ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রানীনগরে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রানীনগরে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা প্রদর্শনী

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ নওগাঁর রানীনগরে সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে ‘পল্লী শ্রী নিকেতন’ নামে একটি প্রদর্শনী খামার। এই প্রদর্শনী খামারের বিভিন্ন প্রকল্প দেখে উপজেলার অনেক বেকার যুবক উদ্বুদ্ধ হয়ে এখানকার সার্বিক সহায়তায় গড়ে তুলছেন ছোট ছোট খামার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই খামারটি এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। রানীনগর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামে (সাবেক রাজবাড়ী এলাকায়) প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এই প্রদর্শনী খামার। স্থানীয় এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মাঝে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়াই হলো এই খামারের মূল লক্ষ্য। এতে কৃষকরা অতি কম সময়ে কম পরিশ্রমে এই প্রযুক্তি ও পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে আরও অধিক লাভবান হবে বলে মনে করেন খামার কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ২০১৫ সালের মে মাসে এই খামার তৈরির কাজ শুরু করেন স্থানীয় এমপি মোঃ ইসরাফিল আলম। এই জনপদের অবহেলিত কৃষকদের মাঝে আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই মূলত তিনি নিজ উদ্যোগে এই প্রদর্শনী খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই খামারে দেশী-বিদেশী ব্রাহ্মা, ফ্রিজিয়ান, সিন্ধুসহ বিভিন্ন প্রজাতির গরু পালন ও কম সময়ে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এখানে অতি অল্প সময়ে উৎপাদিত হচ্ছে গরুর মাংস ও দুধ। গরুর শেডের টিনের ওপর প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে পানির ঝর্ণা তৈরি করা হয়েছে। এতে করে গরু-ছাগলকে গরমের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অতিরিক্ত কোন বৈদ্যুতিক ফ্যানের প্রয়োজন হয় না। ঝর্ণার পানি একবার প্রবাহিত করলে ২-৩ ঘণ্টা শেড ঠা-া থাকে। এতে করে সাশ্রয় হচ্ছে অর্থ ও বিদ্যুত। এখানে এলাকার কৃষকদের মাটি পরীক্ষার জন্য স্থাপন করা হয়েছে সয়েল টেস্ট ল্যাবরেটরি। যেখানে কৃষকরা বিনামূল্যে তাদের জমির মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করাতে পারবেন। এখানে দেশী-বিদেশী মেষ, ভেড়া ও গ্যারল পালন করা হচ্ছে। টার্কি পাখি, চিনা মুরগি ও দেশী-বিদেশী কবুতর পালন করা হচ্ছে। গুরুর গোবর থেকে তৈরি করা হচ্ছে বায়োগ্যাস আর গোবরগুলোকে জৈব সার হিসেবে বিক্রি ও ব্যবহার করা হচ্ছে। খামারে থাইলান্ডের কেঁচো দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে কম্পোস্ট সার। এই সারগুলো বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৩ হাজার টাকা টন হিসাবে। এখান থেকে এই বিদেশি কেঁচোগুলো সরবরাহও করা হচ্ছে বাইরের বিভিন্ন এলাকায়। খামারে চাষ করা হচ্ছে মাশরুম। অতি অল্প সময়ে এই মাশরুম চাষ করে অধিক লাভ করা সম্ভব। পুষ্টিতে ভরপুর এই মাশরুম নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাইরে বিক্রি করা হচ্ছে। এই মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু তরকারি রান্না করা যায়। এই মাশরুম চাষ করে আমরা চাপ কমাতে পারি অন্যান্য সবজির ওপর থেকে। খামারে রয়েছে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন দেশী-বিদেশী মাছের হ্যাচারি। যেখানে বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন করা হয়। এখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে এবং বাইরে সরবরাহও করা হচ্ছে। রয়েছে দেশী-বিদেশী মুরগির খামার। খামারে পুকুরের পাশ দিয়ে চাষ করা হয়েছে বিভিন্ন ঔষধি ও ফলদ গাছ এবং নানা রকম সবজি। খামারে সবকিছুই তৈরি করা হয় কোন প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য বা সার ছাড়াই। এখানে আধুনিক পদ্ধতিতে পালন করা হচ্ছে কোয়েল পাখি। এই পাখির ডিম ও মাংস এই খামার থেকে কম মূল্যে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। খামারে বর্তমানে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির ১২২টি গরু, বিভিন্ন প্রজাতির ৮০টি ছাগল, ৫টি পাঁঠা ও টার্কি পাখিসহ বিভিন্ন জাতের পাখি রয়েছে প্রায় ৮ হাজার। বর্তমানে এই খামারে এলাকার প্রায় ৫০ জন বেকার মানুষের স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এই খামার পরিদর্শন করার জন্য। সম্প্রতি এই খামার পরিদর্শন করেছেন উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন সরকারী পদস্থ কর্মকর্তাগণ। সম্প্রতি খামার পরিদর্শনকালে সেখানে খামার মালিক ইসরাফিল আলম এমপি, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম গোলাম সারওয়ার, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আবু তালেব, উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আতিকুর রহমান, রানীনগর মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ চন্দন কুমার মহন্ত, আত্রাই এমএম ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মোঃ জুলফিকার আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। খামার মালিক ইসরাফিল আলম এমপি বলেন, আমার নির্বাচিত এলাকা আত্রাই ও রানীনগর উপজেলার মানুষ খুবই অবহেলিত। তাই এই এলাকার বেকার যুবকদের মাঝে উৎসাহ আর কৃষকদের মাঝে আধুনিক ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তিগুলোকে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই আমার এই খামার গড়ে তোলা। আমার আশা এলাকার কৃষকরা এই খামারটি পরিদর্শন করলে অবশ্যই আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির কিছু না কিছু শিখবে আর বেকার যুবকরা অনুপ্রাণিত হয়ে গড়ে তুলবে ছোট ছোট খামার। এতে এক সময় এই এলাকা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
×