ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দলের যৌথসভায় এরশাদের আহ্বান

আমি সেনাপতি, আপনারা সৈনিক হয়ে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনুন

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আমি সেনাপতি, আপনারা সৈনিক হয়ে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দলের জেলা নেতাদের নিজ নিজ এলাকার প্রার্থী তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন জাতীয় পার্টির চেয়াম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পাশাপাশি প্রার্থীদেরও নিজের নাম পাঠানোর অনুরোধ করেছেন তিনি। আগামী নির্বাচন মানেই ক্ষমতায় যাবার যুদ্ধ এমন মন্তব্য করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, সামনের নির্বাচনে আমি থাকব সেনাপতি। আপনারা সৈনিক হয়ে দলকে ক্ষমতায় আনবেন। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় না যাওয়া পর্যন্ত দেশে শান্তি ফিরে আসবে না। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা কমিটি ও উপজেলা কমিটির যৌথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা দলের নেতাকর্মীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এভাবে দল চলতে পারে না। কেন্দ্রীয় নেতাদের ম্যানেজ করে জেলা কমিটি অনুমোদন নিয়ে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কোন কাজ করবেন না, তা চলবে না। এমন প্রতারণা আর চলতে দেয়া হবে না। মানুষ আমাদের চায়। কিন্তু আপনারা মাঠে না থাকায় দল দুর্বল। নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা কারও দয়ায় আর বাঁচতে চাই না। আওয়ামী লীগের নেতাদের পাঁচ হাজার মামলা বাতিল করা হয়েছে। আমরা শক্তি দেখাতে পারলে সরকার এরশাদের মামলা ওঠাতে বাধ্য হবে। দলকে শক্তিশালী করতে সাত দিনের মধ্যে সাংগঠনিক কর্মসূচী ও তিন মাসের মধ্যে দলকে চাঙ্গা করার ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি এমন একটি শক্তি যা দেশে প্রকৃত শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। তাই জাতীয় পার্টির নামকে ইতিহাসে লেখা দেখতে চাই। জাতীয় পার্টি কোন রাজনৈতিক দলের বন্ধু নয়, আবার কারও শত্রুও নয়, এমন মন্তব্য করে এরশাদ বলেন, আমরা আমাদেরই বন্ধু। আমাদের দুর্বল মনে করে কোন রাজনৈতিক দল হাত বাড়ায় না। তাই গ্রামে গ্রামে আমাদের সমর্থন বাড়াতে হবে। আর এই সমর্থন বাড়ানোর মাধ্যমে ইতিহাসের খাতায় জাতীয় পার্টির নাম দেখতে চাই। নির্বাচন প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, সরকারী দলের কোন নির্বাচন কমিশন জাতীয় পার্টির সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেনি। জাতীয় পার্টিকে সুষ্ঠু নির্বাচন করতেও কোন সহযোগিতা করেননি। তবে আগামীতে নতুন নির্বাচন কমিশনের কাছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করছি। আর আমরাও নির্বাচনের জন্য দক্ষ জনবল গঠন করছি। একই সময় জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারমম্যার রওশন এরশাদ বলেন, আমাদের জাতীয় পার্টিতে যে শক্তি আছে তাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। কারণ আগামীতে জাতীয় পার্টিকে তরুণ প্রজন্মই নেতৃত্ব দিবে। তাই পার্টিতে যে সমস্যা আছে তা অতিদ্রুত সমাধান করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত জানিয়ে এরশাদ বলেন, আমরা এই ইসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, তিনি কথা দিয়েছেন সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। আমরাও তা চাই। এরশাদ বলেন, নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা না কি জাতীয় পার্টির প্রস্তাব থেকে এসেছে, পত্রিকায় এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে আমি খুশি হয়েছি, আমাদের নামের প্রস্তাব থেকে সিইসি হয়েছে। আমরা চাই তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। আসন্ন গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের এটাই প্রথম নির্বাচন। এ নির্বাচনে যদি ইসি নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে না পারে তাহলে জাতি তাদের ক্ষমা করবে না। আগামী ২২ মার্চ গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নেতাকর্মীদের কেন্দ্রে পাহারা বসানোর নির্দেশ দেন তিনি। বলেন, গাইবান্ধা থেকেই আমাদের বিজয় কেতন উড়ুক। এরশাদ বলেন, ২০০১ সালে আমাকে নির্বাচন করতে দেয়া হয়নি। অথচ আওয়ামী লীগ আমাদের সমর্থনেই ক্ষমতায় এসেছিল। আমাদের কোন বন্ধু নেই উল্লেখ করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় পার্টি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে এবং শক্তিশালী হতে না পারে এই বিষয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি এক। তাই আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে। তিনি আরও বলেন, ২৬ বছর ক্ষমতার বাইরে। সেনাপ্রধান ছিলাম, রাজনীতিবিদ হয়েছি। কিন্তু এ পথ খুব পিচ্ছিল। বহু ঘাত-প্রতিঘাত অবিচার সহ্য করে আমরা আজও টিকে আছি। জাতীয় পার্টি আগের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা সারাদেশে প্রার্থী বাছাই কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছি। তিনি জেলা নেতাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমাদের প্রার্থী সংকট। আপনারা আলোচনা করে নিজ নিজ এলাকার সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নামের তালিকা দ্রুত কেন্দ্রে পাঠাবেন। যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তারা নিজ থেকেই নামের তালিকা পাঠাবেন। সবার নাম নিয়ে আলোচনা করে প্রার্থী ঠিক করব। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, আমাদের হাসির সময় এসেছে। আমার মনে এখন যন্ত্রণা নেই। ভবিষ্যতের জন্য সুন্দর দিন দেখছি। রাজধানী ঢাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি যানজটের শহর। পৃথিবীতে এত শহরের মধ্যে এমন যানজটের শহর আছে কিনা জানা নেই। প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা প্রচলন করা গেলে যানজটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেত। সমস্যা হলো এ প্রস্তাব আমি দেয়ায় তা বাস্তবায়ন হবে না। তিনি বলেন, আগামীর ভোট যুদ্ধে সুস্থ সৈনিক প্রয়োজন। আমি সেনাপতি আপনারা সৈনিক হয়ে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনবেন। আগামী নির্বাচন মানেই ক্ষমতায় যাওয়ার যুদ্ধ একথা উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। সব দিন কাজে লাগাতে হবে। আমরা জাতীয় পার্টির বিজয় নিশ্চিত করতে চাই। আশাকরি সকলের সহযোগিতায় তা সম্ভব হবে। দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি সাম্প্রদায়িকও না অসাম্প্রদায়িকও না। আমরা মধ্যপন্থী। আওয়ামী লীগ নিজেকে অসাম্প্রদায়িক দাবি করে। অথচ তারা ক্ষমতাসীন হয়েও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করতে পারেনি। আমাদের বালা হয় জাতীয় পার্টি ক্ষমতায থাকতে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছে। একারণে আমরা যদি সাম্প্রদায়িক হই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও সাম্প্রদায়িক। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, জিয়াউদ্দন আহমেদ বাবলু, এসএম ফয়সল চিশতি, তাজ রহমান, উপদেষ্টা শামীম হায়দার পাটোয়ারি, যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহিয়া চৌধুরী এমপি, আমির হোসেন ভূঁইয়া এমপি, ফখরুল আহসান শাহাজাদা, ইসহাক ভূঁইয়া, অন্যন্যা হোসাইন মৌসুমী, একেএম আসরাফুজ্জামান খান, সৈয়দ ইফতেখার আহসান প্রমুখ।
×