ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-বাংলাদেশ ঐতিহাসিক টেস্ট শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ভারত-বাংলাদেশ ঐতিহাসিক টেস্ট শুরু আজ

মিথুন আশরাফ, হায়দরাবাদ থেকে ॥ হায়দরাবাদ টেস্টে খেলবেন? না খেলার সম্ভাবনায় থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের প্রশ্নটি করতেই জবাব আসে, ‘খেলতে পারলে তো দারুণ হবে। ঐতিহাসিক টেস্ট। এমন টেস্টে সবাই খেলতে চায়। রোমাঞ্চিত আমরা। খেলতে পারলে তো ভাগ্যবান মনে হবে।’ সত্যিই তাই। ২০০০ সালে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট খেলে ভারতের বিপক্ষে। সেই টেস্টে যারা খেলেছেন তারা ছিলেন ভাগ্যবান। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের ১৬ বছর অতিক্রম হওয়ার পর ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। আর তাই এ টেস্টকে ঐতিহাসিক আখ্যাও দেয়া হচ্ছে। সেই টেস্ট আজ হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে। এই ঐতিহাসিক টেস্টে যারা খেলবেন তারাও তো ভাগ্যবানই। তাই যাদের খেলার সম্ভাবনা নেই, তারাও রোমাঞ্চিত। আর যারা নিশ্চিত খেলবেন জানেন, তারাও রোমাঞ্চিত। অন্তত বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের কথাতেই তা পরিষ্কার। তিনি বলেছেন, ‘টেস্টকে ঘিরে সবাই রোমাঞ্চিত।’ বাংলাদেশ যখন প্রথম টেস্ট খেলে। টেস্টের কুলীন আঙ্গিনায় পা রাখে, সেটির সঙ্গে জড়িত ছিল ভারত দল। কারণ তাদের বিপক্ষেই নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। অথচ সেই টেস্টের পর ভারতের মাটিতে ছাড়া সব টেস্ট খেলুড়ে প্রতিপক্ষের মাটিতেই খেলেছে বাংলাদেশ। বাকি ছিল শুধু ভারতের মাটিতে খেলা। অবশেষে ভারতের মাটিতে খেলার স্বপ্নও বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের পূরণ হচ্ছে। কিন্তু এই টেস্টে কী হবে? বাংলাদেশ কী পারবে কিছু করে দেখাতে? সেই প্রশ্নই এখন চতুর্দিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। মুশফিক যেন অভয় দিচ্ছেন। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এমন খেলতে চাই, যেন মনে রাখার মতো কিছু হয়। যেন বারবার ভারত আমন্ত্রণ জানায়।’ তার মানে ক্রিকেটারদের ভেতরেও জিদ আছে কিছু করে দেখানোর। ভারত যে এ দীর্ঘ সময় আমন্ত্রণ জানায়নি, তার যেন একটা জবাব দেয়ার অপেক্ষাতেই আছেন ক্রিকেটাররা। সুযোগ পেলেই সেই জবাবটি দিয়ে দেবেন। কিন্তু কিভাবে? ভারত এখন টেস্ট ক্রিকেটে এক নম্বর দল। দলের প্রত্যেক ক্রিকেটারই নৈপুণ্য দেখান। যে কোন দলের বিপক্ষে ভাল খেলার ক্ষমতা রাখেন। আবার নিজ মাটিতে খেলা। তাতে তো আরও বিধ্বংসী তারা। অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাও কম নন। দলে ভাল পেসার আছে। আছে বিশ্বসেরা স্পিনার। আর ব্যাটসম্যানে তো ভরা। এখন শুধু কাজে লাগানোর অপেক্ষামাত্র। সেই অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে আজ। আজকের টেস্টের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি অবশ্য বাংলাদেশকে সমীহ করেই কথা বলেছেন। তারা যে একনম্বর দল। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে খেলবে। তাতে বাংলাদেশের খেই হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা বেশি। এসব নিয়ে নেতিবাচক প্রশ্ন যতই ছোড়া হয়েছে, কোহলি ততবারই শ্রদ্ধাভরে কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, ‘কোন দলই অপরাজেয় নয়। ক্রিকেট খেলা। তাই দুই দলের জন্যই সুযোগ থাকে। তবে আমরা নিজেদের খেলা ঠিক রাখতে চাই।’ কোহলি ভাল করেই জানেন। বাংলাদেশ হঠাৎ করেই বিধ্বংসী রূপে ধরা দিতে পারে। খেলা হচ্ছে হায়দরাবাদে। যেখানের উইকেট ফ্ল্যাট। এখানে ব্যাটিংটা দারুণ হয়। আবার স্পিনটা তো বিষ। এ দুই বিভাগেই ভারত যেমন শক্তিশালী, বাংলাদেশও তেমনই। ব্যাটিংয়ে ভারতের যেমন লোকেশ রাহুল, চেতেশ্বর পুজারা, করুণ নায়ার এবং বিশ্বের এ মুহূর্তে সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি আছেন। তেমনি বাংলাদেশ শিবিরে ব্যাটিংয়ে তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আছেন। স্পিন আক্রমণে ভারতের বিশ্বের সেরা রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা আছেন। আর বাংলাদেশেরও এ বিভাগে পাল্লাটা ভারিই। আছেন বিশ্ব সেরা সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই বিভাগেই পাল্লা দেয়ার ক্ষমতা রাখে বাংলাদেশ। শুধু পিছিয়ে থাকার দিক দিয়ে পেস আক্রমণেই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ বিভাগেই যত লিলাখেলা হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের অনভিজ্ঞ পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি ও তাসকিন আহমেদের বিপরীতে ভারতের অভিজ্ঞ ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব রয়েছেন। এ বিভাগটি নিয়ে তাই যত ভয়। প্রস্তুতি ম্যাচেও বাংলাদেশকে ডুবিয়েছে ভারত ‘এ’ দলের পেসাররাই। তবে ব্যাটিং ও স্পিনই যেহেতু হায়দরাবাদের উইকেটের আসল চরিত্র, তাই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনাই বেশি দেখা হচ্ছে। তাতে করে টস জেতা এবং উইকেটই দুই দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে দল টস জিতবে স্বাভাবিকভাবেই তারা ব্যাাটিংটা আগে নেবে। প্রথম ইনিংসে বিশাল স্কোর গড়ে এরপর প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করবে। ব্যাটিং আগে নেয়া মানে দুইদিন পর যে উইকেটে স্পিন ধরবে, সেই সুযোগ নেয়া যাবে। এখন বাংলাদেশ সুযোগগুলো নিতে পারলেই হয়। রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভারত দল বুধবার সকালে অনুশীলন শুরু করে। চনমনেই মনে হয়েছে দলের ক্রিকেটারদের। ব্যাটিং-বোলিং পুরোদমে সেরে নিয়েছেন ক্রিকেটাররা। তবে সবার আগে উইকেট দেখাটাই যেন আসল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরাট কোহলি এসে সবার আগে উইকেট দেখলেন। এরপর দুপুরে বাংলাদেশ দল অনুশীলন শুরু করার আগেই একে একে এসে উইকেট দেখতে লাগলেন। সবার আগে মুশফিক উইকেট দেখলেন। উইকেট দেখে কী মনে হলো? মুশফিক জানালেন একই কথা। ফ্ল্যাট উইকেট। হায়দরাবাদে যেমনটি হয়। রান হয়। পরে স্পিনাররা ম্যাচের ফল নির্ধারণ করেন। তবে উইকেটে বুধবার পর্যন্ত খানিক ঘাসও ছিল। সেটি যে আজ থাকবে না তা সবারই জানা। তার মানে ব্যাটিং আর স্পিন বিভাগ মজবুত করেই নামতে হবে। দল গঠন নিয়ে খুব বেশি ঝামেলা হওয়ার কথা না। দল গঠন করবেন অধিনায়ক, সহঅধিনায়ক, কোচরা মিলে। তবে ক্রিকেটারদের সেই দিকে নজর নেই। তারা রোমাঞ্চেই ডুবে আছেন। আর অপেক্ষা করছেন যেন ঐতিহাসিক টেস্টে খেলতে পারেন।
×