ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আবাসিক খাতে বিপর্যয়

চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সঙ্কট মারাত্মক পর্যায়ে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সঙ্কট মারাত্মক পর্যায়ে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহে মারাত্মক অপ্রতুলতায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জাতীয় গ্রিড লাইনে গ্যাস সরবরাহে চট্টগ্রাম অঞ্চল ডাউন স্ট্রিমে হওয়ায় চাহিদার গ্যাস মিলছে না। বিশেষ করে আবাসিক পর্যায়ে গৃহস্থালী কাজে এ সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরজুড়ে গ্যাস সঙ্কটে হা-পিত্যেশ চলছে। সকাল থেকে রাত অবধি এ সঙ্কট চলছে। গভীর রাতে গ্যাস সরবরাহ থাকলেও সকাল থেকে গ্যাস লাইনে সরবরাহ থাকে না। যা সন্ধ্যার পরও চলে। এর ফলে নগরজীবনে দুর্ভোগ এখন চরমে। মূলত বাখরাবাদ পয়েন্ট থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে জাতীয় গ্যাস গ্রিডের মাধ্যমে। বর্তমানে সঙ্কট তীব্র রূপ নিয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। কুমিল্লার পর থেকে গ্যাসের সরবরাহ পরিমাণের তুলনায় অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। ফলে আবাসিক খাতের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্প কারখানাও চাহিদার গ্যাস পাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে নিয়মিত চিঠি চালাচালি হচ্ছে। কিন্তু বিহিত কোন ব্যবস্থা নেই। আবাসিক খাতে নতুন সংযোগ বন্ধ রয়েছে বহু আগে থেকেই। কিন্তু সেসব স্থানে সংযোগ রয়েছে এখন সেসব পয়েন্টেও গ্যাসের জন্য চলছে আজাহারি। চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহে নিয়োজিত সংস্থা কেজিডিসিএল (কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড) সূত্রে জানানো হয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকার কারণে এ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা রয়েছে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। অথচ, এখন পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট। জাতীয় গ্যাস গ্রিড থেকে সরবরাহ হ্রাস পাওয়ায় এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। কেজিডিসিএল সূত্রে জানানো হয়, বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে ২২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে কাফকো (কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি) ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ নেয়। দশ মাসেরও বেশি বন্ধ থাকার পর সিইউএফএল (চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিঃ) পুনরায় চালু হওয়ায় এ সংস্থাকে ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিতে হচ্ছে। অবশিষ্ট ১৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছে আবাসিক খাত। এ কারণেই চট্টগ্রামের সর্বত্র গ্যাসের এ তীব্র সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন ভোর হওয়ার পর গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত গ্যাস উধাও হয়ে যায়। চুলা জ্বলে না। ফলে রান্নাবান্নার কাজ সারতে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ প্রতি মাসে এক বা দুই বার্নার সংবলিত চুলাপ্রতি গড়ে সাড়ে ৬শ টাকা হারে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতে হয়। গ্যাস নেই। বিল ঠিকই দিয়ে যেতে হচ্ছে। কেজিডিসিএল সূত্রে আরও জানানো হয়, ইতোপূর্বে প্রতিদিন গড়ে ২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যেত। এখন তা ১৫৪ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে আসায় কর্তৃপক্ষ বেকায়দায় পড়েছে। এদিকে সংস্থার কাছে আরও প্রায় ৫শ’ ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহের জন্য আবেদন রয়েছে। অথচ বর্তমানে যে সংযোগ রয়েছে সেখানেই বেহাল পরিস্থিতি। যে কারণে নতুন সংযোগ নেই বললেই চলে। এছাড়া সরকার পক্ষেও নতুন করে আবাসিক পর্যায়ে নতুন সংযোগ না দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এ অবস্থায় অনেকেই এখন বোতলজাত প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। গেল ডিসেম্বর মাসেও চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ছিল ২০৮ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু অবস্থার আরও অবনতি ঘটায় এখন তা ১৫৪ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের আওতায় ছিল চট্টগ্রাম অঞ্চল। পরে বাখরাবাদ গ্যাস থেকে আলাদা করে গঠিত হয় কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। আশা করা হয়েছিল জাতীয় গ্যাস গ্রিড থেকে চাহিদার প্রয়োজনীয় গ্যাস নিয়ে চট্টগ্রামের সঙ্কট মেটানো হবে। কিন্তু সবই বৃথা। এর আগে সাগর ভিত্তিক দেশের একমাত্র গ্যাস উৎপাদন ক্ষেত্র সাঙ্গু থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সাঙ্গুর গ্যাস উৎপাদনে বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার পর চট্টগ্রাম গ্যাস সঙ্কট শুরু হয়। পরবর্তীতে যা আরও ব্যাপকতর রূপ নেয়। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে কাফকো, সিইউএফএল, রাউজান তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র, শিকলবাহা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলোতে গ্যাসের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বাণিজ্যিক চাহিদার গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে আবাসিক গ্যাস সরবরাহে সঙ্কট এর মূল কারণ। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাতে আবাসন ব্যবস্থা কয়েক গুণ বৃদ্ধি হলেও গ্যাস সরবরাহে কোন বৃদ্ধি ঘটেনি। বাখরাবাদ থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চল ডাউন স্ট্রিমে হওয়ায় কুমিল্লা থেকেই সরবরাহে সঙ্কটের সূত্রপাত ঘটে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা ও ফেনী এলাকায় শতাধিক গ্যাস ফিলিং সেন্টার রয়েছে। এসব সেন্টারগুলোতে গ্যাস সরবরাহের অনুমোদন দেয়া হয়েছে বিধি বিধান না মেনেই। ফলে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এসব ফিলিং সেন্টার। নিয়মানুযায়ী রাস্তার ওপাশ এবং ওপাশে কতফুট অন্তর একটি ফিলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা হবে তা বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ মানেনি। অনৈতিকপন্থায় আগ্রহীদের ইচ্ছে অনুসারে যার যেখানে ইচ্ছে সেখানে এ জাতীয় স্টেশন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ফলে জাতীয় গ্যাস গ্রিড লাইন থেকে এসব ফিলিং সেন্টার গ্যাস টেনে নিচ্ছে। এর মধ্যে আবার অবৈধ গ্যাস লাইনেরও অভাব নেই। এ জাতীয় ঘটনা ইতোপূর্বে উদঘাটিতও হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চল প্রয়োজনীয় গ্যাস প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বহু আগে থেকেই। ওই অবস্থায় সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রের অপমৃত্যুর পর তা আরও মারাত্মক রূপ নেয়। বর্তমানে সাঙ্গু গ্যাসফিল্ড বাপেক্সকে। সাঙ্গুর গ্যাস সরবরাহ হতো চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের সিটিগেট এলাকার স্টেশন হয়ে। এ দুটি স্থাপনা এখন পরিত্যক্ত।
×