ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারত-বাংলাদেশ সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ভারত-বাংলাদেশ সম্মেলন

দিল্লীতে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার ওপর অনুষ্ঠিত ২ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের যবনিকাপাত হলো গত ২৪ জানুয়ারি। ভারতের ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল এ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ আয়োজিত এ সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষক ছিল সে দেশের পেট্রোলিয়াম এবং খনিজ মন্ত্রণালয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। উপস্থিত ছিলেন ভারতের ১ জন কেবিনেট মন্ত্রী এবং দু’জন প্রতিমন্ত্রী, বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত ১৫ জন বক্তা, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বেশ কিছু বক্তা ও শ্রোতা এবং কানাডার মানবাধিকার আইনবিদ মি. উইলিয়াম শ্নোন। সভায় উপস্থিত সকলেই একবাক্যে মেনে নিয়েছেন এই সফল সম্মেলনে বাংলাদেশী বক্তারা দিল্লীর মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রথম দিনের সভার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল বাংলাদেশের মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাংলা ভাষায় ভাষণ প্রদান। প্রধান অতিথির ভাষণে জনাব হক, যিনি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভারতের অবদানের কথা ভুলতে পারে না। তিনি ভারতকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু উল্লেখ করে এই দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন এবং বলেন দু’দেশের সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানী বাহিনীর পরাজয়ের মাত্র ৩ মাসের মধ্যে সব ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশ থেকে তুলে নিয়ে ভারত সরকার বিশ্বের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সম্মেলনে বাংলাদেশ এবং ভারতের বক্তাবৃন্দের আলোচনায় যেসব বিষয় মুখ্য বিবেচনায় আসে তা হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণ, সেনাবাহিনী, সরকার এবং বিশেষ করে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নিরলস অবদানের কথা, পাকবাহিনীর বর্বরতার কথা, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর চলমান প্রক্রিয়া বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সরকারের প্রয়োজনীয়তা এবং বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদ রোধের পরিকল্পনার ওপর ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের অভিন্ন সংস্কৃতির কথা। বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল হারুন-অর-রশিদ বলেন, ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বাঙালী সেনাদের মনে প্রশ্ন জেগেছিল এতবড় আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এবং অত্যন্ত উঁচু মানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাকিস্তানী সৈন্যদের কিভাবে স্বল্পসংখ্যক, সামান্য অস্ত্রধারী বাঙালী সৈন্যরা ও মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণহীন, অস্ত্রহীন সদস্যরা মোকাবেলা করবে। তবে তারা জানতেন তাদের পেছনে রয়েছে এক শক্তিশালী বন্ধু রাষ্ট্র এবং ঠিক সেই ক্ষণটিতেই দেব-দূতের মতো আবির্ভূত হন শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণে সহযোগিতা দিতে এগিয়ে আসেন ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী, যাদের ১৬০০ সৈন্য শহীদ এবং ৫০০০ সেনা আহত হয়েছিলেন। পাকিস্তানী বর্বরতার স্মৃতিচারণ করে জেনারেল হারুন বলেন, ২৫ মার্চ রাতে শুধু ঢাকা শহরেই ১০ হাজার নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানী বর্বররা। জুন মাসের মধ্যেই আমরা ভারতীয় বাহিনীর থেকে অস্ত্রশস্ত্র পেতে শুরু করি, যার ফলে মাত্র ৯ মাস সময়ের মধ্যে আমরা পাকবাহিনীকে পরাভূত করে স্বাধীনতার গৌরব অর্জন করতে পেরেছিলাম। কিন্তু ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৭১-এর পরাজিত শত্রুতা দেশের শাসন ক্ষমতা দখল করে এবং এই অপশক্তি দেশে ভারতবিরোধী প্রচার শুরু করে। তবে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবার ফিরিয়ে আনেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নবাদীদের উৎখাত করেন। ভারতও বাংলাদেশের বদান্যতাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ধ্রুব কাটোচ বলেন, যদিও ভারতীয় সৈন্য এবং মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে পাকিস্তানী সৈন্যদের পরাজিত করে, তবুও চূড়ান্ত বিজয় ছিল বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের, পরিশেষে তাদের ইচ্ছারই জয় হয়েছে। ’৭১-এ বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে তিনি রাষ্ট্র পরিচালিত গণহত্যা বলে অবহিত করে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তৎকালীন পাকিস্তানী রাষ্ট্রপতি, সেনানায়ক এবং সেনাসদস্যদের বিচার একান্ত অপরিহার্য। কোন কোন গ্রামে প্রতিটি মানুষকেই হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে এই ভারতীয় জেনারেল বলেন, নিহতদের সংখ্যা নিশ্চয়ই ৩০ লাখের উর্ধে এবং ধর্ষিত নারীর সংখ্যাও নিশ্চিতভাবে সরকার প্রদত্ত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। তিনি উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তানী শাসকরা তৎকালীন পূর্ব বাংলায় রবীন্দ্র চর্চা বন্ধ করে সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশীদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ছিল এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা প্রদান। তার মতে পাকিস্তানী সৈন্যদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত ছিল। হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার প্রবীণ সম্পাদক শ্রী হিরণ¥য় কার্লেকার মুক্তিযুদ্ধ সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, পাকিবাহিনী, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদরদের সহায়তায় বাংলাদেশে যে গণহত্যা ঘটিয়েছে, ইতিহাসে তার নজির নেই, যা কিনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের গণহত্যাকেও হার মানিয়েছে। কেননা নাৎসিরা কয়েক বছরে ৬০ লাখ লোককে হত্যা করেছে, যেখানে পাকিস্তানী বাহিনী এবং তাদের দোসররা ৯ মাসে খুন করেছে ৩০ লাখ লোক। বাংলাদেশে গণহত্যা এবং নারী নির্যাতন ভারতের আপামর জনতাকে এমনভাবে ব্যথিত করেছে যেন তা ভারতেই ঘটেছে। নির্যাতনের পরিধি এমনকি ভারতীয় সৈন্যদেরও হতভম্ব করে তুলেছিল। তিনি এই বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন যে, দেরিতে হলেও কিছু যুদ্ধাপরাধীর সাজা হয়েছে। ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বরতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, তারা ইসলাম ধর্মের নামে যে নারকীয় গণহত্যা ঘটিয়েছে তা ছিল নজিরবিহীন, অথচ এ ধরনের বর্বরতার যারা নায়ক ছিল তারা আইনের হাত থেকে বেঁচে গেছে। তার হিসাবে নির্যাতিত নারীর সংখ্যা ছিল ৫ লক্ষাধিক। ভারত-বাংলাদেশ সম্প্রীতি ও বর্তমান সরকার বর্তমান ১৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব এক নতুন উচ্চতায় পদার্পণ করেছে বলে ভারত এবং বাংলাদেশের সকল বক্তাই উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্রী শ্যামল দত্ত দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আছে বলে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিসমূহ তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালানোর জন্য বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করতে পারছে না। তিনি প্রশ্ন করেন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে তার পরিণতি কি হবে। উভয় দেশের অংশগ্রহণকারীরা ব্যাপক করতালির মাধ্যমে শ্যামল দত্তের উক্তি সমর্থন করেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে দেশের শাসনক্ষমতা পাকিস্তানপন্থীদের হাতে চলে যায় এবং শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত পাকিস্তানীরাই দেশ শাসন করে। তিনি বাংলাদেশে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সর্র্বাত্মক প্রচেষ্টার দাবি জানান। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন মনে করেন দু’দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ঐতিহ্য এক হওয়ায় দু’দেশের সম্পর্কও অনন্য। এ ব্যাপারে দু’দেশের মানুষের মধ্যে যে আবেগ রয়েছে তা কোন সরকারই অগ্রাহ্য করতে পারবে না এবং কোন রাজনৈতিক সীমানাই তা রুদ্ধ করতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের ১ কোটিরও বেশি উদ্বাস্তু ভারতে আশ্রয় নিলে সারা ভারতের মানুষ তাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে। মানুষে মানুষে সম্পর্ক ভারতবিরোধী অনুভূতির অবসান ঘটাতে বাধ্য। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সরওয়ার আলী বলেন, অতীতে আমাদের জনপদ সেন এবং নবাবরা শাসন করলেও বাংলার মানুষ তাদের সংস্কৃতি থেকে কখনও বিচ্যুত হয়নি এবং ধর্মীয় গোঁড়ামিও কখনও হাঁটু গাড়তে পারেনি এ জনপদে। যেখানে লালনের মতো উদার, অসাম্প্রদায়িক মানবতাপন্থী তান্ত্রিকদের বাণীই জনগণ গ্রহণ করেছেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানী সরকার রবীন্দ্র চর্চা বন্ধ করে দিলে জনগণ ফুঁসে ওঠে, শুরু হয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেন, আমি একজন বাঙালী, একজন মুসলমান এবং সর্বোপরি একজন মানব সন্তান। ডাঃ আলী আরও বলেন, ভারতবিরোধী প্রচার মানুষে মানুষে যোগাযোগের মাধ্যমেই উৎখাত করা সম্ভব। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের বহুলাংশে কাবু করা সম্ভব হয়েছে। তিনি মনে করেন সাংস্কৃতিক যোগসূত্রের প্রয়োজনে ভারতেও বাংলাদেশী টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ চালু থাকা উচিত; কিন্তু দুঃখজনক হলেও আমাদের চ্যানেলসমূহ ভারতে দেখানো হচ্ছে না। ড. শ্যামা প্রসাদ মুখার্জী গবেষণা ফাউন্ডেশনের পরিচালক শ্রী অনির্বাণ গাঙ্গুলী বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের ভিত্তি। দু’দেশের মানুষের অবিভক্ত সাংস্কৃতিক একাত্মতার কথা উল্লেখ করে তিনি আকাশবাণী কলকাতা বেতারের প্রয়াত ভাষ্যকার দেব দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাঘা যতীনের দৌহিত্রের অবদানের কথা স্মরণ করেন, স্মরণ করেন মাওলানা আজাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা। অধ্যাপক মুনির খসরু উল্লেখ করেন যে, ১৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত ৭ বছর দু’দেশের সম্পর্কে উৎকর্ষতা আসে। শ্রী হিরণ¥য় কার্লেকার বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ভারতে ধ্বংসাত্মক কার্য চালানোর জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের মাটিতে সংগঠিত, উৎসাহিত এবং পাকিস্তানী সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআই-এর জিলানী খানকে বাংলাদেশে নিমন্ত্রণ করে বাংলাদেশের তৎকালীন সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী ডিজিএফআইকে পাকিস্তানী আদলে সাজাতে বলেন এবং পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াও তার স্বামীর পদাঙ্কানুসরণ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহনকারী সমস্ত স্মৃতি ভেঙ্গে ফেলেন। তবে অত্যন্ত সাহসী এবং বদ্ধপরিকর নেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্মৃতি পুনর্প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, জিয়া মনেপ্রাণে একজন মৌলবাদী ছিলেন, যিনি বলতেন পাকিস্তানই তার শ্রেষ্ঠ বন্ধু। তিনি বলেন, ১৯৭১-এর ডিসেম্বরে অবস্থা এমন ছিল যখন রাশিয়াও বলছিল যুদ্ধ বিলম্বিত না করতে। নয়ত জাতিসংঘে জটিলতা আসতে পারে এবং এজন্য পশ্চিম পাকিস্তান সীমান্তেও যুদ্ধে জয়ী হওয়া অপরিহার্য ছিল। ভারত বিভাগের সময় থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ইতিহাস পর্যালোচনা করে শ্রীমতী অ্যারোমা দত্ত বলেন, ৪৮ সাল থেকেই, বিশেষ করে ভাষা আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠার পর পূর্ব বাংলার জনগণ উপলব্ধি করতে শুরু করে যে, মাত্র ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তান ছিল একটি কৃত্রিম এবং অস্বাভাবিক সৃষ্টি, যা টিকে থাকার নয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশ্ব সমর্থন আদায়ে ভারতের সফলতা ছিল অভূতপূর্ব। কোটির অধিক উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিয়ে ভারত অসাধারণ মানবিক ভূমিকা পালন করেছে। তিনি দু’দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং আদর্শের অভিন্নতার কথা উল্লেখ করে বলেন, জেনারেল অরোরার নেতৃত্বে ভারতীয় বাহিনী আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা দেয়ায় এবং পরবর্তীতে ভারত বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ায় স্বাধীনতাবিরোধী দেশী এবং বিদেশী শক্তিরা আর এগোতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক পরস্পরের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকেই বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে দেশ এগোচ্ছে। তিনি ভূমি এবং সমুদ্রসীমা সমস্যার সমাধান, ভারত কর্তৃক বাংলাদেশে বিদ্যুত বিক্রয় এবং আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তিকে বর্তমান সরকারের সফলতা বলে উল্লেখ করে বলেন, ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতির কারণে এসব সম্ভব হয়েছে। রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশন ফর ডেভেলপিং কাউন্ট্রিসের মহাপরিচালক শ্রী শচীন চতুর্ভেদী বলেন, ভারত সরকারের ‘এ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি এবং বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান কানেক্টিভিটির কারণে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উদ্যম পেয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে বাংলাদেশ লাভজনক অবস্থানে রয়েছে। কেননা বাংলাদেশী পণ্য ১০০% শুল্কমুক্ত। তিনি বলেন, অভিন্ন সংস্কৃতি, কানেক্টিভিটি এবং বাণিজ্য- এই তিনের সমন্বয়ে দু’দেশের সম্পর্ক উত্তরোত্তর এগিয়ে যাচ্ছে। অসমাপ্ত... লেখক : অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আপীল বিভাগ
×