ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইমাম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মুসলিম দেশগুলোকে রক্তাক্ত করছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মুসলিম দেশগুলোকে রক্তাক্ত করছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মুসলিম দেশগুলোকে রক্তাক্ত করছে। এই জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস উচ্ছেদ করে দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে তিনি বৃহস্পতিবার ওলামা-মাশায়েখসহ ইসলামী চিন্তাবিদদের আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা ওলামা সমাজের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কথা মানুষ শুনবে, আপনাদের কথা মানুষ মানবে। আমি আহ্বান করেছিলাম, জনগণ এ ব্যাপারে সাড়া দিয়েছেন এবং বেশকিছু কাজও করেছেন। আমি চাই, এটা আরও ব্যাপকভাবে প্রচার করা।’ খবর বাসস’র। ‘আমরা চাই, আপনারা যদি মানুষকে ভালভাবে বোঝান তাহলেই আমরা এই দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ চিরতরে নির্মূল করতে পারব এবং সে বিশ্বাস আমার আছে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় ইমাম সম্মেলন ও শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের সনদ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আজকের দিনে বড় একটি সমস্যা মাদকাসক্তি এবং অপরটি সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ। এদের হাত থেকে আমাদের শিশুদের, যুব সমাজ তথা দেশবাসীকে রক্ষা করতে হবে। সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছেন। কিন্তু, সব থেকে বড় শক্তি মানুষের শক্তি। মানুষের ভেতর যদি সচেতনতা থাকে, যদি এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাহলে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দেশ থেকে চিরতরে দূর হবে।’ শেখ হাসিনা জঙ্গীবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আমরা সমগ্র বিশ্বকে দেখাতে চাই, বাংলাদেশই পারবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে সত্যিকার ইসলাম ধর্মের মূল মর্মবাণী মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেনÑ পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. বজলুল হক হারুন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল জলিল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। আরও বক্তৃতা করেনÑ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামিম মো. আফজাল এবং ইমাম ও ওলামায়ে কেরামগণের পক্ষে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ এরশাদ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৫-১৬ বছরের ৬ জন শ্রেষ্ঠ ইমাম এবং ২০১৪-১৫ সালের ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত দেশব্যাপী শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদপত্র বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ আলেম ও ওলামা মাশায়েখ সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি সরকারের সহযোগিতায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মডেল মসজিদ কাম ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এই মসজিদ কমপ্লেক্সে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনসহ মহিলাদের জন্য পৃথক নামাজ কক্ষ, মুসলিম পর্যটক ও মেহমানদের বিশ্রামাগার থাকবে। এখানে হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইসলামী লাইব্রেরি ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’ তিনি বলেন, তার সরকার মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে ১ হাজার ৫০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৭৬ হাজার ৬৬০ জন আলেম-ওলামার কর্মসংস্থান হয়েছে। ৯৬ লাখ ১৬ হাজার শিক্ষার্থী মসজিদভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪ লাখ ৫০ হাজার কুরআনুল করীম বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এক হাজারেরও বেশি মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ৮০টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। আমরা জাতীয় শিক্ষা নীতিতে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ডিজিটালে রূপান্তরিত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি ডিজিটাল আর্কাইভ করা হয়েছে। দেশের সকল মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা ও দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের তথ্য সম্বলিত একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বায়তুল মোকাররম মসজিদে ১৭০ ফুট সুউচ্চ মিনার নির্মাণ করেছে। মসজিদটিতে ৫ হাজার ৬০০ জন মহিলার নামাজ আদায়ের জন্য মহিলা নামাজ কক্ষ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ এর সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ চলছে। চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ সম্প্রসারণ এবং আধুনিকীকরণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তার সরকার বাংলাদেশে ‘দারুল আরকাম’ নামে মসজিদভিত্তিক বিশেষায়িত প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতি জেলায় একটি করে আরবী ভাষা শিক্ষা কোর্স চালুর বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘ভিক্ষুক জাতির কোন ইজ্জত থাকে না।’ কাজেই আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ তো করবোই, প্রতিটি মানুষের ঘরে যেন খাবার পৌঁছায় ইনশাআল্লাহ সে ব্যবস্থাও আমরা করে দেব এবং আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছিলাম। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে শুরু হয় হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। অবৈধ সরকারগুলো ইসলামের মর্মবাণী উপেক্ষা করে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটায়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করে ইসলামের উন্নয়নে কাজ শুরু করি। দেশে ইসলামের প্রসারে জাতির পিতার উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্ব ইজতেমার জায়গা ও কাকরাইল মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য জমি বরাদ্দ করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি জামিয়া মাদানিয়া দারুল উলুম যাত্রাবাড়ী কওমী মাদ্রাসার জন্য জমি বরাদ্দ করেন। হজযাত্রীরা যাতে স্বল্প ব্যয়ে হজ করতে পারেন, এ জন্য ‘হিজবুল বাহার’ নামে একটি জাহাজ ক্রয় করেন। যা পরবর্তীকালে জেনারেল জিয়া প্রমোদতরীতে পরিণত করে। ‘জিয়াই দেশে মদ ও জুয়ার অবাধ লাইসেন্স প্রদান করেছিলেন’, অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
×