলে নেন, ১৬০ বলে ১২ চার ও ১ ছক্কায় ১০৮ রান করে আউট হন, সেটি কোহলি থাকতেই হয়। অধিনায়কের সামনেই শতক উদযাপন করেন বিজয়। ততক্ষণে অবশ্য ২৩৪ রানে চলে যায় ভারত। বাকি সময়টা শুধু ভারতেরই। বাংলাদেশের যেখানে কোন স্থানই নেই। কোহলি মন ভরিয়ে দেন ভারত দর্শকদের। সুন্দর সব শট খেলে এগিয়ে যেতে থাকেন। একটা সময় গিয়ে শতকই করে ফেলেন। ক্যারিয়ারের ১৬তম টেস্ট শতক তুলে নেন। বাংলাদেশ যখন ২০০০ সালে প্রথম টেস্ট খেলে ভারতের বিপক্ষে, সেই ম্যাচের অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। ভারতের মাটিতে যখন বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলছে, এই ম্যাচের নেতৃত্বে আছেন কোহলি। শতক করে গাঙ্গুলীর সমান ১৬ শতক করা হয়ে যায় কোহলির। কোহলির সঙ্গে দারুণ সঙ্গ দিয়ে যান আজিঙ্কেয়া রাহানে। যাকে খেলানোর জন্য সর্বশেষ টেস্টে ভারতের হয়ে অপরাজিত ৩০৩ রান করা কারুণ নায়ারকেই বসিয়ে রাখা হয়েছে। কি দুর্ভাগ্য কারুণের। তবে রাহানেকে যে নেয়াটা বৃথা নয়, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। কোহলির সঙ্গে উইকেট আঁকড়ে থেকে চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১২২ রানের জুটি গড়েছেন। তাতেই ভারত সাড়ে তিন শ’ রানের বেশি একদিনেই করে ফেলে। বাংলাদেশও যে তাতে বিপদে পড়ে গেছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। প্রথমদিনে ১৪১ বলে ১২ চারে ১১১ রান করে অপরাজিত থাকা কোহলির সঙ্গে আজ দ্বিতীয়দিনে ব্যাট হাতে নামবেন রাহানে। প্রথমদিনেই রানের চাপা লেগেছে বাংলাদেশের গায়ে। আজ না জানি রানের পাহাড় কত বড় হয়।
×