ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দাদির ভিক্ষার টাকায় চলে দুই নাতির লেখাপড়া

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দাদির ভিক্ষার টাকায় চলে দুই নাতির লেখাপড়া

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বাবার খবর নেই দীর্ঘদিন। মা মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই ৭৫ বছরের বৃদ্ধা দাদি সালেহা বেগমের ভিক্ষার টাকায় চার সদস্যর ভরণপোষণসহ চলছে দুই নাতির পড়াশোনা। ভিক্ষা করে দুই নাতিকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান বৃদ্ধ দাদি। নিজ বাড়িতে ভিটেমাটি থাকা সত্ত্বেও একমাত্র বসবাসের জন্য ঘর না থাকায় চার সদস্যর ওই অসহায় পরিবারটির আশ্রয় মিলেছে স্থানীয় একটি তুলার মিলে। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ গোবর্দ্ধন গ্রামের। ক্ষোভ প্রকাশ করে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা সালেহা বেগম বলেন, একখান ঘর পাওয়ার আশায় অনেক দিন ধইরা মুই এমপি (সংসদ সদস্য) সাইব থেইক্কা শুরু কইরা বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে ঘুইরাও কোন ফল পাইনায়। সবার কাছে মোর শেষ মিনতি, আমনেরা মোর স্বামীর পোতায় একটা ঘর তুইল্যা দেন। মুই স্বামীর পোতায় মরতে চাই। সূত্রমতে, সালেহা বেগমের স্বামীর ভিটে খালি পরে থাকলেও সেখানে নেই বসতঘর। এ কারণে দক্ষিণ গোবর্দ্ধন গ্রামের আব্দুল গণি মীরের পরিত্যক্ত একটি তুলার মিলে মানসিক ভারসাম্যহীন কন্যা রেখা বেগম (৩০) ও তার দুই সন্তান সাজ্জাত (১১) ও সাব্বিরকে (৮) নিয়ে গত তিন বছর থেকে তিনি বসবাস করছেন। একমাত্র তার (সালেহা) ভিক্ষার আয়ে চলে সংসারের যাবতীয় খরচ ও দুই নাতির লেখাপড়া। সালেহা ভিক্ষা করলেও স্বপ্ন দেখেন তার দুই নাতিকে পড়াশোনা করিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সমাজের মহানুভব ব্যক্তিদের সহযোগিতা না পেলে তার সে স্বপ্ন কোনদিনই পূরণ হওয়ার নয়। সাজ্জাত স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ও সাব্বির প্রথম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, সালেহা বেগম প্রতিদিন সকালে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে বের হন। দুপুরের পরপরই তাকে ফিরে আসতে হয়। কারণ, রান্নার কাজসহ সংসারের যাবতীয় কাজ সাহেলাকেই করতে হয়। মানসিক ভারসাম্যহীন রেখা উৎপাত করায় তাকে মিলের খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। নানা রোগে আক্রান্ত সালেহা এখন বড়ই ক্লান্ত। জীবনের শেষ সময়ে তিনি স্বামীর ভিটায় ফিরতে চান।
×