ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইইউ থেকে বিদায় প্রক্রিয়া শুরু করতে কমন্স ক্ষমতা দিল মে-কে

আরেক ধাপ এগোল ব্রেক্সিট

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আরেক ধাপ এগোল ব্রেক্সিট

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে তার দেশের বিদায় প্রক্রিয়া শুরু করতে বুধবার তার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের অনুমোদন পেয়েছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ইইউ সদস্যপদ ত্যাগ নিয়ে ৩১ মার্চের মধ্যে আলোচনা শুরু করার পরিকল্পনায় অতিরিক্ত শর্ত যুক্ত করতে ইইউপন্থী রাজনীতিকদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছেন। খবর বিবিসি ও এবিসি নিউজের। পার্লামেন্ট সদস্যরা (এমপি) ৪৯৪-১২২ ভোটের সংশ্লিষ্ট খসড়া আইনটি অনুমোদন করেন। এতে মে-কে ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ (ব্রেক্সিট) নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করায় অধিকার প্রদান করা হয়। এর মধ্য দিয়ে পার্লামেন্টে মে’র ক্ষীণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বড় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো। বিলটি অবশ্যই এখন নিম্নকক্ষ কমন্সসভা থেকে উচ্চকক্ষ লর্ভসভায় যাবে। লর্ডসভায় পাস হলে এটি আইনে পরিণত হবে। তবে সেখানে মে’র সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। এ বিজয় হলো ইইউর সঙ্গে দু’বছরের এক জটিল ও কঠিন আলোচনা শুরু করার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাণিজ্য, অভিবাসন ও নিরাপত্তার মতো ইস্যুগুলো নিয়ে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এটি বিশ্বে ব্রিটেনের ভূমিকা পুনঃনির্ধারণ করবে। ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস বলেন, আমরা আজ রাতে এক ঐতিহাসিক ভোট প্রত্যক্ষ করেছি। তিনি বলেন, বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ইইউ থেকে আমাদের সরে আসার এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে এক শক্তিশালী, নতুন অংশীদারী গড়ে তোলার আলোচনা শুরু করার পক্ষে রয়েছেন। বিলটি কোন সংশোধনী ছাড়া নির্ধারিত সময়মতোই পাস হয়। এর আগে মে’র কনজারভেটিভ পার্টি এক ক্ষুদ্র ধরনের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের মুখে টিকে যায়। বিদ্রোহী সদস্যরা তার কর্তৃত্ব ও আলোচনার কৌশল দুর্বল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এখন বিলটি অনির্বাচিত লর্ডসভায় একই রূপ সুষ্ঠুভাবে পাস হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। সেখানে ২০ ফেব্রুয়ারি বিলটি উত্থাপন করা হবে। সরকার আইন তৈরির প্রক্রিয়াটি ৭ মার্চের মধ্যে শেষ করতে চায়। পিয়ররা এখন খসড়া বিলটি বিবেচনা করবেন। এক সরকারী সূত্রে বিবিসিকে বলা হয়, যদি লর্ডরা লার্ভসভা বিলুপ্ত করে দেয়ার ব্যাপক গণদাবির মুখোমুখি না হতে চান, তবে তাদের অবশ্যই গণতন্ত্র রক্ষা ও এ বিলটি পাস করতে হবে। বিলটি এর শব্দমালা পরিবর্তন ও বাড়তি শর্ত যোগ করার কয়েকবারের চেষ্টার মুখে টিকে থাকে। এদের মধ্যে ছিল যুক্তরাজ্যে ইইউ নাগরিকদের বসবাস করার অধিকার রক্ষা করার প্রস্তাব। এটি ৩৩২-২৯০ ভোট নাকচ হয়ে যায়। তিন বিদ্রোহী কনজারভেটিভ এমপি এক্ষেত্রে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেন। যুক্তরাজ্যের ইইউ ত্যাগের শর্ত নিয়ে এক গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের আনীত এক প্রস্তাবও ৩৪০-৩৩ ভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর লেবার পার্টির নেতা জেরেমে করবিন টুইট করেন, আসল লড়াই এখন শুরু হলো। পরবর্তী দু’বছর লেবার পার্টি ব্রেক্সিটের ফলে যাতে কর্মসংস্থান, জীবনযাত্রার মান ও অর্থনীতি রক্ষা পায়, তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগাবে। কিন্তু স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজন কনজারভেটিভদের অবাধ ক্ষমতা দেয়ার দায়ে করবিনকে অভিযুক্ত করেন। স্টারজন টুইট করেন, আপনি বিন্দুমাত্র ছাড় না পেলেও বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। দুঃখজনক। পার্লামেন্টে কখনও কখনও তিক্ত হয়ে ওঠা বিতর্কে ব্রিটেনের গণভোটপরবর্তী রাজনীতির দুটি দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে : ইইউপন্থী স্কটিশ এমপিদের বিচ্ছিন্নতাবোধ এবং বিরোধী দল লেবার পার্টির মধ্যে বিভেদ। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) এমপিরা বারবার বলেন, পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। এটি স্বাধীনতা প্রশ্নে আরেক গণভোটের দাবিকে উস্কে দিচ্ছে। চূড়ান্ত ভোট গণনার সময় এসএনপি আইনপ্রণেতারা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গীত গুড টু জয় গাইডে শুরু করলে, ডেপুটি স্পীকার লিন্ডসে হোল তাদের সতর্ক করে দেন। আইনটি লেবার পার্টির মধ্যে হতাশা বয়ে আনে। দলটির ব্রেক্সিট প্রশ্নে মে’র পরিকল্পনা সমর্থন করা উচিত, না কোন ভিন্ন চুক্তি অর্জনের জন্য ওই পরিকল্পনায় বাধা দেয়ার চেষ্টা করা উচিত, তা নিয়ে এর মধ্যে ভাঙ্গন দেখা দেয়। লেবার পার্টির ছায়া ব্যবসামন্ত্রী ক্লাইভ লুইসসহ ৫২ জন এমপি দলীয় নির্দেশ অমান্য করে বিলটির বিপক্ষে ভোট দেন। লুইস ছায়া সরকার থেকেও পদত্যাগ করেন।
×