ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ বাংলা ভাষায় মুসলিম অবদান

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ বাংলা ভাষায় মুসলিম অবদান

কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : খালাকাল্ ই্নসানা আল্লামাহুল বাইয়ান্ - তিনি (আল্লাহ) মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তাকে মনের ভাব প্রকাশ করার শিক্ষা দিয়েছেন। (সূরা আর রহমান : আয়াত ৩-৪), আমি (আল্লাহ) প্রত্যেক রাসুলকেই তার নিজ কওমের ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি। (সূরা ইবরাহীম : আয়াত ৪) আর তার (আল্লাহর) নিদের্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশম-লী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। (সূরা রূম : আয়াত ২২)। কুরআন মজিদের এই সব নির্দেশনা মুসলিম মননে প্রত্যেক জাতির বা সম্প্রদায়ের মাতৃভাষার প্রতি সম্মান ও মর্যাদা দানের স্পৃহা গেঁথে দেয় এবং ইসলাম যেখানেই গিয়েছে সেখানকার অধিবাসীদের মাতৃভাষাকে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছে। বাংলাদেশে ইসলামের আগমনের পূর্বে এখানকার অধিবাসীদের কথা বলার বুলি দারুণ অবহেলিত অবস্থায় ছিল। ডক্টর শ্রী দীনেশ চন্দ্র সেন বলেন, মুসলমান আগমনের পূর্বে বঙ্গভাষা কোন কৃষক রমণীর ন্যায় দীনহীন বেশে পল্লী কুটিরে বাস করিতে ছিল। বাঙ্গালা ভাষা মুসলমান প্রভাবের পূর্বে অতীব অনাদর ও উপেক্ষায় বঙ্গীয় চাষার গানে কথঞ্চিত আত্মপ্রকাশ করিতেছিল। প-িতেরা সংস্কৃত শ্লোকের আবৃত্তি করিতে ছিলেন এবং ‘তৈলাধার পাত্র’ কিংবা ‘পাত্রাধার তৈল’ এই লইয়া ঘোর বিচারের প্রবৃত্ত ছিলেন। বঙ্গভাষার স্থান কোথায়? ইতরের ভাষা বলিয়া বঙ্গ ভাষাকে প-িতম-লী দুর দুর করিয়া তাড়াইয়া দিতেন, হাঁড়ি ডোমের স্পর্শ হইতে ব্রাহ্মণেরা দূরে থাকতেন। বঙ্গভাষা সুধী সমাজের কাছে যেমন অপাঙ্ক্তেয় ছিল তেমনি ঘৃণা, অনাদর ও উপেক্ষার পাত্র ছিল। কিন্তু হীরা কয়লার খনির মধ্যে থাকিয়া যেমন জহুরীর অপেক্ষা করিয়া থাকে বঙ্গভাষা তেমনি কোন শুভদিন, শুভক্ষণের জন্য প্রতীক্ষা করিতেছিল। মুসলমান বিজয় বাঙ্গালা ভাষার সেই শুভদিন, শুভক্ষণের সুযোগ আনয়ন করিল। প্রাচীন বাংলার উৎস-স্বরূপ খুঁজতে গিয়ে কেউ কেউ চর্যাপদকে চিহ্নিত করেছেন। এই চর্যাপদ বৌদ্ধ সহজিয়াদের মধ্যে বন্দীদশায় ছিল- তাকে বাংলাভাষা বলাও দুরূহ। বাংলা ভাষায় যখন থেকে আরবী, ফারসি, তুর্কি শব্দ ভাষার তাগিদেই ব্যবহৃত হতে লাগল তখন থেকে এ ভাষা প্রাঞ্জল ও প্রাণবন্ত ভাষা হিসেবে ক্রমান্বয়ে বিকশিত হতে লাগল। মুসলিম শাসনে এসে তা প্রাণচাঞ্চল্যে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠল। ডক্টর আহমদ শরীফ মধ্যযুগের সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন : তুর্কি আমলে রাজশক্তির পোষকতা পেয়ে বাঙলা লেখ্য শালীন সাহিত্যের বাহন হলো। উল্লেখ্য, ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধির পর থেকে আরবের বাইরের বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয় যার ব্যাপকতা সঞ্চারিত হয় ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে। বিদায় হজের পরবর্তীকালে। ওই সময় চীন-সুমাত্রাগামী আরব বাণিজ্য নৌজাহাজে করে প্রচুর পা-িত্যের অধিকারী কোন কোন সাহাবি বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরে সফর বিরতি দিয়ে এখানে ইসলাম প্রচার করেন। তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেননি। তাদের কারও কারও মাজার শরীফ এখনও চীনের ক্যান্টন নগরীর ম্যাসেঞ্জার মসজিদ প্রাঙ্গণে রয়েছে। অ্যানসেস্টরস গ্রেবইয়ার্ড নামে তা পরিচিত। বাংলাদেশে ব্যাপকহারে ইসলাম প্রচার শুরু হয় দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুর খিলাফতকালের মধ্যভাগ নাগাদ অর্থাৎ ৬৪০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। তারপর থেকে এখানে দলে দলে আরব, ইরান, ইরাক, তুরস্ক, মিসর, ইয়েমেন, খোরাসান প্রভৃতি অঞ্চল থেকে ইসলাম প্রচারকের আগমন ঘটে। তারা বাংলাদেশের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে গিয়ে ইসলাম প্রচার করেন। এসব প্রচারক বাংলাদেশের মানুষের ভাষা শিখে সেই ভাষাতেই ইসলামের শিক্ষা সৌকর্য সবার সামনে তুলে ধরেন। তখন থেকেই আরবী, ফারসি, তুর্কি শব্দ বাংলা ভাষায় আত্মভূত হয়ে এ দেশের মানুষের মুখের ভাষার অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ভাষা প্রকৃত অবয়ব লাভ করে এরই ফলে। বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন হয় ১২০১ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ারুদ্দীন মুহম্মদ ইবনে বখতিয়ার খিলজির বিজয়ের মধ্য দিয়ে। মুসলিম শাসন কায়েম হওয়ার পূর্বে এখানে যেসব রাজার শাসন ছিল তারা বাংলাভাষাকে নিষিদ্ধ ভাষা করে দিয়েছিল। বলা হয়েছিল অষ্টাদশ পুরাণানি রামস্য চরিতানিচ/ভাষায়াং মানবঃ শ্রুত্বা রৌবং নরকং ব্রজেৎ অর্থাৎ অষ্টাদশ পুরাণ, রামচরিত ইত্যাদি মানব ভাষায় (বাংলা) চর্চা করলে রৌরব নরকে যেতে হবে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতেই (১২০১ খ্রিঃ) বাংলাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চার সুদূরপ্রসারী দিগন্ত উন্মোচিত হয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার আস্বাদনেও নিজেদের অভিসিক্ত করতে সমর্থন হন। বাংলার মুসলিম শাসকগণ বাংলার মানুষের খাদিম বা সেবক হিসেবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। এসব শাসক সুলতান অভিধায় অভিহিত ছিলেন, তারা শাহে বাঙ্গালা, সুলতানে বাঙ্গালা খিতাবে ভূষিত ছিলেন এবং এ দেশের মানুষের জাতীয় পরিচয় ছিল বাঙ্গালিয়ান। এটাই সত্যি যে, স্বাধীন বাঙ্গালা প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় সুলতানী আমলেই। বাংলাভাষা ও সাহিত্য আজকে যে সুবিস্তৃত দিগন্তব্যাপী ঔজ্জ্বল্য, এই যে জগতজোড়া খ্যাতি ও সমৃদ্ধি সৌরভে সমুজ্জ্বল তার স্থপতি নির্ণয়ে আমাদের যেতেই হয় বাংলার সুলতানী আমলে। আর সেই সুলতানী আমলই হচ্ছে বাংলার সোনালি যুগ। সে যুগ যেমন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সোনালি ছিল, তেমনি সামাজিক উন্নতির দিক দিয়েও সোনালি যুগ ছিল, শান্তি ও সমৃদ্ধির দিক দিয়েও সোনালি যুগ ছিল, শিক্ষা-দীক্ষার দিক দিয়ে যেমন সোনালি যুগ ছিল তেমনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যেরও সোনালি যুগ ছিল। বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চায় সুলতানগণ বাংলার সব ধর্মের মানুষকে সমানভাবে উদ্বুদ্ধ ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। মুসলিম লেখকগণ বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বিষয়ে পুঁথি সাহিত্যের বিরাট আঙিনা নির্মাণ করেন। সুলতান ইউসুফ শাহেব দরবারের কবি জৈনুদ্দীন এবং শাহ বিরিদ খান পৃথক পৃথক রসূল বিজয় কাজ রচনা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে সৈয়দ সুলতান বাংলা ভাষার মহাকাব্য রচনার সূত্রপাত ঘটান। ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হকের মতে, সৈয়দ সুলতানের নবী বংশ নামক পুঁথিখানি হচ্ছে বাংলা মহাকাব্যের মহান আদর্শ। সুলতানী আমলের প্রায় সব সুলতানই বাংলাভাষায় সাহিত্যচর্চার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বিশেষ করে সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। কবীন্দ্র পরমেশ্বর সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন : কলিযুগ অবতার গুণের আধার/পৃথিবী ভরিয়া যাঁর যশের প্রসার॥ উল্লেখ্য, ১৩৫২ খ্রিস্টাব্দে সুলতান হাজী শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ যে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠা করেন তা স্বাধীন ইলিয়াস শাহী সালতানাত নামে দীর্ঘ দু’শ’ বছরের অধিককাল স্থায়ী ছিল। এই সময়কালে বাংলা সাহিত্যের সর্বাধিক বিস্তার ঘটে। বাংলা সাহিত্যের এই বিস্তারের নব নব অধ্যায় পরবর্তীকালেও নির্মিত হয়। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ বলতে যে সময়কালকে বোঝানো হয় মূলত সেটাই হচ্ছে বাংলার সুলতানগণের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা বাংলা সাহিত্য নির্মাণের যুগ- আর সেটাই হচ্ছে বাংলাভাষার আলোকিত যুগ। সপ্তদশ শতাব্দীর কবি আবদুল হাকিম, সৈয়দ আলাওলসহ বহু কবি অবদান রেখেছেন। কবি আবদুল হাকিম বাংলা ভাষার কদর সমুন্নত করতে গিয়ে লিখেছেন : যেসব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি/দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে নযুয়ায়/নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশে ন যায়। সেকালের অন্যান্য কবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন শাহ মুহম্মদ সগীর, সৈয়দ হামজা, শেখ ফয়জুল্লাহ, শেখ চান্দ, দোভাষী পুঁথির উদ্ভাবক শাহ গরীবুল্লাহ প্রমুখ। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন পলাশীর বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যখন বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্ত যায় তখন শাহ গরীবুল্লাহর বয়স ২৪ বছর। তার রচিত ছহি জৈগুন নামক পুঁথিতে তিনি বলেন, আল্লাহকে একিন জান হইয়া মমিন/খুশিতে কবুল কর মোহাম্মদী দীন। পলাশীর যুদ্ধের পর এ দেশে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুসলিমদের দমন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘ সাড়ে ৫০০ বছর ধরে গড়ে ওঠা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাঞ্জলতার টুঁটি চেপে ধরে তাকে কটমটে ও দুর্বোধ্য সংস্কৃত শব্দ যোগ করে কঠিন ভাষায় পরিণত করে। এ সম্পর্কে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, যদি পলাশী ক্ষেত্রে বাংলার মুসলমানের ভাগ্য বিপর্যয় না ঘটিত, তবে হয়ত এই পুঁথির ভাষাই বাংলার হিন্দু-মুসলমানের পুস্তকের ভাষা হইত। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে দুর্বার স্বাধীনতাযুদ্ধে লিপ্ত থাকায় এই নতুন দুর্বোধ্য সংস্কৃত বহুল বাংলায় মুসলিমগণ বাংলা সাহিত্য চর্চায় অনেকটা অমনোযোগী থাকে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহি-জনতার মহাবিপ্লবের পরে নতুন করে তারা আবার কলম ধরে। ওই শতাব্দীর আশির দশকে ফুরফুরা শরীফের পীর সাহেব কেবলা মুজাদ্দিদে যামান মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী (র) বাংলায় সাহিত্য চর্চায় জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেন এবং পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। তখন থেকেই নবউদ্যমে সাহিত্য চর্চায় লিপ্ত হন মুসলিম কবি-সাহিত্যিকগণ- যাদের তালিকা সুদীর্ঘ। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় বাংলা ভাষায় সর্বপৃথম প্রামাণ্য বিস্তারিত ও মৌলিক তাসাউফ গ্রন্থ এরশাদে খালেকিয়া বা খোদাপ্রাপ্তি তত্ত্ব। এই গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন যশোরের খড়কীর পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ আবদুল করিম রহমাতুল্লাহি আলায়হি। ঊনবিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে এবং বিংশ শতাব্দীর সূচনাকাল থেকেই মুসলিম কবি-সাহিত্যিক লেখকদের মধ্যে বিপুল উদ্যমের সৃষ্টি হয়। কায়কোবাদ, মীর মশাররফ হোসেন, মুন্সী রিয়াজউদ্দীন আহমদ, রিয়াজউদ্দীন মাশহাদী, মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ, ইসমাঈল হোসেন সিরাজী, মাওলানা আকরম খাঁ, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, শেখ আবদুর রহীম, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ইয়াকুব আলী চৌধুরী, কাজী আবদুল ওদুদ, ডাক্তার লুৎফর রহমান, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, কাজী ইমদাদুল হক, নজিবর রহমান, কবি গোলাম মোস্তফা, কাজী নজরুল ইসলাম, কবি জসীমউদ্্দীন, ফররুখ আহমদসহ অনেকে বাংলা সাহিত্যের নব নব অধ্যায় সৃষ্টি করেন। কাজী নজরুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে আবির্ভূত হয়ে বাংলা কাব্যে রীতিমতো বৈপ্লবিক অবদান রাখেন। এর ফলে যে গতিবেগ সৃষ্টি হয় মুসলিম মননে তার ধারাবাহিকতা একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নতুন নতুন মাত্রা এবং উন্নততর আঙ্গিক সৃষ্টি করে এগিয়ে চলেছে। যে বাংলাভাষা মুসলিম আগমনের পূর্বে নিদারুণ অবহেলিত অবস্থায় ছিল, যে বাংলা ভাষা চর্চা করলে রৌরব নামক নরকে যাওয়ার ভয় দেখানো হতো, সেই বাংলাভাষা মুসলিম সুলতানগণের একান্ত পৃষ্ঠপোষতায় শাহী সম্মান লাভ করেছিল, তাকে আবার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অধিষ্ঠিত করার জন্য ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, রফিক, সালাম প্রমুখ তরতাজা প্রাণ নিজেদের রক্ত ঝরিয়ে জান কুরবান করে দিয়ে বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে মাতৃভাষার মর্যাদার নব অধ্যায় রচিত করলেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলা কায়েম হলো। আর সেই রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনে সঞ্জাত চেতনার রাজপথ ধরে ১৯৭১-এর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করল। বাংলা ভাষার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারিতে যে রক্ত ঝরেছিল তাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এবং পৃথিবীর প্রতিটি দেশ ও জাতির মধ্যে মাতৃভাষা প্রীতি সঞ্চারিত করার জন্য অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে। এ সবই বাংলাভাষায় মুসলিম অবদানের ফসল। উল্লেখ্য, পৃথিবীতে বাংলাভাষী জনসংখ্যা প্রায় চব্বিশ কোটি যার মধ্যে মুসলিম হচ্ছে সতেরো কোটি। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মুসলিম অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। লেখক : পীর সাহেব, দ্বারিয়াপুর শরীফ উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা) সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
×