ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একদিকে তামিম অন্যদিকে কোহলি

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

একদিকে তামিম অন্যদিকে কোহলি

স্পোর্টস রিপোর্টার হায়দরাবাদ থেকে ॥ এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। আরেকদিকে ভারতেরই সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। দুইজনের মধ্যে অভিজ্ঞতায় অবশ্য তামিমই এগিয়ে। তবে প্রতিপক্ষ দলের জন্য যদি কেউ বিশেষ আতঙ্ক হয়ে থাকেন, সেই ক্রিকেটার হচ্ছেন কোহলি। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে যদি কেউ ইনিংসের শুরুতেই ভরসাবান হয়ে থাকেন, তিনি তামিম। আর তাই হায়দরাবাদ টেস্টটিতে একদিকে যেমন ‘আতঙ্কের দুসরা নাম’ কোহলি থাকছেন, ঠিক তেমনি আরেকদিকে ‘ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের ভরসা’ তামিম থাকছেন। দুইজনই দুইদেশের স্টাইলিশ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। দুইজনই ব্যাটসম্যান। দুইজনই মারমুখি ব্যাটসম্যান। আবার দুইজনই প্রয়োজনের মুহূর্তে নিজেকে ধুন্ধুমার ব্যাটিং থেকে গুটিয়ে নিয়ে উইকেট আঁকড়ে থাকতেও প্রস্তুত। দুইজনই আবার বড় ইনিংস খেলাতেও পটু। এ ক্ষেত্রে কোহলি অবশ্য তামিমকে টেক্কাই দিচ্ছেন। কোহলির চেয়ে অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকলেও ব্যক্তিগত স্কোরবোর্ডে রান জমা করায় কিন্তু কোহলি অনেক এগিয়ে। যেখানে তামিমকে অনেক পেছনেই ফেলে দিয়েছেন কোহলি। আর তাইতো এ মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটে শুধু ‘কোহলি, কোহলি’ রবই চলছে। বাংলাদেশ ওপেনার তামিমের ২০০৮ সালে টেস্ট অভিষেক হয়েছে। কোহলির প্রায় সাড়ে তিন বছর পর ২০১১ সালে টেস্ট অভিষেক হয়। নয় বছরে তামিম ৪৬ টেস্ট খেলেছেন। ২০১১ সাল থেকে ৫ বছরেই কোহলি টেস্ট খেলে ফেলেছেন ৫৩টি। এই সময়ের মধ্যে তামিম যেখানে রান করেছেন ৩৯.৫৭ গড়ে ৩ হাজার ৪৪৩ রান। সেখানে কোহলি করেছেন ৪ হাজার ২০৯ রান। তামিমের চেয়ে ৭৬৬ রান বেশি করেছেন। তামিম ৮টি শতক করেছেন। কোহলি করেছেন ১৫টি শতক। এমনই অবস্থা হয়েছে কোহলি এখন ব্যাট হাতে নামলেই যেন শতক করেন। প্রতিটি সিরিজেই তার একটি করে বড় ইনিংস আছেই। কোহলি এখন বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানও। তামিম যেখানে শতকগুলোর মাঝে শুধু একটি শতককে দ্বিশতকে ও একটি দেড় শতকে নিতে পেরেছেন। সেখানে কোহলি ৭টি দ্বিশতক করেছেন। আর ৭ রানের জন্য একটি দ্বিশতক হাতছাড়া করেছেন। আরেকটি রয়েছে দেড়শতক। তাতে বোঝা যাচ্ছে, তামিম ভাল শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেন না। আর কোহলি সুযোগ পেলেই বড় ইনিংস খেলে বসেন। অবশ্য এখানে একটি বিষয়ও আছে। কোহলি যে পরিমাণ টেস্ট খেলেন, তামিম সেই পরিমাণ টেস্ট খেলার সুযোগই পান না। বাংলাদেশ যে বেশি টেস্ট খেলে না। গত বছরই যেমন তামিম দুটি মাত্র টেস্ট খেলেছেন। একটিতেই আবার শতক করে দেখিয়েছেন। সেখানে কোহলি ২০১৬ সালে ১২টি টেস্ট খেলেছেন। ৪টি শতক করেছেন। এরমধ্যে তিনটি শতকই হচ্ছে দ্বিশতক। একটি আবার দেড় শ’ রানের ইনিংস। এবার বছরের প্রথম টেস্ট খেলতে নামবেন কোহলি। সেটি বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে বছর শুরু করছেন কোহলি। তামিম এরমধ্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ বছর দুটি টেস্ট খেলে ফেলেছেন। খুব ভাল কিছু করে দেখাতে পারেননি। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে যে অর্ধশতক করেছিলেন, সেটিই বড় ইনিংস। এরপরও কোহলি যদি এখন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান হন। তামিমও কম নন। তিনি নিজ দেশের সেরা ওপেনার। ভারতের বিপক্ষে তামিম আবার সবসময়ই দুর্দান্ত। ভারতের বিপক্ষে তিনটি টেস্ট খেলেছেন। ৫৩.৮০ গড়ে ২৬৯ রান করেছেন। একটি শতকও আছে আবার। কোহলি সেখানে বাংলাদেশের বিপক্ষে একটিমাত্র টেস্ট খেলেছেন। রান করেছেন ১৪। দুই দলের হিসেবে তামিমই তাই এগিয়ে রয়েছেন। বুধবার অনুশীলন শুরুর আগে ড্রেসিংরুমের দিকে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ওপেনার তামিম। তাকে শুরুতেই জিজ্ঞেস করা হলো, উইকেট কেমন? বললেন, ‘ভালই দেখলাম।’ পরে প্রশ্ন করা হলো, সেঞ্চুরি মিলবে হায়দরাবাদ টেস্টে? জানালেন, ‘ইনশাআল্লাহ, চেষ্টা করব।’ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই কথাটা বললেন তামিম। আর যখন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের কাছে কোহলিকে নিয়ে প্রশ্ন ছোড়া হলো, মুশফিক জানালেন, ‘নিঃসন্দেহে কোহলি এ মুহূর্তে সেরা ব্যাটসম্যান। দ্বিশতক, এরও বেশি রান করার ক্ষমতা আছে। তবে একটি খারাপ বলই যথেষ্ট। খুব দ্রুত আউটও হতে পারে।’ তাতেই বোঝা যাচ্ছে, কোহলি এত সহজেই বড় কিছু করে ফেলবেন, তা সম্ভব হবে না। অনেকেই আবার বলছেন, মুশফিক যে এমন কথা বললেন, তাতে তেঁতে যেতে পারেন কোহলি। কারণ কোহলিকে তাঁতিয়ে দিলেই নাকি তিনি ভাল খেলেন। তাইতো অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার মাইক হাসি বলেছিলেন, ‘কোহলি এখন যে কোন দলের জন্যই এক নম্বর শত্রু। যত দ্রুত সম্ভব ওকে ফেরাতে হবে। আমি হলে অন্তত কোহলিকে খেপিয়ে দিতাম না। ও প্রচ- কঠিন এক প্রতিদ্বন্দ্বী। লড়াইটা করতে ও ভালবাসে। মাঠের যুদ্ধটা পছন্দ করে।’ তাহলে কী কোহলিকে রাগিয়ে দিলেন মুশফিক? তাতে কী। কোহলি যদি একদিকে থাকেন, আরেকদিকে বাংলাদেশ ওপেনার তামিম আছেন না।
×